জলাতঙ্ক আতঙ্ক (পর্ব-১)
বছরে টিকা নেন ৪ লাখ মানুষ, রোগাক্রান্ত হলেই নিশ্চিত মৃত্যু
রাজধানীর মহাখালী জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। মায়ের সঙ্গে মিরপুর-১০ থেকে এসেছে ১৩ বছর বয়সী রিফাতুল ইসলাম রিফাত। হাঁটছে খুঁড়িয়ে। পায়ে কামড় দিয়েছে কুকুর। জলাতঙ্ক প্রতিরোধে মাকে নিয়ে এসেছে টিকা দিতে।
রিফাত জাগো নিউজকে জানায়, মাদরাসা থেকে পড়া শেষ করে হেঁটে বাসায় ফিরছিল সে। এমন সময় কয়েকটি কুকুর তেড়ে আসে। ভয়ে দৌড় দিলে একটি কুকুর হাঁটুতে কামড় বসিয়ে রক্তাক্ত করে। স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মহাখালী জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
গণমাধ্যমকর্মী সিরাজুম সালেকীন। অফিস শেষে মোটরসাইকেলযোগে বাসায় ফেরার সময় মোহাম্মদপুর থেকে আকস্মিকভাবে একটি কুকুর তার পায়ে কামড় দেয়। এতে তার পায়ে পাঁচ-ছয়টির মতো কামড়ের দাগ বসে যায়।
সালেকীন জাগো নিউজকে বলেন, সব সময় মোটরসাইকেলে যাতায়াত করি। একদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে রাস্তা থেকে একটি কুকুর পায়ে কামড় দেয়। পরদিন মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে টিকা নেই।
আরও পড়ুন>> রাজধানীতে কুকুরের কামড়ে শিশুর মৃত্যু
এখন রাস্তায় কুকুর দেখলেই আতঙ্ক কাজ করে জানিয়ে তিনি বলেন, রাস্তায় কুকুর দেখলেই ভয় হয়। এক রাস্তা দিয়ে কুকুর গেলে চেষ্টা করি বিকল্প রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে। কুকুরের কামড়ের পর খাওয়া-দাওয়ায়ও কিছু নির্দেশনা দেন চিকিৎসক।
রিফাত, সালেকীনের মতো অনেকে এভাবে প্রতিদিন হাসপাতালে ছোটেন জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিতে। প্রধানত কুকুরের কামড়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা থাকলেও বিড়ালের আঁচড় বা কামড়ের সংখ্যাও কম নয়। ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে টিকা নিতে আসা মানুষের সংখ্যা প্রতি বছর এখন প্রায় দেড় লাখ ছুঁই ছুঁই। এর মধ্যে এখনো সিংহভাগই আসছেন কুকুরের কামড় খেয়ে। পাশাপাশি বাড়ছে বিড়ালের আঁচড়ের শিকার মানুষের সংখ্যাও।
টিকা নিতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি জলাতঙ্কে মৃত্যুও তিন বছর ধরে ঊর্ধ্বমুখী। এ কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারের জলাতঙ্কে মৃত্যু শূন্যে নামানোর যে লক্ষ্য, সেটি পূরণ হবে কি না তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্যমতে, বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৪০-৫০ জন রোগীর মৃত্যু হয় জলাতঙ্কে। শুধু মানুষই নয়, প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার গবাদিপশুও জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়। গত দশ বছরের মধ্যে ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ১০৬ জন মানুষ জলাতঙ্কে মারা যান বলে জানায় সিডিসি।
কুকুর-বিড়ালের কামড়ের শিকার হচ্ছেন মূলত দুইভাবে। রাস্তা-ঘাটে বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালের মাধ্যমে এবং ঘরে পোষা প্রাণীর মাধ্যমে। তবে বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমণের শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যাই বেশি।
আরও পড়ুন>> মুলাদীতে কুকুরের কামড়ে আহত ৩০, শিশুর মৃত্যু
সরেজমিনে মহাখালী জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর উত্তর বাড্ডা থেকে সাড়ে তিন বছরের শিশুসন্তান শিহাবকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন শহিদুল ইসলাম শহীদ। শিশু শিহাব বাসার সামনে কুকুরের বাচ্চা নিয়ে খেলা করছিল। মা কুকুর এসে শিহাবের হাতে কামড় দেয়।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ছেলেকে নিয়ে আজ তিনদিন টিকা দিতে আসছি। প্রথম দিন দুই হাতে দুটি ও পায়ে একটি, দ্বিতীয় দিনেও তিনটি টিকা দেয়। আজ তৃতীয় দিন দিয়েছে দুটি টিকা।
কুকুরের কামড়ে শুধু আহত নয়, আছে নিহত হওয়ার ঘটনাও। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে রাজধানীর মুগদা থানাধীন মান্ডা প্রথম গলি এলাকায় কুকুরের কামড়ে আলামিন (৩) নামে তিন বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়। বাসার সামনে খেলার সময় কুকুর কামড়ায় তাকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালে সারাদেশে জলাতঙ্কের টিকা নেন ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৯ জন। একই সঙ্গে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৭টি কুকুরকে টিকার আওতায় আনা হয়। আর একই বছর জলাতঙ্কে মারা যান ৫৭ জন।
২০১৯ সালে টিকা নেন দুই লাখ ৫৩ হাজার ৮৬১ জন। একই সঙ্গে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৫৯টি কুকুরকে টিকার আওতায় আনা হয়। একই বছর জলাতঙ্কে মারা যান ৫৭ জন। ২০২০ সালে টিকা নেন এক লাখ ৫২ হাজার ১৪ জন। একই সঙ্গে তিন লাখ ৬৯ হাজার ৪০৮টি কুকুরকে টিকার আওতায় আনা হয়। একই বছর জলাতঙ্কে মারা যান ২৬ জন।
২০২১ সালে টিকা নেন দুই লাখ ৭৮ হাজার ৬২৩ জন। একই সঙ্গে চার লাখ ১৩ হাজার ৮২৭টি কুকুরকে টিকার আওতায় আনা হয়। জলাতঙ্কে মারা যান ৪০ জন। সবশেষ ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত টিকা নেন ৪ লাখ ১০ হাজার ৫৬ জন। একই সঙ্গে এক লাখের বেশি কুকুরকে টিকার আওতায় আনা হয়। মারা যান ২৪ জন।
গত ১০ বছরে ২৭ লাখ ৯২ হাজার ৮২১ জন মানুষকে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকার আওতায় আনা হয়েছে ২৪ লাখ কুকুর।
কুকুরের টিকাদান
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্যমতে, জলাতঙ্ক রোগের প্রধান বাহক কুকুর। কুকুরের জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ করে মানুষ ও অন্য প্রাণীকে নিরাপদ করা সম্ভব। বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত যে কোনো দেশ বা এলাকায় শতকরা ৭০ শতাংশ কুকুরকে ব্যাপকহারে জলাতঙ্ক টিকা দেওয়া হলে তাদের হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়।
আরও পড়ুন>> বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে অর্ধশত গরু-ছাগলের মৃত্যু
তিন বছরে সঠিকভাবে পরপর তিন রাউন্ড জলাতঙ্ক টিকা দেওয়া হলে ওই এলাকা বা দেশ জলাতঙ্ক মুক্ত করা সম্ভব। এ ধারণার আলোকে বাংলাদেশের জলাতঙ্ক রোগ নির্মূল কার্যক্রমের প্রাথমিক সময় (২০১২-১৩ সাল) থেকে ব্যাপকহারে কুকুরের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা হয়, তা এখনো চালু আছে।
দেশের সব জেলায় প্রথম রাউন্ড, ২৫টি জেলায় দ্বিতীয় রাউন্ড এবং সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, নীলফামারী, পাবনা, গাইবান্ধা ও ঢাকা জেলায় তৃতীয় রাউন্ড টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ২৫ লাখ ৩৩ হাজার ডোজ জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে।
কুকুরের বন্ধ্যত্বকরণ কর্মসূচি
গত ২৫ জানুয়ারি ‘কুকুর বন্ধ্যত্বকরণ কর্মসূচির’ উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এদিন ১০টি কুকুর বন্ধ্যত্বকরণ কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন ১০টি করে কুকুর বন্ধ্যত্বকরণ করা হবে। বন্ধ্যা কুকুরগুলো চিহ্নিত করার সুবিধার্থে সেগুলোর কান ফুটো এবং ঘাড়ে নীল (স্থায়ী রং) স্প্রে করে দেওয়া হবে।
দীর্ঘদিন ধরে নজর না দেওয়ায় বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে বলে জানান মেয়র তাপস। তিনি তথ্য দেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৫০ হাজারের বেশি বেওয়ারিশ কুকুর রয়েছে।
জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ
জলাতঙ্কের উপসর্গ ও লক্ষণগুলো রোগের শেষ পর্যায়ে দেখা যায়। এই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে এনসেফালাইটিস সৃষ্টি করে এবং এর পরই মৃত্যু ঘটে।
জলাতঙ্কের একটি ইনকিউবেশন পিরিয়ড থাকে, যার অর্থ হলো উপসর্গ ও লক্ষণগুলো প্রকাশের আগে কিছুদিন এটি ব্যক্তির শরীরে সুপ্ত থাকে। প্রাথমিক উপসর্গ মাথাব্যথা, গলাব্যথা, জ্বর ও কামড়ের জায়গায় খিঁচুনি।
আরও পড়ুন>> জলাতঙ্ক যেভাবে হয়, জেনে নিন রোধের উপায়
অত্যধিক লালা নিঃসরণ, গিলতে অসুবিধা, গিলতে অসুবিধার কারণে পানির ভয়, উদ্বেগ, বিভ্রান্তি, অনিদ্রা এমনকি আংশিক পক্ষাঘাত এবং কখনো কোমার মতো লক্ষণগুলো জলাতঙ্কের ইঙ্গিত দেয়। ব্যক্তি শব্দ, আলো এমনকি বাতাসের ঠান্ডা স্রোতে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে। বাতাসের ভয় (অ্যারোফোবিয়া) দেখা যায়।
কোথায় কীভাবে পাবেন টিকা
বিনামূল্যে জলাতঙ্কের টিকা দেয় সরকার। হাসপাতালে যাওয়ার পর চিকিৎসক ক্ষতস্থান দেখে টিকা দেন। টিকা নিতে হাসপাতালে যাওয়া লাগে সপ্তাহখানেক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারাদেশের জেলা হাসপাতাল ও কিছু উপজেলা হাসপাতাল পর্যায়ে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে।
এছাড়া রাজধানীর মহাখালীতে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালসহ পাঁচটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জলাতঙ্কের আধুনিক চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
দেশে যেভাবে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচি শুরু
প্রতিবছর বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষ ও গবাদিপশু জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেত। জলাতঙ্ক রোগ সংক্রমণে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়। ২০১০ সাল থেকে সরকার জলাতঙ্ক রোগ নিয়ন্ত্রণকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করে। স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রাণিসম্পদ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ২০১১-১২ সাল থেকে জলাতঙ্ক রোগ নির্মূল কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এছাড়া জলাতঙ্ক রোগ মুক্তির জন্য রোডম্যাপ তৈরি করা হয়, যা বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা কাজ করছে।
কুকুরের সংখ্যার বিষয়টি জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবীর জাগো নিউজকে বলেন, বেওয়ারিশ বা রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো এমন কুকুরের সংখ্যা আনুমানিক ৫০ হাজার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ভ্যাকসিন কর্মসূচির মাধ্যমে ৩৩ হাজার ৫৭৪ কুকুরের জলাতঙ্ক প্রতিরোধক টিকা দেওয়া হয়।
বাকি কুকুরগুলোরও ভবিষ্যতে টিকা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে ফজলে শামসুল কবীর বলেন, ধারাবাহিকভাবে বাকি সব কুকুরকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনে প্রায় ৩০ হাজার বেওরারিশ কুকুর রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২২ হাজার কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধক টিকা দেওয়া হয়েছে। বাকি আট হাজার কুকুরকেও পর্যায়ক্রমে টিকার আওতায় আনা হবে।
জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন তিন থেকে চারশ রোগীকে টিকা দেওয়া হয় শুধু এই হাসপাতাল থেকে। সরকারি ছুটির দিনসহ সপ্তাহে সাতদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতিদিন বিনামূল্যে সেবা দেওয়া হয়। অন্য প্রাণীর তুলনায় কুকুরে কামড়ানো রোগী বেশি আসে।
কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বানর ও বাদুড়ের কামড় অথবা সংস্পর্শে এলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীরের ওই অংশটুকু ১৫ থেকে ২০ মিনিট সাবান-পানি দিয়ে ধুতে হবে জানিয়ে হাসপাতাল কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এতে ৭০ শতাংশ সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভ্যাকসিন, প্রয়োজনে টিটিনাসের টিকাও নিতে হবে। কুকুর-বিড়ালের সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকা অথবা সংস্পর্শে গেলেও তাদের উত্ত্যক্ত করা যাবে না। উত্ত্যক্ত করলে তারা হিংস্র হয়। প্রাণীদের প্রতি সদয় থাকতে হবে।
গ্রামাঞ্চলে এখনো প্রচলন রয়েছে কুকুর-বিড়াল কামড়ালে ঝাড়ফুঁক-কবিরাজি করার। এগুলো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
ছোটবেলা থেকে বাচ্চাদের কুকুর-বিড়ালের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ ও তাদের উত্ত্যক্ত না করার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এতে ছোটবেলা থেকেই শিশুরা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এস এম গোলাম কায়সার জাগো নিউজকে বলেন, জলাতঙ্ক শতভাগ মরণব্যাধি ও শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। যদি কোনো ব্যক্তি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয় সে বাঁচবে না, তার মৃত্যু নিশ্চিত। মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি কুকুরকেও বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হয়। প্রতি বছর আমরা তিন থেকে চার লাখ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসি। সারাদেশে ২৪ লাখের বেশি কুকুরের টিকা দেওয়া হয়েছে।
ডা. এস এম গোলাম কায়সার আরও বলেন, ৯৯ শতাংশ জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টি হয় কুকুরের মাধ্যমে। মানুষ আগের চেয়ে সচেতন হওয়ায় টিকা নেওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। তবে প্রান্তিক অঞ্চলে টিকার হার কম।
টিটি/এএসএ/জেআইএম