সংসদে মোকাব্বির খান
‘সেকেন্ড হোম’ নিয়ে কথা বললে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসবে
বিদেশে বাড়ি বা ‘সেকেন্ড হোম’ নিয়ে কথা বললে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই কথা জানান তিনি।
গত ৯ জানুয়ারি সংসদে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের একাংশ উল্লেখ করে গণফোরামের এই সংসদ সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী সঠিক তথ্য নিয়ে কথাগুলো বলেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমি বিরোধীদলে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছি। আমার সেকেন্ড হোমের কথা বলেছেন, আমার বিলাসী জীবন-যাপনের কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন: বিদেশে বাড়ি ক্রেতারা নজরদারিতে আসছেন
এসময় গণফোরামারে সদস্য দাবি করেন, যুক্তরাজ্যে তার সেকেন্ড হোম গোপনীয় কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি বলেন, তার সেকেন্ড হোম কোনো লুটপাটের অর্থ বা বাংলাদেশ থেকে পৈত্রিক জমি বিক্রি করে করেননি। ৪০ বছর আগে তিনি ইংল্যান্ডে ব্যবসা করে বাড়ির মালিক হয়েছেন।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন মোকাব্বির খান। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
মোকাব্বির খান বলেন, এই পার্লামেন্টের বর্তমান এবং সাবেক সংসদ সদস্য, আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ তাদের অনেকেই বাংলাদেশের অর্থ লুটপাট করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বেগমপাড়া, সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম তৈরি করেছেন। এই সেকেন্ড হোম নিয়ে কথা বললে দেখা যাবে, কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে। তখন প্রধানমন্ত্রী হয়তো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাবেন, তাই সেদিকে যাবো না।
আরও পড়ুন: বিদেশে বাড়ি-গাড়ি আছে এমন আমলাদের ফাঁসি হওয়া উচিত: সংসদে শামীম
বর্তমান আওয়ামী লীগে বঙ্গবন্ধুর নীতি-নৈতিকতা আর আদর্শ নেই উল্লেখ করে গণফোরামের সংসদ সদস্য বলেন, রাজনীতি মানেই অর্থবিত্ত আর গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতা। রাজনীতি আজ লুটেরাদের হাতে। অর্থনীতি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে চাটুকাররা ফায়দা লুটছে এবং চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, শক্তিশালী আর দুর্বল যাই বলেন না কেন, বর্তমানে এই সংসদে আমিই একমাত্র সত্যিকারের বিরোধীদলের সদস্য। এর বাইরে যারা আছেন তারা আসলে সবাই মহাজোটের শরিক দল। এরা অনেকেই আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন এবং ২০১৮ সালেও মন্ত্রিসভায় যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন।
আরও পড়ুন: চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তার উত্তরায় তিনটি পাঁচতলা বাড়ি!
এই সংসদের অনেকে এমপি হওয়ার সুবাদে শত শত বা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মন্তব্য করে মোকাব্বির খান বলেন, আমার মতো হতভাগা এমপি হয়তো এই পার্লামেন্টে একজনও নাই। ঢাকা বা সিলেটে বা বাংলাদেশের কোথাও কোনো স্থাবর সম্পত্তি নেই। সরকারি কোনো ফ্ল্যাট বা প্লটের জন্য আবেদনও করিনি। উত্তরায় একটি বাড়ি কিনলেও এমপি হওয়ার পর অর্থাভাবে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। বিলাসবহুল গাড়ি তো দুরের কথা, একমাত্র সংসদ সদস্য যার কোনো গাড়িই নেই। ট্যাক্স ফ্রি একটি গাড়ি নেওয়ার সুযোগ থাকলেও সেটা নেইনি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের কঠিন সময়ে ড. কামাল হোসেন একজন ত্যাগী কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। আজকে যারা সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করছেন, সেদিন তারা কোথায় ছিলেন? আজকের সংসদ উপনেতা (মতিয়া চৌধুরী) থেকে শুরু করে অনেকেই বঙ্গবন্ধুর সরকারকে অস্থিতিশীল করতে আন্দোলন করেছেন।
আরও পড়ুন: লুটপাটকারীদের কারণেই সরকারের দুর্নাম হচ্ছে: মোকাব্বির খান
মোকাব্বির খান চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসের দাবিদাররা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে পারবেন না। কারণ অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মুখে ফেনা তুললেও অন্তরে ধারণ করেন না। এক-এগারো শিক্ষা দিয়েছে আওয়ামী লীগের এখনো কোনো দুঃসময় আসলে সুবিধাভোগীদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এসময় তিনি সংসদে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে অনিয়মের কথা বলেন।
মোকাব্বির খান বলেন, কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থপাচার, কিছু কিছু জায়গায় সরকারের অব্যবস্থাপনা, এবং আর্থিক খাতে লুটপাটের কারণে দ্রব্যমূল্য আজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বাজারে গেলে দেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না। যে যেভাবে খুশি সেভাবে লুটপাট করছে তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: দ্বৈত পাসপোর্টধারী প্রায় ১৪ হাজার, তালিকা হাইকোর্টে
মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকের জীবনমান নিচে নেমে যাচ্ছে। আবার অনেকে দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। সরকার এক কোটি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ন্যায্যমূল্যের কার্ড দিয়েছে। এখানে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি হচ্ছে। এই কার্ডগুলোর ৮০ ভাগ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেওয়া হয়েছে, অসংখ্য প্রমাণ আছে। এমনকি একই পরিবারে একাধিক কার্ড দেওয়া হয়েছে। গরিব মানুষ তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছে না।
এইচএস/জেডএইচ/জেআইএম