ঢাকা ও বরেন্দ্র এলাকায় নেমে যাচ্ছে পানির স্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৩৬ পিএম, ০২ জানুয়ারি ২০২৩
ফাইল ছবি

দেশে প্রতিনিয়তই পানির স্তর বা লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ বরেন্দ্র এলাকাগুলোতে পানির স্তর নামছে আশঙ্কাজনক হারে।

সোমবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গোল টেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন বক্তারা। বৈঠকটির আয়োজন করে এনজিও ফোরাম, বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রেসি ফোরাম এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম।

বৈঠকে বলা হয়, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে পানিবাহিত রোগ বাড়ছে। বর্তমানে সাত কোটি মানুষ নিরাপদ পানি এবং সাড়ে সাত কোটি মানুষ স্যানিটেশন বঞ্চিত। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বক্তারা বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি তোলার কারণে ঢাকার পাশাপাশি বরেন্দ্র এলাকাতেও পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বরেন্দ্র এলাকায় পানি তোলা ছাড়াও অন্যান্য আরও ইস্যু রয়েছে। সেখানে বৃষ্টি কম হয়। এক্ষেত্রে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের পর থেকে এসব এলাকায় নতুন কোনো টিউবওয়েল বসাচ্ছে না। ঢাকা ও বরেন্দ্র এলাকার বাইরেও বিভিন্ন নগর এলাকা, শিল্পাঞ্চল এলাকায় পানির লেয়ার নেমে যাচ্ছে।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আব্দুল আজিজ বলেন, ঢাকার চারপাশের নদী, বিশেষ করে বুড়িগঙ্গার পানি এখনও পরিষ্কার, বিশুদ্ধ করতে পারিনি। এদিকে ঢাকার পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। এক সময় এখান থেকে পানি তোলাই কঠিন হয়ে যাবে। এগুলো ভাবতে হবে আমাদের। সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, যে পানি মানুষ ব্যবহার করবে, তা যেন দূষণমুক্ত হয়। ইন্ডাস্ট্রিতে যে পানি ব্যবহার হয়, তা কিন্তু রিসাইকেল করা হয় না। রিসাইকেল করা হলে অনেকটা পানির সংকট সমাধান হতো। এজন্য আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।

ডা. আজিজ বলেন, ঢাকায় পানির সমস্যা বেশি। চট্টগ্রাম, খুলনা ভালো করছে। যে মানুষকে আমরা সার্ভিস দিচ্ছি, তিনি আমার-আপনার প্রতিবেশী। আমাদেরই কাছের মানুষ। এই বিবেচনায় সেবা প্রধানে আন্তরিকতা বজায় রাখতে পারি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিরেক্টর আনোয়ার জাহিদ বলেন, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে হলে আমাদের ভাবতে হয় সবার জন্য পানি আছে কি না? ৯৭ ভাগ লবণ পানি, তিন ভাগ বরফ, এক ভাগেরও কম পানযোগ্য পানি। এর থেকেই খাবার। পানির চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু পরিমাণ বাড়ছে না। ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ কমে আসছে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকায় যেখানে ৫০ বছর আগে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার ২-৩ মিটারের মধ্যে ছিল, বর্তমানে সেখানে ৮৬ মিটারে নেমে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই এলার্মিং। তবে কিছু কিছু এলাকায় ব্যুরো মওসুমে পানির লেয়ার নিচে নামলেও আবার বৃষ্টির সময়ে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে। কিন্তু ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকাতে পানির লেয়ার শুধু নামছেই, কখনো আর ওপরে উঠছে না।

বৈঠকে জানানো হয়, ঢাকায় বছরে এক থেকে দুই মিটার পর্যন্ত পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। আর ঢাকার বাইরে নামছে সেন্টিমিটার হারে। এরমধ্যে আশঙ্কার কথা হলো, ব্যবহারযোগ্য পানি আছে কি না, থাকলে কত পরিমাণ আছে, এসব দেখার কেউ নেই।

অনুষ্ঠানে হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বির সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রেসি ফোরামের সদস্য ও এনজিও ফোরামের অ্যাক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এসএসও রশিদ, কাজী মনির মোশাররফ, খুলনা ওয়াসার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আবদুল্লাহ, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রজেক্ট ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম, রাজশাহী ওয়াসার ডেপুটি ম্যানেজার এসএম তুহিনুর আলমসহ আরও অনেকে।

এএএম/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।