উদ্বোধনের অপেক্ষায় বাঁশ ও খড়ের ‘হিমাগার’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০৬ এএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪

অবকাঠামোই বলে দিবে ভিন্ন কিছু। খড়ের ছাউনি। বাঁশের ব্যবহার বেশি। নেই বিদ্যুতের আলোক ছড়া। নেই জেনারেটরের উচ্চ শব্দ। তবে কি পিছিয়ে পড়া কিছু? না, তেমনটি নয়। বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই। জলীয় বাষ্পের সাধারণ একটি ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ঠান্ডা থাকবে। বাঁশের তৈরি আরেক ধরনের প্রযুক্তি বাতাসের আর্দ্রতা টেনে শুষে নেবে। এ পদ্ধতিতে এই প্রথম একটি বিকল্প ‘ প্রাকৃতিক হিমাগার’ তৈরি করা হয়েছে রাজশাহীতে। এই হিমাগারে কৃষক অল্প খরচে ফসল সংরক্ষণ করতে পারবেন। যেন এক অভিনব কর্ম।

হিমাগারটির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, অল্প খরচে কৃষক এটি ব্যবহার করতে পারবেন। ৮৫ কেজির এক বস্তা আলু এখন হিমাগারে রাখতে কৃষকের ৩৫০ টাকা লাগে। এই হিমাগারে লাগবে মাত্র ১০০ টাকা। দেশে আদা ও পেঁয়াজের কোনো সংরক্ষণাগার নেই। এই হিমাগারে আদা, পেঁয়াজ ছাড়াও এক মাসের জন্য মরিচ, বেগুন, ফুলকপি ও বাঁধাকপি সংরক্ষণ করা যাবে।

৩০০ টন ধারণক্ষমতার এই হিমাগারটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১৪ লাখ টাকা। এটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান আগামী শুক্রবার এর উদ্বোধন করতে রাজশাহী যাচ্ছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন এটি করেছেন। বিকল্প ও প্রাকৃতিক এই হিমাগার তৈরিতে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জাগোনিউজের কথা হচ্ছিল মনজুর হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, আর কোথাও এ ধরনের হিমাগার নেই। তবে খুব সাধারণ। কিন্তু ভেতরে বিজ্ঞান আছে। এটা হচ্ছে স্বল্প আয়ের কৃষকের জন্য ব্যয় সাশ্রয়ী। বাংলাদেশ ব্যাংক সঙ্গে ছিলো। এজন্য কৃতজ্ঞতা।

তবে শংকা ও ভীতিও আছে। মানুষের যে ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। সেটি যদি পূরণ না হয় সেটি হবে দুঃখজনক। তবে পরীক্ষামূলকই বলব। প্রয়োজনে আরো কাজ করব। বলছিলেন মনজুর হোসেন।   

তিনি আরো বলেন, সাধারণ অবকাঠামো দেখে যদি লোকজন নিজেরাই তৈরি করতে চায় সেটি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তখন এর সুমান নষ্ট হবে। কারণ মানুষ তো এর ভেতরের বিজ্ঞান জানেন না। তাই এর নির্মাণকে পেটার্ন করে প্রাতিষ্ঠানিক করতে হবে।    

হিমাগারটি তৈরি করতে সময় লেগেছে ছয় মাস। নির্মাণকাজ শুরু হয় গত ২৮ এপ্রিল। ৩০০ টন ধারণক্ষমতার তিনতলাবিশিষ্ট এই হিমাগারের আয়তন এক হাজার ৭০০ বর্গফুট। বাইরের আয়তন ৬০ বাই ৩০ ফুট। আর ভেতরের ৫৮ বাই ২৮ ফুট। তৈরির উপকরণ হচ্ছে বাঁশ, খড়, টালি, বালু ও সিমেন্ট। এর মধ্যে বাঁশ হচ্ছে ৬০ ভাগ। ১২ ভাগ খড় আর বাকি অংশ ইট-বালু-সিমেন্ট। হিমাগারের ছাউনি দেওয়া হয়েছে খড়ের। দেয়াল তৈরি করা হয়েছে ইট দিয়ে।

প্রযুক্তিটি কাজ করে যেভাবে: দেয়াল ও টালির মাঝখানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা ফাঁক। ফাঁকা অংশে বালু ও পানি থাকবে। এখান থেকে জলীয় বাষ্প তৈরি হবে। এই প্রক্রিয়ায় ঘরের ভেতরের তাপ শোষণ করা হবে।
হিমাগারের ভেতরে তিনতলাবিশিষ্ট বাঁশের মাচা তৈরি করা হয়েছে। ওপরে ওঠার জন্য বাঁশের সিঁড়ি বানানো হয়েছে। নিচতলা থেকে ঠান্ডা বাতাস যাতে প্রাকৃতিক উপায়ে ওপরে উঠে যায়, সে জন্য দেয়ালের নিচের দিকে একটু করে ফাঁকাও রাখা হয়েছে। সেখান দিয়ে বাইরের গরম বাতাস ভেতরে ঢুকে প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা বাতাসকে ঠেলে ওপরে নিয়ে যাবে।

গভর্নর মনোযোগ
দিনাজপুরের এক ব্যক্তি ভারতে দেখে এসে একটি প্রাকৃতিক হিমাগার তৈরি করেছেন। এটা দেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান মনজুর হোসেনকে কিছু করতে বলেন। তিনি তাকে আধুনিক প্রযুক্তি একটি প্রাকৃতিক হিমাগার তৈরি করতে বলেন। এ জন্য তিনি একটি প্রকল্প প্রস্তাব দিতে বলেন। তিনি ১৪ লাখ টাকার একটি  প্রস্তাব পাঠান। এরপর করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার তহবিল থেকে ১৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

মনজুর বলেন, প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে কাজ করার জন্য ব্যয় বেশি হয়েছে। পরের বার ব্যয় কমে আসবে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।