মেট্রোরেলে নতুন মাত্রা যোগ করবে টিওডি, পার্কিং-কেনাকাটায় সুবিধা
মেট্রোরেলে যাতায়াতে নতুন মাত্রা যোগ করবে ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) হাব। এ সংক্রান্ত মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। যুক্তরাষ্ট্র-ইংল্যান্ডের মতো উন্নত দেশের আদলে মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন টিওডিতে থাকবে বহুতলবিশিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা। ব্যক্তিগত গাড়ি রেখে মেট্রোতে ভ্রমণ করতে পারবেন যাত্রীরা। এতে শহরে কমবে গাড়ির চাপ। পার্কিং ছাড়াও বাড়তি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যে এসব টিওডিতে থাকবে বিপণিবিতান, হোটেল, বিনোদনকেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হবে ২৮ ডিসেম্বর। প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার চালু হবে। আগামী বছর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এবং ২০২৫ সালের মধ্যে চালু হবে মতিঝিল থেকে কমলাপুর সম্পূর্ণ মেট্রোরেল প্রকল্প। এসব বিষয় মাথায় রেখেই প্রাথমিকভাবে উত্তরা ও গাবতলী এলাকায় দুটি টিওডি নির্মাণ করা হবে।
আরও পড়ুন >> ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন: কাদের
চলতি বছরের জুলাইয়ে মেট্রোরেল প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়ানো হয়। ব্যয় বাড়ে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। একই সঙ্গে দৈর্ঘ্য বাড়বে ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। মোট ব্যয় গিয়ে ঠেকছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকায়। মেট্রোরেল প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানোর অন্যতম কারণ টিওডি নির্মাণ।
ডিএমটিসিএল জানায়, পরিকল্পনা অনুসারে, প্রথম টিওডি হাব হবে উত্তরা সেন্টার স্টেশন ঘিরে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ৮৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে ২৮ দশমিক ৬২ একর জমি কেনা হয়েছে। এখন বিস্তারিত নকশা তৈরি করা হবে। মেট্রোরেল লাইন-৬ এর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই নেতৃত্বাধীন এনকেডিএম অ্যাসোসিয়েশন টিওডি হাব নির্মাণের নকশা প্রণয়ন, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি ও দরপত্র দলিলসহ যাবতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।
গাবতলীতে হবে টিওডি হাব
গাবতলী বাস টার্মিনালটি সরিয়ে নিয়ে টিওডি নির্মাণ করা হবে। মেট্রোরেল প্রকল্পের আওতায় এ জায়গায় টিওডি হাব করতে চায় ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গাবতলী বাস টার্মিনালের জায়গায় টিওডি হাব হলে বর্তমানের অবকাঠামো ভেঙে ফেলার প্রয়োজন হবে না। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে আলোচনা চলছে। শিগগির ডিএমটিসিএল ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
আরও পড়ুন >> ৯ হাজার কোটির ভুতুড়ে আবাসনে আলো ছড়াবে মেট্রোরেল
আরও যেসব পরিকল্পনা
গাবতলী এলাকার তিনটি মেট্রোরেল লাইনের পথ হচ্ছে লাইন-১ (গাবতলী থেকে ধানমন্ডি, গুলিস্তান হয়ে চিটাগং রোড), লাইন-৫ উত্তর পথ (সাভারের হেমায়েতপুর থেকে মিরপুর ও গুলশান হয়ে ভাটারা), লাইন-৫ দক্ষিণ পথ (গাবতলী থেকে রাসেল স্কয়ার ও হাতিরঝিল হয়ে দাশেরকান্দি)। গাবতলী ছাড়াও এসব লাইনে একাধিক টিওডি হাব নির্মাণের পরিকল্পনা আছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের।
নির্মাণাধীন এমআরটি লাইন-৬ এর পর কাজ দ্রুত শুরুর পরিকল্পনা আছে লাইন-১ এর। এই লাইনের দুটি অংশ। প্রথম অংশটি পাতালপথে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পাশ দিয়ে পূর্বাচলের পিতলগঞ্জে যাবে। এ লাইন নির্মাণের পূর্ণাঙ্গ নকশা ৭৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ চলছে। পূর্বাচলে একটি টিওডি হাব নির্মাণ করার পরিকল্পনা আছে।
আরও পড়ুন >> মেট্রোরেল উদ্বোধন: এলাকাবাসীর জন্য পুলিশের ৭ নির্দেশনা
২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানী ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ডিএমটিসিএলের অধীনে ছয়টি মেট্রোরেল (এমআরটি) নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। যাতে রাজধানীজুড়ে ১২৯ দশমিক ৯০১ কিলোমিটার মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে এলিভেটেড লাইন হবে ৬৮ দশমিক ৭২৯ কিলোমিটার এবং ভূগর্ভস্থ লাইন হবে ৬১ দশমিক ১৭২ কিলোমিটার। রাজধানীজুড়ে থাকবে ১০৫টি স্টেশন। যার মধ্যে ৫২টি থাকবে উপরে এবং ৫৩টি থাকবে পাতালে। ডিএমটিসিএল বিশ্বের অন্যান্য মেট্রোর মতো নন-রেল ব্যবসার কথা ভাবছে।
আগামী ডিসেম্বরে মেট্রোরেলের (এমআরটি লাইন-৬) বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হলে উত্তরা সেন্টার স্টেশনে টিওডি হাবের গুরুত্ব বাড়বে।
আরও পড়ুন >> গতি ফিরছে মিরপুরে, ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় ব্যবসায়ীরা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক, পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক জাগো নিউজকে বলেন, পরিবেশবান্ধব ও স্মার্ট সিটি গড়তে টিওডির কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীর সব দেশেই মেট্রোরেল স্টেশনের পাশে এগুলো নির্মিত হয়। টিওডি নির্মিত হলে মানুষ গাড়ি ব্যবহার করবে না, হেঁটে মেট্রোরেল স্টেশনে চলে আসবে। সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার ফরেন কারেন্সি খরচ করে তেল কেনে। টিওডি নির্মিত হলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমে যাবে।
আরও পড়ুন >> মেট্রোরেলের যাত্রী বহনে প্রস্তুত ৫০ দ্বিতল বাস
টিওডি প্রসঙ্গে এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘শহরের বাইরে টিওডি নির্মাণ করলে অনেকে পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে মেট্রোরেলে চড়বে। সরকার মানুষকে বাধ্য করবে টিওডিতে গাড়ি রেখে মেট্রোরেলে চড়তে। মূল শহরের ভেতরে গাড়ির চাপ কমবে।’
সরকারি মালিকানাধীন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘উত্তরা উত্তর স্টেশনের পাশে টিওডি নির্মিত হবে। আমরা ভূমি অধিগ্রহণ কাজ সম্পূর্ণ করেছি। বর্তমানে টিওডির নকশার কাজ চলমান। টিওডি নির্মাণের ফলে নগরীতে গাড়ির চাপ থাকবে না। মেট্রোরেলকেন্দ্রিক একটা পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে টিওডির কোনো বিকল্প নেই। মেট্রোরেল থেকে নেমেই যাত্রীরা টিওডি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে পারবেন।’
এমওএস/এএসএ/এমএস