দুর্নীতিতে ১৪তম বাংলাদেশ
দুর্নীতির সূচকে আবারও অবনতি করল বাংলাদেশ। স্কোর ও অবস্থান বিবেচনায় দুর্নীতি কমানোর উন্নতির ধারা থেকে ছিটকে পড়ল দেশ। দুর্নীতির ব্যাপকতার দিক থেকে বাংলাদেশ ১৪তম। আগে ছিলো ১৬তম। ২০১১ সালের পর দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা নতুন করে বাড়ল।
এই মূল্যায়ন করেছে বার্ণিল ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারনেশনাল-টিআই।
বুধবার বিশ্বের ১৭৫টি দেশে একযোগে সংস্থাটি তার দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে টিআইবি এই সূচক প্রকাশ করে। এ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
দুর্নীতি সূচক তুলে ধরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতির ধারণা সূচকে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থান ২০১৩ সালের তুলনায় কমেছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো ১৬তম। কিন্তু এবার নেমে হয়েছে ১৪তম। স্কোর ২৭ থেকে কমে ২৫ পেয়েছে। গত তিন বছরে টাকা অবস্থান উন্নতি হলেও এবার আবার অবনতি হলো। এটি উদ্বেগজনক।
বিভিন্ন কারণে দুর্নীতির সূচকে এ বছর অবনতি হয়েছে বলে সংস্থাটি মনে করছে। বিস্তারিত তুলে ধরে ড. জামান বলেন, দুর্নীতি বিরোধি অঙ্গীকার অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের ঘাটতি, কার্যকরভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের উদাহরণের অভাব, দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা খর্ব, পদ্মাসেতু প্রকল্প, রেলওয়েতে নিয়োগ দুর্নীতি, শেয়ার বাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি, সোনালি ব্যাংকসহ ব্যাংক খাতের জালিয়াতি, ক্ষমতাবানদের সম্পদে গড়মিল, ভূমি দখল, জমি দখল ও জলাশয় দখলের মহাউৎসব।
তিনি আরো বলেন, সংসদকে আমরা সেভাবে কার্যকর দেখছি না। সংসদীয় কমিটিগুলোও সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। এতে করে দুর্নীতি উৎসাহিত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গ টেনে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল বলেন, সংসদসহ সব ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক চর্চা থেকে নির্বাহী আদেশ বেশি দেখা যায়। এতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে থাকে। যার ফলে দেশে দুর্নীতির চিত্র নাজুক।
তিনি বলেন, সংসদ তার প্রাপ্য স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে পারছে না।
ড. জামান বলেন, ক্ষমতাবানদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ব্যবসার প্রসারও দুর্নীতির কারণ। বিদেশে টাকা পাচার বেড়েছে। সুইচ ব্যাংকে বাংলাদেশের আমানত জমার হার বেড়েছে। মালেশিয়ায় বাংলাদেশিদের সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ বেড়েছে। এসব কারণে এবার অবস্থান অবনতি।
দুনীতির এই অবনতি থেকে বেরিয়ে আসার কিছু পরামর্শও এসেছে। সংস্থাটি বলছে, এজন্য সরকারের রাজনৈতিক সদ্বিচ্ছা জরুরি। প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতি কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে, দুদককে কার্যকর করতে হবে, সংসদকে কার্যকর করতে হবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দিতে হবে।
টিআই বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। অন্যদিকে, বৈশ্বিক গড় স্কোরের তুলনায় বাংলাদেশের স্কোরও এবার কমেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৭৫টি দেশের মধ্যে ৯২টি দেশের স্কোর বেড়েছে, ৪৭টি দেশের স্কোরের কোন পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশসহ ৩৬ দেশের স্কোর নিচে নেমেছে। এবার বৈশ্বিক গড় ৪৩। অথচ বাংলাদেশের স্কোর ২৫।
টিআই এবার ১২টি সূচক নিয়ে বিশ্বের রাজনৈতিক ও প্রশাসিক এই সূচক করেছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৭টি সূচক বিবেচনা করা হয়েছে।