মাদক-হত্যা নয়, স্বেচ্ছায় নদীতে ঝাঁপ দেন ফারদিন: র‍্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২৯ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২২

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ স্বেচ্ছায় ডেমরা সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন বলে দাবি করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্যাব।

র‍্যাবের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজ, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টসহ অন্যান্য সব আলামত বিবেচনায় নিয়ে তদন্তে এমনটিই বেরিয়ে এসেছে।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের পর দায়ের করা মামলায় তদন্ত চলছে। ফারদিনের মৃত্যু সংক্রান্ত অন্য কোনো সূত্র/আলামত পাওয়া গেলে, তবে তা বিবেচনায় নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। স্বেচ্ছায় নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন ফারদিন। তিনি একাই গিয়েছিলেন সেখানে।

আরও পড়ুন: হতাশা ও টাকার জন্য আত্মহত্যা করেন ফারদিন: ডিবির হারুন

র‍্যাব জানায়, গত ৪ নভেম্বর বিকেল থেকে ফারদিন নূর পরশ নিখোঁজ ছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও র‌্যাব নিখোঁজ শিক্ষার্থীকে খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু করে। গত ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় নৌ-পুলিশ।

পরবর্তী সময়ে জানা যায়, মরদেহটি নিখোঁজ বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের। এরপর ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় র‌্যাব মৃত্যুরহস্য উদঘাটনপূর্বক জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

ফারদিন নূর পরশ নিহত হওয়ার ঘটনায় র‌্যাব পারিবারিক সূত্র, অধিকতর তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্লেষণ, সিসিটিভি ফুটেজসহ স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের আলোকে রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করে।

jagonews24

জানা যায়, গত ৪ নভেম্বর বিকেল ৩টা থেকে রাজধানী ডেমরার কোনাপাড়া নিজ বাসা থেকে পরীক্ষার কথা বলে বুয়েটের হলের উদ্দেশ্যে বের হন ফারদিন। বিকেল ৫টায় ফারদিন সায়েন্সল্যাব মোড়ে তার পরিচিত বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করেন। সেখান থেকে নীলক্ষেত ও ধানমন্ডিসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। পরে সাতমসজিদ রোডে একটি রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।

রাত ৮টায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। পরে রিকশায় করে রামপুরার উদ্দেশ্যে যান। আনুমানিক রাত পৌনে ১০টায় রামপুরা ব্রিজ এলাকায় রিকশা থেকে নেমে যান এবং কিছুক্ষণ রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ঘোরাফেরা করেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে দেখা যায়, পরে ফারদিন কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা, পুরান ঢাকার জনসন রোড, গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট এলাকায় যান।

আরও পড়ুন: বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যা, ‘খুনি টেকনোলজিক্যালি স্মার্ট’

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে জানা যায়, ওইদিন দিনগত রাত ২টা ১ মিনিটে (সিসিটিভি ফুটেজ সময় ২টা ৩ মিনিট) যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচা থেকে নিহত ফারদিনকে লেগুনায় উঠতে দেখা যায়। রাত ২টা ২০ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের অন্য পাশে তারাবো বিশ্বরোডের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লেগুনা থেকে নেমে যান ফারদিন।

তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায়, রাত ২টা ২৬ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের তারাবো প্রান্তে ফারদিনের অবস্থান ছিল। রাত ২টা ৩৪ মিনিটে ওই ব্রিজের প্রায় মাঝখানে আসেন ফারদিন।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ গত ৪ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজের দুদিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ।

এ ঘটনায় রাজধানীর রামপুরা থানায় গত ৯ নভেম্বর রাতে ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলায় বুশরা নামে ফারদিনের এক বান্ধবীসহ অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়।

ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য রিভারাইন’র সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার নয়ামাটিতে। তিন ভাইয়ের মধ্যে ফারদিন ছিলেন সবার বড়। তার মেজ ভাই আবদুল্লাহ নূর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ছোট ভাই তামিম নূর এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

টিটি/এমকেআর/জিকেএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।