শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত রায়েরবাজার বধ্যভূমি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০০ এএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২

১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে পরিকল্পনা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুইদিন আগে ঘটে এক মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞ। তারা বেছে বেছে অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের হত্যা করে।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদদে এক শ্রেণির দালাল এ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করার এ নীলনকশা প্রণয়ন করে পূর্বপাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। পাকিস্তানি বাহিনীর অস্ত্র সহায়তা নিয়ে তাদের ছত্রচ্ছায়ায় আধাসামরিক বাহিনী আলবদরের ক্যাডাররা এ বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এ পরিকল্পনা করে হানাদার বাহিনী।

তাই এ শোকের দিন স্মরণে প্রতি বছরের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করে আসছে বাঙালি জাতি। এ দিনে স্মৃতিসৌধের রক্তে রাঙা লাল বেদিতে ফুল দিয়ে জাতির সূর্যসন্তানদের সম্মান জানানো হয়। যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ পালনের লক্ষ্যে প্রস্তুত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ একেবারে শেষপর্যায়ে।

jagonews24

সারাবছর অনেকটা অবহেলায় পড়ে থাকলেও ১৪ ডিসেম্বরের আগে সাজানো-গোছানো হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি। আগামী ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ঘিরে এখন চলছে যাবতীয় সাজগোজ।

সোমবার (১২ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে— রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে প্রবেশপথ ধুয়ে-মুছে সাফ করা হচ্ছে। কয়েকজন নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করছে। পরিষ্কার করছেন মূল বেদি ও বেদির আশপাশ। মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১২টার দিকে বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হবে।

দিবসটি ঘিরে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো এলাকার নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিয়েছে। এলাকায় সীমিত করা হয়েছে চলাচল। স্মৃতিসৌধের ভেতরে শুধু নিয়োজিত শ্রমিক, সিটি করপোরেশনকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকতে পারছেন।

jagonews24

গত তিনদিন ধরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন শকিফুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে জানান, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে সামনে রেখে আমরা ৫০/৬০ জন শ্রমিক তিনদিন ধরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছি। কাজ প্রায় শেষের দিকে।

সোমবার রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমিতে ঘুরতে আসেন কয়েকজন কলেজশিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাহফুজ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এখানে প্রায় সময় ঘুরতে আসি। কিন্তু আজকে ঘুরতে এসে একটু ব্যতিক্রম দৃশ্য চোখে পড়লো। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে সামনে রেখে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে একেবারে পরিপাটি করে রাখা হয়েছে। কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সারাবছর ধরে যদি এ জায়গাটিকে এমন পরিপাটি করে রাখা যায়, তাহলে স্মৃতিসৌধ দেখতে আসা দর্শনার্থীরা খুশি হবেন।

নিরাপত্তার ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৪ ডিসেম্বর ঘিরে রাজধানীর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখানে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশসহ বাহিনীর একাধিক ইউনিট কাজ করছে। রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা।

jagonews24

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। স্মৃতিসৌধের ভেতরে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ দিয়ে প্রতি বছর পরিষ্কার ও সাজ-সজ্জার কাজ করা হয়। স্মৃতিসৌধের বাইরে সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে পড়েছে। আমরা সবকাজ শেষ করেছি।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি
যথাযোগ্য মর্যাদায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ পালনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আগামী ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

jagonews24

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। এদিন সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

দিনটি উপলক্ষে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপসানালয়ে বিশেষ মোনাজাত করা হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পবিত্রতা রক্ষায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় মাইক বা লাউড স্পিকার ব্যবহার না করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

টিটি/এমএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।