আমি একজন মা, কী আর চাইব : জিহাদের মায়ের আকুতি


প্রকাশিত: ০১:৫৪ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রাজধানীর শাহজাহানপুরে পাইপে পড়ে নিহত শিশু জিহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া এই আদেশের পরে শিশু জিহাদের মা খাদিজা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি একজন মা, কি আর চাইবো।’

বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। তবে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ উল্লেখ করেননি হাইকোর্ট। এই ক্ষতির পরিমাণ কত হবে এবং কোন কোন সরকারি সংস্থা কত করে দেবে তা নির্ধারণ করে পূর্ণাঙ্গ রায়ে তা বলে দেবেন আদালত।

আদাতের বাইরে দাঁড়িয়ে জিাহদের বাবা নাছির ফকির সাংবাদিকদের বলেন, আমি যে মামলা করেছিলাম তা প্রত্যাহারের জন্য নানা জনে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। যারা এটা করছে তাদের কাউকে আমি চিনি না।

তিনি সরকার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান করে বলেন, তারা যেন আমাকে যথাযথ নিরাপত্তা দেয়। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

মা খাদিজা বেগম বলেন, মা আমি এখন আর কি চাইবো। আমিতো আর আমার সন্তান ফিরে পাব না। আমার যে ক্ষতি হয়েছে তা কি টাকায় পূরণ হওয়া সম্ভব?

তিনি বলেন, ‘আমার যে ক্ষতি হইছে তা কি টাকা দিয়া মিটাইবো? আমি কি আর জিয়াদকে ফিরা পামু? সরকার বা কোর্ট কি তা দিতে পারবে? আমি জানি তা পারবো না। এখন আমি চাই, কোর্ট বা সরকার এমন কিছু করুক যাতে সান্ত্বনা পাই।’

তিনি বলেন, সরকারি কোনো সংস্থার অবহেলার জন্য আর যেন কাউকে এভাবে সন্তান হারাতে না হয়। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি আইছি, আদালত কি রায় দেন তা শুনবার। আমি ন্যায়বিচার চাই। আর যেন কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়।’ কথা বলার এক পর্যায়ে চোখের পানিবিহীন বুক ফাটা কান্নায় স্তব্ধ হয়ে যান জিহাদের মা।

জিহাদের বাবা নাসির ফকির বলেন, আমার জন্যে ছেলেটা রাস্তায় এসে অপেক্ষা করতো। আজ জিহাদ নেই।

জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিমের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই রুলের উপর শুনানি শেষে চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে আদালত আজ (বৃহস্পতিবার) এই সংক্ষিপ্ত রায় দেন।

এছাড়া রায়ে অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য কারা দায়ী থাকবে এবং ক্ষতিপূরণ কারা দেবে সে বিষয়ে একটি গাইডলাইন দেবেন হাইকোর্ট।

রায়ের পর রিট আবদেনকারীপক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, জিহাদের মৃত্যুর জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষই দায়ী। সাংবিধানিক আইনে তারা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। ১৯৮৩ সাল থেকে ভারতে মৌলিক অধিকার লংঘিত হওয়ার ঘটনায় ওই দেশের আদালত এ জাতীয় রায় দিতো। বাংলাদেশে এই প্রথম এ জাতীয় রায় পেলাম।

২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলার সময় রেলওয়ে মাঠের পরিত্যক্ত পানির পাম্পের পাইপে পড়ে যায় জিহাদ। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জিহাদের মরদেহ উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করে। এরপর কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর ২৭ ডিসেম্বর বেলা তিনটার দিকে জিহাদের মরদেহ উদ্ধার করে।
 
এফএইচ/এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।