ফিলিং অটোমেশন করছে এলপিজিএল, সক্ষমতা বাড়বে আড়াইগুণ

ইকবাল হোসেন
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৯:০৫ পিএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২২

# সক্ষমতা বাড়বে আড়াইগুণ, ব্যয় হবে ১০ কোটি টাকা
# ৬ মাসের মধ্যে অটোমেশন যন্ত্রপাতি সংযোজন
# এরইমধ্যে ইতালি, জার্মানি ও ফ্রান্স ভিত্তিক তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে

এক সময়ে যে এলপিজি (লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করার অভাবে পুড়িয়ে ফেলা হতো, এখন সেই গ্যাসেই কোটি কোটি টাকা আয় করছে সরকার। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর পর বোতল ফিলিং অটোমেশন করতে যাচ্ছে এলপিজি বোতলজাতকারী প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল)। এর ফলে বর্তমান সক্ষমতার আড়াইগুণ বেশি বোতল রিফিল করতে পারবে শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। আগামী ৬ মাসের মধ্যে অটোমেশন যন্ত্রপাতি সংযোজন সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে এলপিজিএল কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় পেট্রোলিয়াম জ্বালানি পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে (ইআরএল) প্রতিষ্ঠার পর প্লান্টে উপজাত হিসেবে পাওয়া এলপিজি পুড়িয়ে ফেলা হতো। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার প্রায় ১০ বছর পর এলপিজি প্রক্রিয়াজাত করে বিপণনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ১৯৭৮ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মালিকানাধীন এলপি গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল)। ওই বছরই চালু হয় পতেঙ্গায় স্থাপিত বর্তমান প্লান্টটি। এরপর ইআরএল থেকে পাওয়া এলপিজি বোতলজাত করে পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং যমুনা অয়েল কোম্পাানির মাধ্যমে বাজারজাত করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তীতে বাজারজাতকরণে যুক্ত হয় স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল)।

আরও পড়ুন: বাড়তি এলপিজি নিয়ে বিপাকে ইস্টার্ন রিফাইনারি!

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ৪৪ বছর ধরে সনাতনী পদ্ধতিতে এলপিজি বোতল রিফিল করে আসছিল এলপি গ্যাস লিমিটেড। এতদিন অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে ফিলিং কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল এলপিজিএল। প্রতিষ্ঠানটির স্টোরেজ সক্ষমতা ৩শ টন হলেও বর্তমানে ২৪০ টন এলপিজি স্টোরেজ করা সম্ভব।

এলপিজিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে সনাতনী পদ্ধতিতে প্রতি ঘণ্টায় সাড়ে ১২ কেজি ওজনের ৫০০-৫১০টি এলপিজি বোতল রিফিল করা সম্ভব। সেই হিসাবে প্রতিদিন আট ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৫১ টন এলপিজি বোতলজাত করতে পারে এলপিজিএল। সবমিলিয়ে প্রতিমাসে ১১শ থেকে ১২শ টন এলপিজি রিফিল করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ইস্টার্ন রিফাইনারি প্রতিমাসে এলপিজি সরবরাহ করছে ১২শ থেকে ১৬শ টন। সর্বশেষ তথ্য মতে দৈনিক সর্বোচ্চ ৮৬ টন পর্যন্ত এলপিজি সরবরাহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে দৈনিক এই পরিমাণ এলপিজি বোতলজাত করার সক্ষমতা এলপিজিএলের না থাকায় বাড়তি অংশ বিক্রি করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এলপিজি বিক্রি করতে চায় বিপিসি, লাভবান কে?

সূত্রে জানা গেছে, মেশিনারিজ আধুনিকায়নের কারণে বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারিতে আগের চেয়ে ৪০ শতাংশ এলপিজি উৎপাদন বেড়েছে। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে উৎপাদিত এলপিজি বোতলজাত করে বিপিসির আরেক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল)। তবে ইস্টার্ন রিফাইনারির উৎপাদন বাড়লেও এলপিজিএলের বোতলজাত সক্ষমতা বাড়েনি। যে কারণে বর্তমানে বোতলজাত করার পর থাকা অতিরিক্ত এলপি গ্যাস বাল্কে বিক্রি করে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠার প্রায় ৪৪ বছর পর এলপিজি রিফিলে অটোমেশন প্রযুক্তি আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এলপিজিএল। রিফিল অটোমেশনের জন্য এরইমধ্যে ইতালি, জার্মানি ও ফ্রান্স ভিত্তিক তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে।

এলপিজিএল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অটোমেশন হলে ঘণ্টায় এক হাজার ২৫০টি বোতল রিফিল সম্ভব হবে। এ হিসাবে বর্তমানে যেখানে দৈনিক ৫০-৫১ টন রিফিল হচ্ছে, অটোমেশন হলে সেখানে দৈনিক ১২৫ টন রিফিল করতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি। যা বর্তমান সক্ষমতার আড়াইগুণ। এর মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণ হওয়ার পাশাপাশি বাল্কে বিক্রি নিরুৎসাহিত করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন: এসএওসিএলে কোটি কোটি টাকা তছরুপ, উদ্ধারে উদাসীন কর্তৃপক্ষ

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এলপি গ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু হানিফ জাগো নিউজকে বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে বর্তমানে যে পরিমাণ এলপিজি দেওয়া হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবে এত পরিমাণ এলপিজি বোতলজাত করে সরবরাহ করার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের প্লান্টটিও সেই ১৯৭৮ সালের। গত ৪৪ বছর ধরে একটি মেশিনে রিফিল করে এলপিজি সরবরাহ করে আসছি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বোতল রিফিল কার্যক্রম অটোমেশন করার প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছি। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। অটোমেশনের আওতায় ২৪টি ক্যারোজাল (রিফিল মেশিন) সংযোজিত হবে। পাশাপাশি আনুষঙ্গিক ভৌত কাঠামোরও পরিবর্তন করা হতে পারে।

তিনি বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারিতে আগে গড়ে দৈনিক ৪০ টন এলপিজি উৎপাদিত হতো। তবে বর্তমানে সেখানে দৈনিক ৬০ থেকে ৮০ টন পর্যন্ত এলপিজি উৎপাদিত হচ্ছে। এসব এলপিজি নির্ধারিত সময়ে বোতলজাত করতে হয়। অন্যথায় ইস্টার্ন রিফাইনারির কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে।

এ অবস্থায় এলপিজি রিফিল প্রক্রিয়া অটোমেশনের জন্য প্রস্তাবনা আহ্বান করেছি। তিনটি প্রস্তাবনা জমা হয়েছে। প্রস্তাবনাগুলো বর্তমানে মূল্যায়ন পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এই অটোমেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলেও জানান এলপি গ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

কেএসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।