সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে বিদেশি চক্র
আর্থিকভাবে স্বচ্ছল তরুণ-তরুণীকে অভিনব পন্থায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করছে একটি চক্র। সম্প্রতি এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু বিদেশি নাগরিক। এর মধ্য দিয়ে প্রতারণার বিষয়টিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হচ্ছে।
সম্প্রতি এমনি এক ঘটনায় অপরাধীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত একজন চিকিৎসকের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় ও সখ্যতা গড়ে মোটা অঙ্কের অর্থআত্মসাত করে। পরে র্যাবের হাতে প্রতারক চক্রটির নাইজেরিয়ার ৩ নাগরিকসহ ৫ জন আটক হয়।
আটককৃতরা হলেন মোহাম্মদ আলী (৩০), মঞ্জুর মাহমুদ (৩১), নাইজেরিয়ান ইঝুচে ফ্রাকিন (৩০), ওবি হেচৈ (৩৪) ও আইকে ফ্লাস্ক (৩৫)।
বুুধবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ র্যাব-২ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, ফেসবুক এর মাধ্যমে ডেসমন্ড বি সেমুয়েল নামের এক ব্রিটিশ নাগরিকের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত একজন চিকিৎসকের বন্ধুত্ব হয়। তাদের মধ্যে হোয়াটস অ্যাপ-এর মাধ্যমে কথাও হয়। বন্ধুত্বের সূত্রে সেমুয়েল তাকে ইংল্যান্ড হতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি মিন-রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের কুরিয়ার সার্ভিস-এর একজন প্রতিনিধি মোবাইল নম্বর ০১৭৪৭২৬৪১০১-হতে চিকিৎসকে জানানো হয়, তার নামে একটি গিফট বক্স এসেছে। এতে পরিবহন ব্যয় বাবদ ৫৬ হাজার ৫শ ৬৬ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখা হতে মিন-রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর হিসাব নং-০০১০১৭৮০৯, সোনালী ব্যাংক, উত্তরা শাখা, ঢাকা বরাবর ৫৬ হাজার ৫শ ৬৬ টাকা জমা করেন।
১৩ ফেব্রুয়ারি মিন-রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর একই প্রতিনিধি একই মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে জানায়, প্রেরণকৃত গিফট বক্স এর এক্স-রে স্ক্যান রিপোর্ট এর তথ্যে দেখা যায় যে, উক্ত বক্স এ ডায়মন্ড (হিরক) এর অতি মূল্যবান গহনা আছে যার মূল্য ২ কোটি টাকা। গিফট বক্স সংগ্রহ করতে হলে তাকে ২ লাখ ৬২ হাজার ৯ শ টাকা আরেকটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে প্রেরণ করতে হবে।
একইভাবে ওই চিকিৎসক গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড এর মিন-রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর হিসাব নং-০৬৪১০২১০০০০৯৮৬ বরাবর আবার উক্ত টাকা জমা করেন।
ওই দিন বিকেলে তৃতীয়বার তাকে ফোনের মাধ্যম তাকে জানানো হয় যে, বক্স এর ভিতরে অনেক মূল্যবান দ্রব্যাদি থাকায় তাকে আরও ১০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা প্রেরণ করতে হবে। গিফট বক্সের অবস্থান পরবর্তীতে জানানোর কথাও বলে তারা।
টাকার পরিমাণ ও গিফট বক্সের ঠিকানা না জানায় সন্দেহ হয় চিকিৎসকের। বিষয়টি তিনি র্যাবকে জানান। এরই প্রেক্ষিতে র্যা-২ প্রথমে ব্যাংক হিসাবের ২ জন মালিক মোহাম্মদ আলী (৩০) এবং মঞ্জুর মাহমুদকে (৩১) টাকা উত্তোলনকালে আটক করে। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নাইজেরিয়ান নাগরিক ইঝুচে ফ্রাকিন (৩০), ওবি হেচৈ (৩৪) ও আইকে ফ্লাস্ক (৩৫) কে আটক করে।
মুফতি মাহমুদ আরও জানান, আটক ওই ৩ নাইজেরিয়ান ঢাকার নিকেতন বি-ব্লকের ১ নং রোডস্থ ৮নং বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন। তাদের বৈধ কোন কাগজ-পত্র নেই। আটককালে তাদের কাছ থেকে ৫৩ হাজার টাকা, পাসপোর্ট, বিভিন্ন ব্যাংকের ব্লাঙ্ক চেক, ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ফোন পাওয়া যায়।
তিনি আরো জানান, আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, প্রতারক ফেসবুক, টুইটার, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ এবং ইমো এর আইডিসমূহ বিশ্লেষণ করে চক্রটি বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছিল।
মোহাম্মদ আলী ও মঞ্জুর মাহমুদ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। গার্মেন্টস ব্যবসার পাশাপাশি প্রতারণার মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকা মোহাম্মদ আলী ও মঞ্জুর আহমেদ ৫% কমিশন পেতেন। টার্গেটকৃতদের ফেসবুক আইডি বের করে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে। সুদর্শন এবং আমেরিকা অথবা ইউরোপের নাগরিতদের পরিচয় দেয় তারা। প্রতারক চক্রের সঙ্গে কিছু মহিলা সদস্যও যুক্ত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বন্ধুত্ব গাঢ় হওয়ার পরে তারা প্রেমের অভিনয় এবং বিভিন্ন উপহার প্রেরণের মাধ্যমে সম্পর্কটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়।
জেইউ/এসকেডি/আরআইপি