শাহজালাল বিমানবন্দর
টার্মিনাল এলাকায় যানজট, লাগেজ মাথায় নিয়ে হাঁটছেন বিদেশগামীরা
বিমানবন্দর সড়কে তখনও তীব্র যানজট। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল এলাকায়ও গাড়ি চলাচল অনেকটা স্থবির। উপায়ান্তর না দেখে বলাকা ভবনের সামনে ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে নেমে যান শরীয়তপুরের নড়িয়ার মাসুদ তালুকদার। মাথায় লাগেজ নিয়ে হাঁটা শুরু করেন বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ এর দিকে। ১০ মিনিট হাঁটার পর পৌঁছান টার্মিনালে।
আলাপকালে মাসুদ তালুকদার জাগো নিউজকে জানান, রাত ১১টায় টার্কিশ এয়ারলাইন্সে তার ফ্লাইট। যাবেন ইতালির রোমে। কিন্তু খিলক্ষেত পার হওয়ার পর শুরু হয় যানজট। সেখান থেকে বলাকা ভবন পর্যন্ত আসতে সময় লাগে এক ঘণ্টা।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরের কাছাকাছি আসার পর দেখি, গাড়ি আর চলে না। বিমানবন্দরের সীমানার ভেতর গাড়ির দীর্ঘ জটলা লেগে আছে। তাই ফ্লাইট ধরতে গাড়ি থেকে নেমে আধা কিলোমিটার হেঁটে টার্মিনালে এলাম।
বিমানবন্দর সড়ক থেকে নিজ গাড়িতে ৪৫ মিনিটে টার্মিনাল-২ এর ৮ নম্বর ফটকে (ভিআইপি) যান গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার মালিক কাদির খান। যানজটের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ব্যবসার কাজে প্রায়ই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু শাহজালাল বিমানবন্দরের মতো এমন নোংরা পরিবেশ, যানজট দুনিয়ার আর কোনো বিমানবন্দরে নেই। এমন পরিবেশের কারণে বিদেশিরা এই বিমানবন্দরে নেমেই বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পাচ্ছেন। আর প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দেশের মানুষ।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এই চিত্র নতুন নয়। প্রায় এক বছর ধরে এমন যানজটের কবলে বিমানবন্দর ও এর আশপাশের এলাকা। এর প্রধান কারণ, বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে (টার্মিনালের সামনের এলাকা) অবকাঠামো উন্নয়নে খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে বিমানবন্দরের টার্মিনালগুলোতে টিকমতো যানবাহন ঢুকতে এবং বের হতে পারছে না। পুরো বিমানবন্দর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে ধুলাবালি। রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত এ সড়কে যান চলাচল এড়িয়ে চলার জন্য বিশেষ সতর্কতাও জারি করা হচ্ছে কদিন পরপর।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, বিমানবন্দরে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজের জন্য কিছু সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে। দিনে বিমানবন্দর অভ্যন্তরে গাড়ির চাপ থাকে না। তবে সন্ধ্যার পর অধিকাংশ আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের শিডিউল দেওয়া। তখন একসঙ্গে সব যাত্রী বিমানবন্দরে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে চান। এতেই গাড়ির জটলা সৃষ্টি হয়। তবে গাড়ির জটলা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেজন্য কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর সড়ক থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরের চেকপোস্টের সামনে পর্যন্ত গাড়ির দীর্ঘ জট। ভেতরে বিভিন্ন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গাড়ি রেখে হেঁটে অনেকে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকছেন। আর ধুলাবালিতে পুরো বিমানবন্দর ছেয়ে গেছে।
সৌদি আরবগামী যাত্রী ফেনীর আরিফুল ইসলাম। তিনিও বিমানবন্দর সড়ক থেকে হেঁটে টার্মিনাল-১ এ যান। আলাপকালে আরিফুল ইসলাম বলেন, অদ্ভুত দেশ। দিন যত যাচ্ছে, বিমানবন্দরের সেবার মান তত কমছে। একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এই হাল মেনে নেওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় যাত্রীরা ফ্লাইট মিস করেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
এ বিষয়ে বিমানবন্দর এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, এই বিমানবন্দর দিয়ে দিনে প্রায় ২০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। তাদের অধিকাংশই গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরে ঢোকেন এবং বের হোন। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শিডিউল বেশি থাকে। এতে অনেক সময় টার্মিনাল ও সামনের এলাকায় গাড়ির জটলা লেগে যায়। তখন এপিবিএনের সদস্যরা জটলা সরাতে কাজ করেন।
জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এই বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের কাজ চলমান। এই টার্মিনালের সঙ্গে বিভিন্ন লাইনের (বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ইন্টারনেট, সার্ভার, পানি, পয়োনিষ্কাশন) সংযোগ দিতে হচ্ছে। বিমানবন্দর এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এজন্য যাত্রীদের যাতায়াতে আট নম্বর গেটের সামনে দিয়ে বিকল্প পথ খোলা রয়েছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সার্বিক কাজ সচল রেখেই থার্ড টার্মিনালের কাজ চলছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, ওই খোঁড়াখুঁড়ির কাজের জন্য বিমানবন্দরে যাতায়াতে যাত্রীদের তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সকাল ও সন্ধ্যায় কিছুটা চাপ বাড়ে। তখন এপিবিএনসহ আমরা সবাই গাড়ির জটলা কমাতে চেষ্টা করি। বিমানবন্দরের বাইরেও যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে।
ট্রাফিকের কারণে বিমানবন্দরে বোর্ডিংয়ে যাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ট্রাফিকের কারণে যাত্রীদের তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সব যাত্রীই নির্ধারিত ফ্লাইটের তিন ঘণ্টা আগে আসছেন। ফ্লাইট শুরুর এক ঘণ্টা আগে এলেও বোর্ডিং করতে পারছেন। তারপরও সবাই তিন ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে এলে ভালো হয়।
এমএমএ/এএসএ/জিকেএস