গলাচিপা সেতু প্রকল্প
অনুমোদনের আগেই ব্যয় বাড়ছে ৩১৭ কোটি টাকা
বরিশালের লেবুখালী-বাউফল-গলাচিপা-আমড়াগাছিয়া সড়কের রাবনাবাদ নদীর ওপর গলাচিপা সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২১ কোটি টাকা। যদিও শুরুতে এর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর সময় খরচ ধরা হয়েছিল ২০৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ফলে অনুমোদনের আগেই প্রকল্পটির খরচ বেড়েছে ৩১৭ কোটি টাকা।
খরচ বৃদ্ধির খাতগুলো হলো- নদীশাসন কাজে ১৭১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, আরসিসি ফেল্ডার পাইল নির্মাণে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা, নৌ-ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে ১৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণে খরচ বেড়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ।
প্রকল্পের মেয়াদও বেড়েছে। প্রথম প্রস্তাবে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের জুনে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। সর্বশেষ দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরা হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে-পটুয়াখালী জেলার সদর ও বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, আমতলী উপজেলা নদীবেষ্টিত। লেবুখালী-বাউফল-গলাচিপা-আমড়াগাছিয়া সড়কটি ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের পাগলা থেকে শুরু হয়েছে। এরপর বাউফল উপজেলার মধ্যে দিয়ে দশমিনা, গলাচিপা হয়ে পটুয়াখালী জেলার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। সড়কটি বাউফল, দশমিনা উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী জেলা সদরে যাওয়ার জন্য সংক্ষিপ্ত পথ। বর্তমানে রাবনাবাদ নদীতে ফেরি সার্ভিস রয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করতে রাবনাবাদ চ্যানেলে দুই লেন বিশিষ্ট ৮৮২ দশমিক ৮১ মিটার দৈর্ঘ্যের পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়। এটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিবছর ৮ শতাংশ হারে সড়কটির যান চলাচল বৃদ্ধি পাবে। এ সেতু নির্মাণ হলে বছরে প্রায় ৩৮ কোটি টাকার সাশ্রয় হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, লেবুখালী-বাউফল-গলাচিপা-আমড়াগাছিয়া সড়কের ৭০তম কিলোমিটারে রাবনাবাদ নদীর ওপর সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বরিশাল বিভাগীয় সদর ও পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপন।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ৮৮২ দশমিক ৮১ মিটার পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, ৭ দশমিক ৫৩ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ১৬০০ মিটার নদী শাসন, ১ দশমিক ৪ কিলোমিটার নতুন পেডমেন্ট নির্মাণ এবং একটি ব্রিজ টোল প্লাজা নির্মাণ।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, পটুয়াখালী জেলার সদর ও বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, আমতলী উপজেলা নদী দ্বারা বেষ্টিত। লেবুখালী-বাউফল-গলাচিপা-আমড়াগাছিয়া (জেড-৮৮০৬) সড়কটি ঢাকা (যাত্রাবাড়ী)-মাওয়া-ভাগ বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়কের ((এন-৬) পাগলা নমের স্থান হতে শুরু হয়ে বাউফল উপজেলার মধ্যে দিয়ে দশমিনা, গলাচিপা হয়ে পটুয়াখালী স্থাপন করেছে। সড়কটি বাউফল ও দশমিনা উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী জেলা সদরের যাতায়াতের সংক্ষিপ্ততম পথ। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখার স্বার্থে সড়কটির ৭০তম কিলোমিটারে অবস্থিত রাবনাবাদ নদীর উপর ফেরী সার্ভিস পরিচালিত হচ্ছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে রাবনাবাদ চ্যানেলে ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রশস্ত ২-পেন ৮৮২ দশমিক ৮১ মিটার দৈর্ঘ্যের পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়।
প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পটি বেশ কিছু কারণে সংশোধন করতে হয়েছে। তা না হলে দেখা যেত অনুমোদনের পরই আবার ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে। এছাড়া রেটশিডিউলের কারণেও কিছুটা ব্যয় বেড়েছে। তবে প্রকল্প গ্রহণের সময় অবশ্যই ফিজিবিলিটি যথাযথভাবে করা উচিত।
এমওএস/এমকেআর/এমএস