‘পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই, সচেতনতার বিকল্প নেই’
প্রযুক্তি ও উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য কীভাবে রাখা যায়, তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে জাতীয় সম্পদ প্রাচুর্য। সেগুলোও সঠিকভাবে ব্যবহারও আমরা করছি না। তাই নিজেরা সচেতন হতে হবে। পরিবেশ বাঁচানো বা রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পরিবেশ দূষণমুক্ত করতে হবে।
‘প্রথম জাতীয় পরিবেশ উৎসব’-এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথিরা এসব কথা বলেন। শনিবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের অডিটোরিয়ামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আরএফএল গ্রুপের টেল প্লাস্টিকের অর্থায়নে ও এনভাইরোনমেন্ট ওয়াচ, বুয়েটের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘ইয়ুথপ্রেনার নেটওয়ার্ক’।
অনুষ্ঠানে বুয়েটের অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান বলেন, ‘পরিবেশ নিয়ে আমরা গবেষণা করে থাকি। টেকনোলজি ও উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য কীভাবে বজায় রাখা যায়, তা নিয়ে কাজ করি। পরিবেশ নিয়ে শিশুদের মধ্যে এ ধরনের আয়োজন আগে দেখা যায়নি।’
ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাহনাজ সুলতানা বলেন, ‘বর্তমানে ডেঙ্গুর যে প্রাদুর্ভাব, এটা মূলত পরিবেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই নিজেরা সচেতন হতে হবে। আমাদের দেশে যেসব জাতীয় সম্পদ রয়েছে, সেগুলো আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করি না। ফলে পরিবেশ দূষণ হয়।’
তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পরিবেশ দূষণমুক্ত করতে হবে। দেশের যেসব শিশুরা এ ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে, তারা নিঃসন্দেহে পরিবেশসচেতন হয়ে বেড়ে উঠবে।’
আরএফএল গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক কামরুল হাসান বলেন, ‘আজকে যারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন, তারা সবাই পরিবেশবান্ধব মানুষ। পরিবেশ দূষণ করছে উন্নত বিশ্ব। আর এজন্য ভুগছি আমরা। আবার আমাদের দেশে পরিবেশ দূষণ করছি আমরা শিক্ষিতরাই।’
তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক পরিবেশ দূষণ করে না, প্লাস্টিকের যে কাঁচামাল তা পরিবেশকে দূষণ করে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে আমরা চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে আমরা মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছি। পরিবেশ বাঁচানো বা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদেরকেই পরিবেশ বাঁচাতে হবে। আজ পরিবেশ উৎসবে যারা এসেছে, তাদের বন্ধুরা যেন আগামীতে অংশ নেয়। আমরা এ আয়োজনে সবসময় পাশে থাকবো।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক বলেন, ‘পরিবেশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ধরনের আয়োজন ব্যতিক্রম। জাতীয় পরিবেশ উৎসবের এ প্রতিযোগিতায় যারা অংশ নিয়েছে, পরিবেশ নিয়ে তাদের যেকোনো মতামত জাগো নিউজে পাঠাতে পারবে। আমরা এর মধ্য থেকে ভালো মতামত ও লেখা প্রচার করার চেষ্টা করবো।’
পরিবেশ দূষণ থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ঢাকা জেলার উপ-পরিচালক বিরাজ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হলো প্লাস্টিক। প্লাস্টিককে যদি ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারি, তবেই পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্ত থাকতে পারবো।’
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর মতিঝিল ইউনিটের থানা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘আমরা যুবদের কল্যাণে কাজ করে থাকি। নানান ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহিত করি। দেশকে গড়ে তুলতে হলে শিশু ও যুবদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে গড়ে তুলতে হবে। এতে দেশ সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। নানা ধরনের প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে তারা দেশ গড়ার কাজে সম্পৃক্ত হবে।’
আরএফএল গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (সেলস) বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা পরিবেশসহ আরও ভালো কিছু নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই। বিশ্বের বুকে জানান দিতে চাই, এ ধরনের ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে।’
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তৃতা করেন ব্র্যাক এডুকেশন প্রোগ্রামের কনসালটেন্ট এবং ইয়ুথপ্রেনার নেটওয়ার্কের সভাপতি খন্দকার আবদুল্লাহ আল তাহমীদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির পর শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিবেশ বিষয়ে তাদের চিন্তাধারা তুলে ধরেছেন। এতে যারা অংশ নিয়েছেন ও সহযোগিতা করছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
গত আগস্টে ‘প্রথম জাতীয় পরিবেশ উৎসব ২০২২’-এর আয়োজন করা হয়। এতে ১৬ ইভেন্টে দুই হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ২৮১ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. আজহারুল ইসলাম খান, মহাপরিচালক (গ্রেড- ১), যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিরাজ চন্দ্র সরকার, উপ-পরিচালক, ঢাকা জেলা, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর; জনাব ফেরদৌসি বেগম, থানা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, মতিঝিল ইউনিট, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর; কামরুল হাসান, নির্বাহী পরিচালক, আরএফএল গ্রুপ; বশির উদ্দিন, ডেপুটি ম্যানেজার (সেলস), আরএফএল গ্রুপ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খন্দকার আবদুল্লাহ আল তাহমীদ, সভাপতি, ইয়ুথপ্রেনার নেটওয়ার্ক এবং কনসালটেন্ট, ব্র্যাক এডুকেশন প্রোগ্রাম ।
দ্বিতীয় পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন শাহনাজ সুলতানা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), ঢাকা জেলা। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিরাজ চন্দ্র সরকার, উপ-পরিচালক, ঢাকা জেলা, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর; কামরুল হাসান, নির্বাহী পরিচালক, আরএফএল গ্রুপ; বশির উদ্দিন, ডেপুটি ম্যানেজার (সেলস), আরএফএল গ্রুপ । অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান, পুরকৌশল বিভাগ, বুয়েট ।
প্রথম পর্বের প্রধান অতিথি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) আজহারুল ইসলাম খান বলেন, ‘যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সবসময় উদ্যোক্তাদের পরিবেশ বিষয়ক কার্যক্রমে উৎসাহিত করে। এই উৎসবে যারা পরিবেশ বান্ধব নানা ব্যবসায়িক উদ্যোগ নিয়ে এসেছো, তোমাদের উদ্যোগ গুলো প্রশংসনীয়।’
আরএসএম/এএএইচ/জেআইএম