ইপিজেড শ্রম আইন অনুমোদন
শ্রমিক সংগঠন করার অধিকার রেখে বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন- ২০১৬ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য স্থায়ী মজুরি বোর্ড প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এর অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, শ্রম আইন-২০১৩ ইপিজেডে (রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) প্রযোজ্য নয়। শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা বিধান করে নতুন আইনটি করা হয়েছে। আইনে ১৬টি অধ্যায় এবং ২০২টি ধারা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, আইন অনুযায়ী ইপিজেড শ্রমিকরা সংগঠন (ট্রেড ইউনিয়ন) করতে পারবেন। সংগঠনের নাম হবে- শ্রমিক কল্যাণ সমিতি। নাম ভিন্ন হলেও অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে এর কোনো পার্থক্য নেই। নামটি একটু শ্রুতিমধুর।
সচিব বলেন, কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে শ্রমিক প্রতিনিধিরা মজুরি, কর্মঘণ্টা, নিয়োগ ও নিয়োগের শর্ত, ধর্মঘটের অধিকার রক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে সরাসরি মালিকদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারবেন।
আইনে কল্যাণ সমিতি গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছে, সমিতি গঠন করতে ইপিজেডে শিল্প-কারখানার ৩০ শতাংশ শ্রমিককে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাতে হবে। এরপর এদের মধ্যে ভোট হবে। আবেদনকারী শ্রমিকদের ৫০ শতাংশ সমিতি করার জন্য ভোট দিলে সমিতি গঠনের অনুমোদন দেয়া হবে। সমিতিকে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে।
শফিউল আলম বলেন, দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ অধিকার নতুন আইনে আনা হয়েছে। সরকারের মূল্যায়ন হলো আমরা যদি ইপিজেডগুলোতে কল্যাণ সমিতি খুলে দেই তবে শিল্প-কারখানাগুলোতে বড় ধরনের কোনো ঝামেলা হবে না।
এর আগে ২০১৪ সালের ৭ জুলাই আইনটিতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আইনের খসড়াটি উপস্থাপন করেছে।
খসড়া আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এতে শ্রমিকদের নিয়োগ এবং চাকরির শর্তাবলী, প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা, স্বাস্থ্য রক্ষা, কাজের পরিবেশ, নিরাপত্তা ও কল্যাণমূলক ব্যবস্থা, কর্মঘণ্টা এবং ছুটি, মজুরি ও মজুরি পরিশোধ, ইপিজেড মজুরি বোর্ড, দুর্ঘটনাজনিত কারণে ও জখমের জন্য ক্ষতিপূরণ, শ্রমিক কল্যাণ সমিতি, মীমাংসা ও সালিশ, ইপিজেড শ্রম আদালত এবং আপিলাত ট্রাইব্যুনাল, দণ্ড ও দণ্ড প্রদানের পদ্ধতির বিধান, ভবিষ্যৎ তহবিলের বিধান রাখা হয়েছে।
প্রসূতিকালীন মোট ১৬ সপ্তাহের ছুটির কথা আইনে বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি মাতৃত্বের আগে ৮ সপ্তাহ ও পরে ৮ সপ্তাহ। দুর্ঘটনাজনিত কারণে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ইপিজেডের বাইরের শ্রমিকদের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুজনিত কারণে ক্ষতিপূরণ দুই লাখ টাকা, স্থায়ী ও সম্পূর্ণ অক্ষমতার ক্ষতিপূরণ দুই লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী শ্রমিকের বয়স ৬০ বছর হলে, চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলেও কেউ চাইলে অবসর নিতে পারবেন। অবসরের পর শ্রমিকরা প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা পাবেন। এক্ষেত্রে প্রত্যেক পূর্ণ বছরের চাকরির জন্য ৩০ দিনের মূল্য মজুরি প্রদান করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইপিজেড শ্রম আইনে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য স্থায়ী মজুরি বোর্ড প্রতিষ্ঠার বিধান রাখা হয়েছে। এখন ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে ইপিজেডের শ্রমিকদের এ মজুরি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
বোর্ডে শ্রমিকদের প্রতিনিধি, বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি ও নিরপেক্ষ উৎস থেকে প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। বেপজার (বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) নির্বাহী চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এ বোর্ডে সদস্য সংখ্যা ১২ জন হবে বলেও জানান শফিউল আলম।
বিভিন্ন দেশ ও বিদেশি সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন করার প্রস্তাব ছিল, সে জন্য কি আইনে এ বিধান রাখা হয়েছে- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘তা অনেকটা বলতে পারেন। আইএলওসহ (আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা) আন্তর্জাতিক এজেন্সিগুলোরও এ দাবি ছিল। এছাড়া শ্রমিকদের সুন্দর কাজের পরিবেশ নিশ্চিত, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি আমাদের সংবিধান ও আইনে রয়েছে। শুধু দাতাদের চাহিদা পরিপ্রেক্ষিতে এটা করেছি তা নয়।
নতুন আইনের ফলে জিএসপি ফিরে পাওয়া সহজ হবে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের বার্গেইনিং স্ট্রেনথটা (দর কষাকষির সামর্থ্য) তখন বাড়বে। আমরা বলতে পারবো ইপিজেডে আমরা শ্রমবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছি।
এসএ/এনএফ/এবিএস