ঢাকায় খুন হয়ে থাকতে পারেন বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন: ডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:০৩ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০২২
ফারদিন নূর পরশ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৪) রাজধানী ঢাকার কোনো এক এলাকায় খুন হতে পারেন বলে ধারণা প্রকাশ করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

শনিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন ধারণার কথা জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, ফারদিনের মোবাইলের ডাটা এনালাইসিস ও বিভিন্ন জায়গায় সে যার সঙ্গে কথা বলেছে সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে ঢাকা শহরের কোনো এক জায়াগায় খুন হতে পারে সে। মোবাইলের লোকেশনে আমরা নারায়ণগঞ্জও পেয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে তদন্তের স্বার্থে কংক্রিট কিছু বলতে পারছি না।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আপনারা জানেন ঢাকা কিংবা ঢাকার বাইরে কোনো ঘটনা ঘটলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দক্ষ টিম কাজ করে। অনেক সময় লেগেছে, কিন্তু ক্লু উদঘাটন করেছি- এমন ঘটনা এর আগেও অনেক ঘটেছে। নিহতের (ফারদিনের) বাবা প্রথমে একটি জিডি করেছিলেন, পরবর্তী সময়ে তিনি মামলা করেন। মামলায় এক নম্বর আসামি বুশরাকে গ্রেফতার করেছি। পাশাপাশি মামলায় তার নাম এলেও আমরা এখনই মনে করছি না যে সে-ই দায়ী। সে রিমান্ডে এসেছে, আমরা তার সঙ্গে কথা বলছি।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরে ফারদিন যেখানে যেখানে গিয়েছিলেন আমরা বিভিন্ন টেকনিক্যাল মাধ্যম ব্যবহার করে সেসব স্থান খুঁজে বের করেছি। কংক্রিট কোনো তথ্য বের করতে পারিনি বলে এখনই কিছু বলছি না। তবে আমাদের কাজ চলছে। ডিবির টিম রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে।

এ খুনের নেপথ্যে মাদক সংক্রান্ত কোনো বিষয় আছে কি না- জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন বলন, আমরা এ কথা এখনই বলছি না যে মাদকের কারণে খুন হয়েছে। অথবা এটাও বলছি না, মামলার এক নম্বর আসামি যাকে আমরা গ্রেফতার করেছি (বুশরা) সে-ই খুন করেছে। আমরা পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করছি।

 

jagonews24

রাজধানীর ডেমরার চরপাড়া বস্তিতে ডিবির অভিযান চলছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে শুধু চরপাড়া বস্তি কেন, আমরা নারায়ণগঞ্জ গিয়েছি, ডেমরা ও খিলগাঁওসহ সব জায়গায় ডিবির টিম কাজ করছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে ফারদিন মাদকাসক্ত ছিলেন। এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছে আছে কি না- জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, ডিবির পক্ষ থেকে আমরা কখনোই বলিনি সে (ফারদিন) চরপাড়া গিয়ে মাদকের কারণে মারা গেছে। আমাদের টিম সবগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করছে। প্রকৃতপক্ষে ঘটনার মূল রহস্য আমরা এখনো উদঘাটন করতে পারিনি।

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ গত ৫ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ওইদিনই রাজধানীর রামপুরা থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন। নিখোঁজের দুদিন পর গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ।

এরপরই তার দুই বন্ধু বুশরা ও শীর্ষ সংশপ্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরপর গত বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) রামপুরার বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইদিনই ফারদিন হত্যা মামলায় তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। বুশরা রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বুধবার (৯ নভেম্বর) দিনগত রাতে ফারদিনের বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে ‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে রামপুরা থানায় মামলা করেন ফারদিনের বাবা সাংবাদিক নূর উদ্দিন রানা।

jagonews24

ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের পরদিন গত ৮ নভেম্বর ময়নাতদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শেখ ফরহাদ বলেছিলেন, ময়নাতদন্তে আমরা দেখতে পেয়েছি, ফারদিনের মাথায় এবং বুকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে সেই আঘাত কোনো ধারালো অস্ত্রের নয়। আঘাতের চিহ্ন দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি হত্যাকাণ্ড। পুলিশের চাহিদা ও অধিকতর তথ্যের জন্য তথ্য-উপাত্ত ও আলামত মহাখালী ভিসিআরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পেলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে ফারদিনকে কীভাবে খুন করা হয়েছে।

ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য রিভারাইন’ এর সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার নয়ামাটিতে। তিন ভাইয়ের মধ্যে ফারদিন ছিলেন সবার বড়। তার মেজ ভাই আবদুল্লাহ নূর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ছোট ভাই তামিম নূর এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।

ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার পাঁচ দিন পার হলেও এখনো হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। রহস্য উন্মোচনে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, এলিট ফোর্স র‍্যাব, সিআইডিসহ একাধিক ইউনিট কাজ করছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকার শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ফারদিনের সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেও কাজ করছে পুলিশ।

তবে এরই মধ্যে পুলিশ জানিয়েছে, ফারদিনের হত্যাকারী টেকনোলজিক্যালি খুবই স্মার্ট।

টিটি/এমকেআর/এএসএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।