উদ্বোধন ডিসেম্বরে

এগিয়ে চলেছে মেট্রোরেলের লিফট-এস্কেলেটরের কাজ

মফিজুল সাদিক
মফিজুল সাদিক মফিজুল সাদিক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২২ এএম, ০৪ নভেম্বর ২০২২
তিন ধরনের ব্যবস্থা থাকবে মেট্রোরেলে, ছবি: মাহবুব আলম

বহুল কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল উদ্বোধনের আর মাত্র এক মাস বাকি। মেট্রোরেলে চড়লে যাত্রীদের প্রথমে স্টেশনে আসতে হবে। যেকোনো গণপরিবহনে আসা যাবে মেট্রোরেল স্টেশনে। যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে তিন ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সিঁড়ি ও এস্কেলেটরের পাশাপাশি বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য লিফটের ব্যবস্থাও আছে।

উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রতিটি স্টেশন তিনতলাবিশিষ্ট। দ্বিতীয় তলায় কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষ, টিকিট কাউন্টার ও ওয়েটিং রুম। তৃতীয় তলায় প্ল্যাটফর্ম। যাত্রীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য দ্বিতীয় তলায় টিকিট কাটতে হবে। এরইমধ্যে স্টেশন ও প্ল্যাটফার্মের কাজ শেষ হয়েছে।

আরও পড়ুন: আসছে সাড়ে ৩০০ সদস্যের বিশেষ ইউনিট ‘এমআরটি পুলিশ’

গত বুধবার (০২ নভেম্বর) উত্তরা থেকে আগারগাঁও রুটে চলাচল করেছে মেট্রোরেল। ট্রায়ালরান হিসেবে প্রতিদিনই চলাচল করছে মেট্রোরেল। তবে লিফট, এস্কেলেটর ও লিফটের কাজ এখনও শেষ হয়নি। অথচ মেট্রোরেল ডিসেম্বর মাসে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে হাতে এক মাস সময় আছে; এই সময়ে সিঁড়ি, লিফট ও এস্কেলেটরের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

metro4

যাত্রীদের টিকিট কাটার ব্যবস্থা থাকবে দ্বিতীয় তলায়-ছবি জাগো নিউজ

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আশা করছি ডিসেম্বর মাসে মেট্রোরেল উদ্বোধন করতে পারবো। সেই টার্গেট মাথায় নিয়ে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছি।

এখনও অনেক স্টেশনে লিফট ও এস্কেলেটরের কাজ শেষ হয়নি! এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ির কাঠামোগত কাজ হয়েছে। অনেক জায়গায় এগুলো বসে গেছে। হাতে যে সময় আছে সেই সময়ে কাজ শতভাগ সম্পন্ন হবে।

আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০, সর্বোচ্চ ১০০ টাকা

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনের লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ির কাজ এখনও বাকি। এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। স্টেশনে ওঠা-নামার জন্য স্টেশনের ফুটপাতের কাজও বাকি। ৭ ও ৮ নম্বর স্টেশনের কাজ এখনও অনেক বাকি। দুটি স্টেশনের কাজ সম্পন্ন ছাড়াই উদ্বোধন করতে হবে মেট্রোরেল।

metro4

মেট্রোরেলের টিকিটের মূল্যতালিকা-ছবি জাগো নিউজ

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্যাকেজ-০৩ ও ০৪ এর আওতায় উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই দুই প্যাকেজের কাজ ১ আগস্ট ২০১৭ তারিখ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সম্পূর্ণ ভায়াডাক্ট এবং স্টেশনসমূহের রুফ সিট পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ছয়টি স্টেশনের এন্ট্রি এক্সিট নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে এবং তিনটি স্টেশনের এন্ট্রি এক্সিট নির্মাণকাজ চলমান। ৯টি স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ও কনকর্সে লাইট স্থাপন করা হয়েছে। উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশনের মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড প্লাম্বিং, আর্কিটেকচারাল, ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম, ডিজেল জেনারেটর, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলমান। এই প্যাকেজ দুটির সমন্বিত বাস্তব অগ্রগতি ৯৬ দশমিক ০৫ শতাংশ। তবে অনেক স্টেশনের লিফট, সিঁড়ি ও এস্কেলেটরের কাজ সমাপ্ত হয়নি।

আরও পড়ুন: ফজরের পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) প্যাকেজ-০৫ এর আওতায় আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন নির্মাণকাজ রয়েছে। এই প্যাকেজের বাস্তব কাজ ০১ আগস্ট ২০১৮ তারিখ শুরু করা হয়েছে। এরই মধ্যে ভায়াডাক্ট ও স্টেশনসমূহের প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই প্যাকেজের আওতাধীন সব মেট্রোরেল স্টেশনসমূহের এন্ট্রি এক্সিট, ম্টিল রুফ স্ট্র্যাকচার স্থাপন, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড প্লানিং ও আর্কিটেকচারাল কাজ চলমান। ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার স্টেশনে রুফ স্টিল স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্যাকেজের সার্বিক বাস্তব অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। উত্তরা ডিপো এলাকায় নির্মিত মেট্রোরেল এক্সিবিউশন সেন্টার গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ উদ্বোধন করা হয়। দর্শণার্থীরা নিয়মিত মেট্রোরেল এক্সিবিউশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার পরিদর্শন করছেন।

metro4

উদ্বোধনের অপেক্ষায় মেট্রোরেল- ছবি জাগো নিউজ

ডিসেম্বরে যাত্রীসহ পরিচালনায় নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ট্রয়ালরান হিসেবে মেট্রোরেল চলাচল করছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও রুটে। মেট্রোরেল প্রকল্পের ম্যানেজার এবিএম আরিফুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিনিয়ত ট্রায়াল হিসেবে মেট্রোরেল পরিচালনা করা হচ্ছে। এটাকে ইন্ডিকেটর টেস্ট বলে। শিডিউল অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। সাতটা প্যাকেজে কাজ করে হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কাজ করা হচ্ছে। যাতে চূড়ান্ত পর্যায়ে যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল পরিচালনায় কোনো সমস্যা না হয়।’

আরও পড়ুন: লোডশেডিংয়ের বাইরে থাকবে মেট্রোরেল

ডিএমটিসিএল জানায়, সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ অনুসরণে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে উত্তরা উত্তর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ পর্যন্ত সার্বিক গড় অগ্রগতি ৮৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ২২ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৮৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুসরণে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত করার জন্য নকশা পর্যন্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই অংশের পরিষেবা যাচাই এর কাজ শুরু করা হয়েছে।

এমওএস/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।