রাঙামাটিতে শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের কাছ থেকে ব্যাপক চাঁদা ও ঘুষ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অন্যত্র বদলির জন্য সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, বর্তমানে জেলায় বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। এসব শিক্ষকদের কাছ থেকে চাকরি স্থায়ীকরণের নামে শিক্ষক প্রতি এক হাজার ও সুবিধাজনক জায়গায় পোস্টিং দিতে বা বদলির জন্য মোটা অংকের ঘুষ আদায় করছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সালেহ। সম্প্রতি ভুক্তভোগী শিক্ষকদের তোলা এমন অভিযোগে গোটা জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন অভিযুক্ত এই শিক্ষা কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষকদের অনেকে অভিযোগ করে জানিয়েছেন, জেলায় বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় নিয়ে একটি বড় আকারের মিশনে নেমেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। এর নেতৃত্ব আছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। তিনি টাকা আদায়ে নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
তারা বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সালেহ রাঙামাটিতে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন অজুহাতে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কর্মরত শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে অর্থ আদায় শুরু করেন। তিনি সম্প্রতি শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য একটি নতুন পদ্ধতি বের করেছেন । সেটি হল সব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ-থেকে চাকরি স্থায়ীকরণের নামে শিক্ষক প্রতি ১ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায়। তার এমন নির্দেশে স্ব স্ব উপজেলার শিক্ষা অফিসাররা গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের সমন্বয় সভায় জানুয়ারি মাসের মধ্যে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা করে জমা দিতে বলেন। ইতোমধ্যে জেলার বরকল, বিলাইছড়ি, বাঘাইছড়ি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষকরা স্ব স্ব উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে নির্দেশনা হারে টাকা জমা দিয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা।
জানা যায়, সদ্য জাতীয়করণে অন্তর্ভুক্ত হওয়া জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য নিবন্ধন শুরু করেন। এই প্রক্রিয়ায় জেলার ৬১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন প্রায় ৩ হাজার শিক্ষক। এতে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে আদায় করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সালেহ। এছাড়া কোনো শিক্ষককে সুবিধাজনক জায়গায় পোস্টিং দিতেও মোটা অংকের ঘুষ নেন তিনি। যারা টাকা দেবেন না তাদের চাকরি নিয়মিতকরণ না হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে কোনো রকম পদোন্নতি হবে না মর্মেও শিক্ষকদের হুমকি দেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট উপজেলার শিক্ষা অফিসাররা ইতোমধ্যে শিক্ষকদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছেন বলে শিক্ষকরা জানান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অমল কুমার চাকমা শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে প্রতিটি শিক্ষকের কাছ থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যে হারে টাকা আদায় করছেন তাতে বেতনের একটি অংশ খোয়া যাচ্ছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে কোনো কাজে স্বাক্ষর নিতে গেলেই টাকা লাগে। টাকা ছাড়া তিনি কিছুই বোঝেন না। চাকরি স্থায়ীকরণের নামে শিক্ষক প্রতি ১ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগে অবিলম্বে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবিও জানান।
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু জাফর মো. সালেহ সব অভিযোগ অস্বীকার করে টেলিফোনে বলেন, তিনি চাকরি স্থায়ীকরণের নামে কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে কোনো টাকা নেন নি। এ ধরনের কোনো নির্দেশনা উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের দেননি তিনি। এটি তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র বলেও দাবি করেন তিনি।
অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে জেলা পরিষদের বদলির সুপারিশ বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা হলে তার জন্য খুবই ভালো হবে।
এ বিষয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, বর্তমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমাদের কোনো কথাই শোনেন না। তাকে বদলির জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে শিগগিরই চিঠি দেয়া হবে। এর আগে তিনি একটি সভায় জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা ও জেলা পরিষদ সম্পর্কে কটুক্তি করেছেন। এতে আমরা তাকে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দেয়। কিন্তু তার কোনো জবাব দেননি তিনি।
তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় চাকরি করতে এলে পার্বত্য শান্তি চুক্তির আইন অনুযায়ী পরিচালিত পার্বত্য জেলা পরিষদের ক্ষমতা এবং এখানাকার বাস্তবতা সম্পর্কে জানা থাকা দরকার। কিন্তু বর্তমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সে ব্যাপারে কিছুই বোঝার চেষ্টা করছেন না। তিনি নিজের খেয়াল খুশিমতো শিক্ষকদের বদলি করছেন এবং তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ আদায় করছেন বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আছে। তার এখানে চাকরি করার কোনো যোগ্যতা নেই। তাই তাকে বদলির জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠাচ্ছি।
সুশীল প্রসাদ চাকমা/এসএস/এবিএস