মশা মারার সক্ষমতা নেই মশক নিবারণী অধিদপ্তরের

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০৭:৪১ পিএম, ২৬ অক্টোবর ২০২২

#১৯৪৮ সালে ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকায় মশক নিবারণী দপ্তর চালু করা হয়েছিল
#১৯৮২ সালে এই দপ্তরটি নিজেদের অধীনে নেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ
#এখন মশক নিবারণী দপ্তরের সব কর্মী সিটি করপোরেশনের অধীনে কাজ করে

ঢাকা শহরের মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকায় রয়েছে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ‘ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর’। কিন্তু সেই দপ্তরের মশা মারার সক্ষমতা নেই। এক ধরনের পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে রয়েছে সংস্থাটি। ফলে এই দপ্তরের চারপাশেই মশার প্রজনস্থলের পরিবেশ রয়েছে।

তবে মশক নিবারণী দপ্তরের সংশ্লিষ্টদের দাবি, তাদের মশক কর্মীরা সিটি করপোরেশনের মশা মারার কাজে খাটছেন। বাকিরা দপ্তরে বসেন। মশক কর্মীদের ছুটি, বেতন-ভাতার হিসাব-নিকাশ করেন। এর বাইরে তাদের কোনো কাজ নেই।

সম্প্রতি ঢাকায় অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এই সংখ্যায় ঢাকেশ্বরী মন্দির তথা লালবাগের প্রচুর মানুষ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখন ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকায় মশক নিবারণী দপ্তর বা সাইনবোর্ডটি দেখলেই গা জ্বলে। সরকার তাদের বসিয়ে বেতন-ভাতা দিচ্ছে। অথচ মশার উপদ্রবে নগরের মানুষ অতিষ্ঠ।

আরও পড়ুন: আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, হাসপাতালে মশারি ব্যবহার ঢিলেঢালা 

 

ঢাকেশ্বরী রোডের বাসিন্দা মহসিন খান বলেন, দিন যতো যাচ্ছে, নগরে মশার উপদ্রব ততোই বাড়ছে। মশক নিবারণী দপ্তরের কোনো কার্যক্রমই দেখা যাচ্ছে না। ভবনটির সামনে দিয়ে গেলে পরিত্যক্ত মনে নয়। আর গা জ্বলে। অথচ শহরে হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, মশক নিবারণী দপ্তরের জনবল দিয়ে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। এই দায়িত্বটা মশক নিবারণী দপ্তরেরই থাকা দরকার ছিল। তা হলে এককভাবে তারা সারা বছরই মশা নিয়ে কাজ করতে পারতো। এখন তারা মশা না মেরে বসে বসে মাছি মারছে।

মশক নিবারণী দপ্তর সূত্র জানায়, ঢাকায় মশা নির্মূলের লক্ষ্য ১৯৪৮ সালে মশক নিবারণী দপ্তর চালু করা হয়েছিল। তখন ৩৩৮ জনের মতো লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭২ সালে তাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে নেওয়া হয়। তারপর মশা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে অনেক কাজ হয়। পরে ১৯৮১-৮২ সালে এই বিভাগটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে যায় সরকার। এতে দপ্তরটি ঢাকা সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে চলে আসে। তবে বেতন-ভাতা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেই হয়। এমন এলোমেলোর কারণে যে কাজে এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।

jagonews24

আরও পড়ুন: সিট খালি নেই ডেঙ্গু ওয়ার্ডে, মশারি ছাড়াই থাকছে রোগীরা 

রোববার (২৩ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের বিপরীত পাশে রাস্তার ওপর বড় একটি সাইনবোর্ড। এই বোর্ডে লেখা ‘মশক নিবারণী দপ্তর’। লোহার গেট দিয়ে ঢুকে দেখা যায়, ভেতরে সুনসান নীরবতা। দপ্তরের প্রবেশপথের দুই পাশে শত শত পুরোনো ও মরিচা ধরা ড্রামের স্তূপ। এসব ড্রামের চারপাশে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে। যেন মশার বংশবিস্তারের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। এগুলো পেরিয়ে সামনে গেলেই দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। দোতলায় ডানে-বামে সম্মেলন, প্রসাধনসহ ১০টি কক্ষ। এর মধ্যে ভান্ডাররক্ষক, কোষাধ্যক্ষ এবং হিসাবরক্ষককের কক্ষটি খোলা দেখা গেলো।

এই ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ বসেন স্টোরকিপার গিয়াসউদ্দিন। ভবনটি এখন গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মশক নিবারণী দপ্তরের ২৮১ জন কর্মী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৫৪ জন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন। বাকি ১২ জন মশক নিবারণী দপ্তরে কাজ করেন। মাস দুয়েক আগে ১৫ জন মশক সুপারভাইজারকে মশক নিবারণী দপ্তরে ফেরত পাঠিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তাদের এখন কাজ নেই। বসে বসে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে ঢাকায় ম্যালেরিয়ার বিস্তার ঘটেছিল। তখন ম্যালেরিয়া মোকাবিলা করতে ঢাকায় মশা মারার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। তখন সংস্থাটি বেশ জমজমাট ছিল। অনেক লোক কাজ করতেন। মশা নিয়ন্ত্রণে বেশ ভালো ভূমিকা পালন করতো।

আরও পড়ুন: ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় চালু হয়েছে ৯৮ শয্যা 

মশক নিবারণী দপ্তরে ২৮ বছর ধরে চাকরি করেন মশক কর্মী মাজেদ। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা কাজ করেন। দিনে দুইবেলা (সকাল-বিকেল) তারা মশার ওষুধ ছিটান। তবে মশক নিবারণী দপ্তরটিই স্বয়ংসম্পূর্ণ করা দরকার। তা হলে মশা মারা নিয়ে টানাহেঁচড়া হবে না।

এই অফিসের কর্মীরা বেতন পান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে। জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. শামসুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এখন দুই সিটির আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে এই দপ্তরের লোকজন কাজ করছেন। এর বাইরে তিনি আর মন্তব্য করতে চাননি।

অথচ দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়তই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শনাক্তের নতুন রেকর্ড প্রতিদিনই আগের রেকর্ড ভাঙছে। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ১১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এমএমএ/এসএইচএস/জিকেএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।