ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং
ঝড়-বৃষ্টিতে গণপরিবহন সংকট, যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪৭ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০২২
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ আঘাত হানা শুরু করেছে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে। এর প্রভাবে রাজধানী ঢাকায়ও সারাদিন হচ্ছে বৃষ্টি। সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টির সঙ্গে বইছে ঝড়ো হাওয়া। বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক যানজট। গুলশান, বনানী, প্রগতি সরণি, বিমানবন্দর, উত্তরা সড়ক অনেকটা স্থবির। দেখা দিয়েছে গণপরিবহন সংকট। বাড়তি টাকা দিয়েও মিলছে না সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা। এতে বিপাকে পড়েছেন ঘরমুখী মানুষ।
ভোর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থাকলেও সোমবার (২৪ অক্টোবর) দিনের শেষ ভাগে এসে তা বাড়তে থাকে। হালকা বাতাস রাত গড়াতেই পরিণত হয় ঝড়ো হাওয়ায়। কোথাও কোথাও বৃষ্টির পানি জমে অচল হয়ে পড়েছে যান চলাচল। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ১২৫ মিলিমিটার।
এদিকে নতুন বাজারে রাস্তার ওপর গাছ পড়ে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এয়ারপোর্ট থেকে বনানী রুটের যাত্রীরা তীব্র যানজটের কথা জানিয়েছেন। গুগল ম্যাপ বলছে, বাড্ডা থেকে নতুনবাজার হয়ে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত, বনানী থেকে বিমানবন্দর, উত্তরা থেকে টঙ্গী-গাজীপুর, তেজগাঁও, শ্যামলী, বিজয় সরণি প্রভৃতি এলাকায় তীব্র যানজট রয়েছে।
ট্রাফিক অ্যালার্ট গ্রুপে ভিডিও ও ছবি শেয়ার করে মিরপুর, ধানমন্ডি, গ্রিনরোড, শান্তিনগর প্রভৃতি এলাকার পথচারীরা পানি জমে থাকার খবর জানিয়েছেন। এতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে যান চলাচলে।
সড়কে গণপরিবহন কম থাকায় বিপাকে পড়ছেন ঘরে ফেরা যাত্রীরা। ব্যক্তিগত গাড়ি প্রচুর দেখা যাচ্ছে। তবে সংকট রাইড শেয়ারিংয়ের বাহন ও সিএনজি অটোরিকশার। পাওয়া গেলেও ভাড়া চাইছে কয়েকগুণ। এমনটি জানান ভুক্তভোগীরা।
বনানী থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যাচ্ছিলেন ফাহিম রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সাড়ে ৭টার দিকে বনানী থেকে রওয়ানা দিয়েছি। দুই ঘণ্টায়ও বসুন্ধরা পৌঁছাতে পারিনি। তীব্র যানজট।
রেজবীন নিনা নামে একজন ট্রাফিক অ্যালার্ট গ্রুপে লিখেছেন, ঢাকাজুড়ে ভয়ংকর যানজট, ঢাকাকে এড়িয়ে চলুন!
রাজীব হাসান লিখেছেন, ফ্লাইওভার থেকে নেমে ইসিবি চত্বরের আগে কয়েকটি গাছ উপড়ে পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে তীব্র জ্যাম লেগে আছে। যারা উত্তরা, কুড়িল, বা বনানী মহাখালী থেকে মাটিকাটা ফ্লাইওভার হয়ে মিরপুর যাবেন তারা একটু চেক করে রওনা দিন।
অনেকে আবার গণপরিবহন না পেয়ে রাইড শেয়ারিংয়ের জন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। নাফিস জোবায়ের লিখেছেন, ‘গুলশান ১ থেকে কেউ কার/মাইক্রোতে জিগাতলা/ধানমন্ডির দিকে রাইড শেয়ার করে যাবেন? অফিস থেকে বের হতে পারছি না। কোনো সিএনজি বা গাড়ি নেই!’
শিশির রহমান লিখেছেন, ‘বৃষ্টি ঢাকার মফস্বল এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের জন্য এক আতঙ্কের নাম। ডাবল ভাড়া দিয়েও অটো/রিকশা পাওয়া যায় না এবং মানুষ হেঁটে যাবে সেই উপায়ও নাই, রাস্তায় হাঁটু সমান ড্রেনের ময়লা পানি।’
এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ বাংলাদেশের উপকূলের ১৭০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেতের পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হচ্ছে।
একই সঙ্গে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য ৭ নম্বর বিপৎসংকেত বহাল রাখা হয়েছে। বহাল রাখা হয়েছে কক্সবাজার বন্দরের ৬ নম্বর বিপৎসংকেতও।
ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার মধ্যরাত বা মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোর নাগাদ ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে। এরই মধ্যে ‘সিত্রাং’ এর অগ্রভাগের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ প্রায় সারাদেশে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় বয়ে যাচ্ছে ঝোড়ো হাওয়া।
এএসএ/এএসএম