সুন্দরবনে পর্যটক ভোগান্তি


প্রকাশিত: ০২:৫৪ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৪

ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। সুন্দরবনের আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে ৫ হাজার আটশ` বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশের। চার শতাধিক রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ৩০ হাজারেরও বেশি চিত্রা হরিণ, দেশীয় ও পরিযায়ী মিলে প্রায় ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৩৩০ প্রজাতির গাছপালাসহ অসংখ্য পশুপাখি আর মাছের উপস্থিতি সুন্দরবনকে করেছে অনন্য। এসব পরিসংখ্যানই জানিয়ে দেয় সুন্দরবনের পর্যটন সম্ভাবনা। কিন্তু তার পরও নানা প্রতিবন্ধকতায় আটকে আছে সুন্দরবনের পর্যটন খাতের বিকাশ। ফলে সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটকদের দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনা পোহাতেই হয়। এখানে নেই উন্নত যাতায়াত, মানসম্মত আবাসন, চিকিৎসা, বিশুদ্ধ পানি ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়েই সুন্দরবনের অবস্থান। পূর্ব ও পশ্চিম দুটি বিভাগের অধীনে চারটি প্রশাসনিক রেঞ্জে ভাগ করা হয়েছে সুন্দরবনকে। রেঞ্জগুলো হলো- চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও সাতক্ষীরা। শরণখোলা রেঞ্জের অধীনে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো হলো কটকা, কচিখালী, ডিমের চর, পক্ষীর চর ও তিনকোনা। খুলনা রেঞ্জের অধীনে পর্যটন কেন্দ্রগুলো হলো হিরণ পয়েন্ট ও শিবসা। চাঁদপাই রেঞ্জের অধীনে রয়েছে দুবলার চর, করমজল, লাউডুব ও হাড়বাড়িয়া। সুন্দরবন থেকে দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে তিমি আর ডলফিনের এক রাজ্যের নাম সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরই সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এক লাখ ১৭ হাজার পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সুন্দরবন ভ্রমণে যান এক লাখ ৪০ হাজার ৩৭ জন পর্যটক। তবে টানা হরতাল-অবরোধের কারণে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পর্যটকের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় এক লাখ ৫৪০ জনে। পর্যটকদের মধ্যে রয়েছেন দেশি-বিদেশিরাও। পর্যটন খাত থেকে বন বিভাগ রাজস্ব আয় করলেও পর্যটকদের জন্য চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। দুটি ভাসমান হাসপাতাল তৈরির প্রস্তাব দীর্ঘদিন ধরে ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসা করাও সম্ভব হয় না।

সুন্দরবনে যাতায়াতের জন্য স্বল্প খরচের নিরাপদ যান নেই। পর্যটকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিটনেসবিহীন জালি বোটে উঠতে বাধ্য হন। এছাড়া কোনো নীতিমালা না থাকার ইচ্ছামতো সুযোগ নেন ট্যুর অপারেটররা। তারা পর্যটকদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করেন। তিন দিনের ভ্রমণে কেউ ৫-৬ হাজার আবার কেউবা ১০-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সেই উদ্যোগ আর কার্যকর হয়নি। সম্প্রতি সুন্দরবন ঘুরে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শুধু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে সুন্দরবনের পর্যটন খাত বিকশিত হতে পারছে না। অথচ সুন্দরবন যদি থাইল্যান্ড বা বিশ্বের অন্য দেশে হতো, তাহলে তারা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করত।

এদিকে, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আযম ডেভিড বলেন, সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় পর্যটকরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। বিশুদ্ধ পানির সংকটও প্রকট। তিনি জানান, পর্যটকদের জন্য আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদেরকে লঞ্চ, বড় ট্রলার বা জালি বোটের মধ্যেই রাত কাটাতে হয়। যে উডেন ট্রেইল রয়েছে তার অবস্থা নাজুক। কাঠের তৈরি ওয়াচ টাওয়ারগুলোও নড়বড়ে। এছাড়া ওয়াচ টাওয়ারের সংখ্যাও কম।

সুন্দরবন ট্যুরিজমের স্বত্বাধিকারী মো. এনামুল হক ও রেইনবো ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী শেখ আবদুল কুদ্দুস বলেন, সুন্দরবনে পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া লঞ্চ বেঁধে রাখার ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে মাঝনদীতে লঞ্চ নোঙর করে রাখতে হয়। তাই পর্যটকদের কাদার মধ্য দিয়ে হেঁটে ওপরে যেতে হয়। তাছাড়া বনের মধ্যে বাথরুমের কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি সুন্দরবনে পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাজুক। প্রতিটি লঞ্চে মাত্র দু`জন করে বনরক্ষী দেওয়া হয়।

অন্যদিকে এসব সমস্যা ও অভিযোগের ব্যাপারে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের ডিএফও জহির উদ্দিন আহমেদ জানান, পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উডেন ট্রেইলগুলো মেরামত করা হচ্ছে। নীলকমল ও কলাগাছিয়া এলাকায় একটি করে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে। সূত্র : সমকাল

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।