ডেঙ্গু

মশা মারতে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ নিয়ে নামছে ডিএনসিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১৯ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০২২
ঢাকায় বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে

দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ছেই। প্রতিদিন আক্রান্তের সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু। রাজধানী ঢাকার অবস্থা সবচেয়ে বেশি নাজুক। সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একদিনে রেকর্ড ৮৫৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই ঢাকার দুই সিটি (উত্তর ও দক্ষিণ) করপোরেশনের বাসিন্দা। এ অবস্থায় এডিস মশার লার্ভা ও উড়ন্ত মশা নিধনের দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞরা।

এরই ধারাবাহিকতায় ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ মোকাবিলায় আগামীকাল মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে মশক নিধনে সাতদিনব্যাপী ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ঢাকা উত্তর করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডেঙ্গুতে তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড বা এলাকাগুলোতে এ কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে।

ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ নগরের মশক নিধনে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ বিভাগের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান সোমবার জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, এডিশ মশা নিধনে নানা কর্মসূচি ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার থেকে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ চলবে।

jagonews24

তিনি বলেন, এডিশ মশা সাধারণত বাসাবাড়ির ভেতর বা আঙিনায় জন্মায়। যেখানে সিটি করপোরেশনের লোকজনের যাওয়ার খুব বেশি সুযোগ থাকে না। তাই নিজ উদ্যোগে বাড়ি মালিক বা বাসিন্দাদের বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখতে হবে। কোনো পাত্রে যেন তিনদিনের বেশি বৃষ্টির পানি জমে না থাকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা জাগো নিউজকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার এডিশ মশা নিধনে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরও প্রচুর মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ জ্বর থেকে বাচঁতে নাগরিকদেরও করণীয় রয়েছে। প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন থাকতে হবে।

এদিকে সোমবার (১৭ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৬ অক্টোবর দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৮৫৫ ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় এ রেডর্ক ছাড়িয়ে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা পৌঁছেছে ৮৫৭ জনে। বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৮৫৭ জনের মধ্যে ৫২৩ জন ঢাকার ও ৩৩৪ জন অন্যান্য জেলার বাসিন্দা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ২৬ হাজার ৩৮ জন। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২২ হাজার ৯৩৮ জন।

jagonews24

গত ২৪ ঘণ্টায় দুজনের মৃত্যু নিয়ে ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এ বছর গত ২১ জুন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় পানি জমে থাকছে। একই সঙ্গে মশার লার্ভা ও উড়ন্ত মশা নিধনের উদ্যোগও সেখানে কম। ফলে ঢাকার পরেই তুলনামূলকভাবে কক্সবাজারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। এক্ষেত্রে জনসচেতনতার বিকল্প নেই।

রাজধানীতে এক জরিপে এডিস মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে দক্ষিণ সিটির কমলাপুর, মতিঝিল, নবাবপুর, বংশাল, ওয়ারী ও নারিন্দা এলাকায়। উত্তর সিটির সেনপাড়া পর্বতা, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মহাখালী, বেগুনবাড়ি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা ও আগারগাঁওয়ে মশার উপদ্রব বেশি।

এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়কে ডেঙ্গুর মৌসুম ধরা হয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর চার মাস মূল মৌসুম। তবে এ বছর জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অক্টোবরে আরও বাড়ছে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব। মৃত্যুর সারিও হচ্ছে দীর্ঘ।

২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। সে বছর সারাদেশে ডেঙ্গুতে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

এমএমএ/এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।