গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন বন্ধ: সিইসি
নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বুধবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ভোট বন্ধের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী- সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা নির্বাচন ভবনে পর্যবেক্ষণ কক্ষ করেছি। ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন করেছি। আমরা ভোটকেন্দ্র থেকে এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘আপনারাও একটা সময় আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। আপনারা দেখেছেন। আমরা প্রথম থেকে লক্ষ করেছি, ভোটগ্রহণে অনিয়ম হচ্ছে। অনেক কেন্দ্রে আমরা গোপন ভোটকক্ষে অবৈধ অনুপ্রবেশ দেখেছি। অবৈধভাবে প্রবেশ করে ভোটারদের ভোট দিতে সহায়তা করছেন অথবা বাধ্য করছেন। এটা আমরা সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করেছি। যেটা নিয়ম নয়। আমরা দেখেছি, সম্ভবত পোলিং এজেন্ট তাদের গায়ের গেঞ্জিতে নির্বাচনের প্রতীক ছাপানো ছিল, যা নির্বাচন আচরণ বিধিমালার পরিপন্থি।’
তিনি আরও বলেন, আমরা সহকর্মীরা সকাল ৮টা থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এটি পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা কেউ কক্ষ ত্যাগ করিনি। অনিয়ম ও অবৈধ কাজগুলো বেশ মোটাদাগে হয়েছে। যার ফলে আমরা প্রথমে তিনটি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছি। এরপরে ১৬ কেন্দ্র ও তৃতীয় দফায় ১২ কেন্দ্র বন্ধ করেছি। চতুর্থ দফায় কয়টি এবং সর্বশেষ আরও তিনটিসহ মোট ৪৩ কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দিয়ে সাড়ে ১২টায় পর্যবেক্ষণ কক্ষ ত্যাগ করেছি। আমরা অফিসারদের দায়িত্ব দিয়ে এসেছি। এসময় লক্ষ্য করলাম, আমাদের কতগুলো কেন্দ্রে সিসিটিভি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছিলাম না।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষাপটে পরে আমরা আরও সাতটি ভোটকেন্দ্র বন্ধ করি। মোট ৫০টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ করা হয়। এছাড়া রিটার্নিং অফিসারও একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট বন্ধ করেন। বিষয়টি আমরা কমিশনের সব সদস্য বসে পর্যালোচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করতে থাকি। আমরা নিশ্চিত হই, ৫০ কেন্দ্রের ভোট বন্ধ হয়ে গেলে বাকি যেসব কেন্দ্র থাকে, সেখানকার পরিবেশ বিচার করে সঠিক মূল্যায়ন হবে না।’
‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে, ভোটগ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কোনো একটি পক্ষ বা কোনো একটি প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী প্রভাবিত করতে পারছেন। ফলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, ইমপারশিয়ালি ফেয়ারলি ভোটগ্রহণ হচ্ছে না। ৫১ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধের পর আইন-কানুন পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, আরপিওর ৯১ অনুচ্ছেদে যে দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত। ভোটগ্রহণ বন্ধ।’
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, ‘৯১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, কমিশনের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় ভোটগ্রহণ সঠিকভাবে হচ্ছে না, ফেয়ারলি হচ্ছে না। তাহলে নির্বাচন কমিশন সব ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিতে পারে। আমরা পরিশেষে এ সিদ্ধান্তই নিয়েছি। পুরো নির্বাচনী এলাকা গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোট কার্যক্রম আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এ সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং তা নির্বাচন কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওখানে এখন আর ভোট হচ্ছে না। পরে দেখবো বিধি-বিধান অনুযায়ী কী করতে হবে। আমরা কমিশন বসে আইন-কানুন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।’
ওই নির্বাচনী আসনে পুনরায় তফসিল হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা আইন ও বিধি বিধান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবো এবং যে সিদ্ধান্ত হবে, সেটা আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’
এর আগে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শুরুতেই অনিয়ম, কারচুপি, জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল এবং গোপন কক্ষে বিভিন্ন লোকজনের উপস্থিতির অভিযোগ আসতে থাকে ইসিতে। এসব অভিযোগে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ৪৩টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে ইসি।
এদিকে, সিইসির নির্বাচন বন্ধের ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাড়া একযোগে বাকি চার প্রার্থী ভোট বর্জন করেছিলেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হলেন মাহমুদ হাসান রিপন। আর ভোট বর্জন করা প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, বিকল্পধারার জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
এরপর তফসিল অনুযায়ী শুরু হয় ভোটগ্রহণ। কিন্তু শুরুতেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আসতে থাকে ইসিতে।
এইচএস/জেএইচ/এএএইচ/এমএস