উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে ‘শ্রীহীন’ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান!
অডিও শুনুন
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা আশরাফ আলী। ছেলেমেয়ের এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ায় গত শুক্রবার বিকেলে তিনি সপরিবারে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে আসেন।
খোলামেলা পরিবেশে গল্প করে সুন্দর একটি বিকেল কাটাবেন এমন পরিকল্পনা নিয়েই বের হয়েছিলেন। কিন্তু উদ্যানে এসেই হতাশ আশরাফ আলী ও তার পরিবার।
তারা দেখেন, উদ্যানে ময়লা-আবর্জনা, যেখানে সেখানে ইট-সুরকির স্তূপ, ভবঘুরে ও মাদকাসক্তদের অবাধে ঘোরাফেরা। ভেঙে পড়ে রয়েছে বড় বড় গাছ।
স্বাধীনতা স্তম্ভ (গ্লাস টাওয়ার) সংলগ্ন লেকের পাড়ের তো আরও করুণ অবস্থা। লেকে পানি নেই, লেকজুড়ে পাথর আর পাথর। সেই পাথর থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ফলে সুন্দর পরিবেশে ঘোরার যে পরিকল্পনা ছিল তাতে গুড়ে বালি আশরাফ আলীর।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বর্তমানে এ উদ্যানটি ‘শ্রীহীন’। সংস্কার আর উন্নয়নের নামে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও উদ্যানটির সৌন্দর্য বাড়ছে না বরং কমছে। উদ্যানটিতে নেই কোনো ভালো রেস্টুরেন্ট, নেই টয়লেট সুবিধা।
এসময় আশরাফ আলীর প্রশ্ন- এসব দেখার কি কেউ নেই? এই প্রশ্ন আশরাফ আলীর একার নয়, এ প্রশ্ন উদ্যানে আসা দর্শনার্থীদের। ব্যস্ততম যান্ত্রিক এ নগরীতে অনেকেই খোলামেলা পরিবেশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এলেও এর পরিবেশ দেখে হতাশ হয়ে ফেরেন তারা।
সরেজমিনে ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে স্বাধীনতা স্তম্ভ সংলগ্ন লেকে পানি নেই। লেকের সামনে একটি সাইনবোর্ডে বিজ্ঞপ্তি ঝুলছে। তাতে লেখা, ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শোয়ের (ওয়াটার স্ক্রিন উইথ প্রোজেকশন) কাজ সম্পাদনের প্রয়োজনে সাময়িকভাবে পানি অপসারণ করা হয়েছে। আদেশক্রমে গণপূর্ত অধিদপ্তর’।
উদ্যানে নিয়মিত আসেন এমন অনেকে জানিয়েছেন, এর আগেও বেশ কয়েকবার উদ্যানের পানি অপসারণ করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, সংস্কারের নামে নানা আর্থিক অনিয়ম হয়। স্বাধীনতা স্তম্ভের যে স্থানটি রয়েছে সেখান থেকে টাইলস তুলে ফেলা হয়েছে। টাইলসগুলো দেখে অনেকেই বলাবলি করছেন, এগুলো এখনও ব্যবহার উপযোগী থাকলেও কি কারণে তা বদলানো হচ্ছে তা বোধগম্য নয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উদ্যানের বিভিন্ন জায়গায় দুই বছর আগে যে সাতটি রেস্টুরেন্টের স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়েছিল সেগুলোর কাজ শেষ। কিন্তু এসব জায়গায় রেস্টুরেন্ট চালু হয়নি। এগুলো এখন ভবঘুরের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক বেচাকেনা ও সেবন চলে। এখানে মাদকের ক্রেতা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। উদ্যানে হাঁটাহাঁটির সময় মাদকের গন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে উদ্যানটির বিভিন্ন স্থানে টাইলস বসিয়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ হলেও সেগুলো ব্যবহারের আগেই ভেঙে যাচ্ছে। উদ্যানের বিভিন্ন স্পটে ভেঙে পড়ে আছে বড় বড় গাছ। ওয়াকওয়েগুলো ঝাড়ু না দেওয়ায় বৃষ্টিতে ভিজে শ্যাওলা পড়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়মিত আসা এলিফ্যান্ট রোডের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, এত বড় উদ্যানে টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা নেই। দূর থেকে মানুষ ঘুরতে এসে বিপাকে পড়েন। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় নারীদের। পাশেই রমনা উদ্যানটি কত পরিষ্কার। সেখানে হাঁটাচলা করতে ভালো লাগে। এছাড়া টয়লেটেরও ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ৭ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাস্থল এ উদ্যানটি এখন দেখলে মনে হয় যেন ভাগাড়।
উদ্যানের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে সংস্কারকাজ চলমান থাকায় লেকে পানি নেই। লেকের চারপাশে কিছুটা ময়লা রয়েছে। সংস্কারকাজ শেষ হলেই উদ্যানের পরিবেশ ভালো হবে।
তবে উদ্যানের সর্বত্রই ‘ময়লার ভাগাড়’ এমন অভিযোগ মানতে রাজি নন তিনি।
এমইউ/জেডএইচ/এমএস