জঙ্গিদের ‘অপারেশনাল’ কাজে যুক্তরাজ্য থেকে অর্থ আসছে
দেশে জঙ্গি তৎপরতা চালাতে অর্থ সংগ্রহে নানা কৌশল অবলম্বন করছে উগ্রপন্থিরা। বিভিন্ন উপায়ে বিদেশ থেকে আসা মোটা অঙ্কের অর্থ চলে যাচ্ছে তাদের কাছে। আবার দেশেও সমমনা ব্যক্তিদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা তুলে গঠন করা হচ্ছে ফান্ড। বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের টাকা সংগ্রহ করে উগ্রপন্থি কর্মকাণ্ডে ব্যয় করছে জঙ্গিরা। সম্প্রতি দেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’র সাংগঠনিক এবং অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যুক্তরাজ্য থেকে অর্থ এসেছে বাংলাদেশে।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) সূত্রে জানা যায়, আনসার আল ইসলামের সাংগঠনিক ও অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সদস্যদের মাধ্যমে ব্যাপক অর্থায়ন করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন নজরদারির মাধ্যমে আরও তথ্য পাওয়া যায়, যুক্তরাজ্য থেকে আনসার আল ইসলামের জন্য টাকা পাঠানো হয়েছে। রাজধানীর দক্ষিণখানের কাঁচাবাজার এলাকার প্রান্তিক মিডিয়ার স্বত্বাধিকারী রেজাউল আলম ওরফে টিংকু নামে একজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিকাশ ও অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে জঙ্গি অর্থায়ন করা হয়েছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা তথ্য এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে সিটিটিসি জানতে পারে, ওইদিন সন্ধ্যার দিকে দক্ষিণখান থানার কবরস্থান রোডে আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য শাকিল নামে এক ব্যক্তি টিংকুর কাছ থেকে জঙ্গি অর্থায়নের উদ্দেশ্যে পাঠানো অর্থ সংগ্রহ করবেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকা থেকে দুজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন- মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে শাকিল (২৬) ও প্রান্তিক মিডিয়ার স্বত্বাধিকারী রেজাউল আলম ওরফে টিংকু (৪২)।
গ্রেফতার আনসার আল ইসলামের সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে শাকিল
তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকিল জানান, তিনি আনসার আল ইসলাম সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। ২০১৬ সাল থেকে জঙ্গি সংগঠনের কথিত ‘ভোল্ট’ অর্থাৎ অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন। ২০১৮-২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় টিংকুর কাছ থেকে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ টাকা এবং পল্টন এলাকার গাড়ি ব্যবসায়ী তুহিনের কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছেন।
তিনি জানান, এ জঙ্গি অর্থায়নের টাকা মোবাইলের গোপনীয় অ্যাপ- এক্সআবর, পিটি, ব্লাবার, ভাইবারে যোগাযোগ করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পাঠানোর নিদের্শ দেওয়া হয়। এছাড়া তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাসময়ে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন সদস্যদেরও কাছে টাকা পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতার টিংকু জানান, শাহীন তার পূর্বপরিচিত বন্ধু। শাহীন দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন। ২০১৮-২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রবাসী শাহীন যুক্তরাজ্য থেকে বিকাশ, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টিংকুর কাছে বিভিন্ন সময়ে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন।
গ্রেফতার আনসার আল ইসলামের সদস্য রেজাউল আলম ওরফে টিংকু
তিনি জানান, টাকা পাঠানোর পর ভাইভার ও অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে টাকা প্রাপকের নাম ও মোবাইল নম্বর জানিয়ে দেওয়া হতো। এ পর্যন্ত টিংকু যুক্তরাজ্যে বসবাসরত শাহীনের নির্দেশে শাকিল, সুমন, দেলোয়ার ও সোবহানদের কাছে ওই টাকা হস্তান্তর করেছেন। শাহীন দক্ষিণখানের চালাবন এলাকার শাহ আলম, মকবুল, সিলেট এলাকার জাবেদ ও লিটনের মাধ্যমেও বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিবাদের জন্য টাকা পাঠিয়েছেন।
এ বিষয়ে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আহমেদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত শাহীন বাংলাদেশে বসবাসরত সাইফ মুরাদ ওরফে এহেসান ওরফে হারুন, সাইদ ওরফে তৌফিক ও সুজন ওরফে ফরিদসহ আরও অনেকের কাছে টাকা পাঠিয়েছেন। যাদের কাছে টাকা পাঠানো হয়েছে তারা আনসার আল ইসলামের মাসুল বা দায়িত্বশীল বা মাজমোয়া মাসুল। তারা সংগঠনের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, সাইফ, সুজন, শাকিল, সুমন, দেলোয়ার, সোবহান সদস্য হিসেবে পদায়ন করেন এবং সংগঠনের সুবিধামতো বিভিন্ন কাজে নিয়োগ দেন।
আনসার আল ইসলামের সদস্য দেলোয়ার
এডিসি আহমেদুল হক বলেন, শাহীনের পাঠানো টাকা ও দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে রেজাউল আলম ওরফে টিংকু, তুহিন, শাহ আলম, মকবুল, জাবেদসহ অনেকের মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের সাংগঠনিক এবং অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
‘নিরাপত্তাজনিত কারণে আনসার আল ইসলামের সদস্যরা এনক্রিপটেড অ্যাপের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সব ধরনের যোগাযোগ করতেন।’
সিটিটিসির এ কর্মকর্তা বলেন, শাকিল, টিংকু তুহিন, সাইফ, মুরাদ ও এহেসান ওরফে হারুন, সাইদ ওরফে তৌফিক, সুজন ওরফে ফরিদ, শাহীন, সুমন, দেলোয়ার, সোবহান, শাহ আলম, মকবুল, জাবেদ এবং লিটনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে।
টিটি/আরএডি