গণপরিবহন
ই-টিকিটিংয়ে যাত্রীদের স্বস্তি, কমছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়
রাজধানীর বসিলায় থাকেন অনুরিমা রায়। কর্মস্থল মিরপুর-১ নম্বরে। সেখানে একটি চেইনশপে কাজ করেন। বাসে ই-টিকিটিং চালু হওয়ার পর স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করছেন তিনি। এখন আর তাকে ভাড়া নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় না। অথচ আগে বসিলা থেকে মিরপুর যেতে কখনো ২৫ কখনো ৩০ টাকা গুনতে হতো। সেটা ই-টিকিটিংয়ে কমে হয়েছে ২১ টাকা। অর্থাৎ ভাড়া নৈরাজ্য কমেছে। সঠিক ভাড়ায় যাতায়াত করা যাচ্ছে।
বাসে ই-টিকিট সিস্টেমে দুটো অপশন রয়েছে। একটা সাধারণ যাত্রীদের, অন্যটি শিক্ষার্থীদের। সাধারণ যাত্রীদের ভাড়া যেখানে ২১ টাকা, সেখানে স্টুডেন্ট সিস্টেমে ক্লিক করলেই কমে ১১ টাকা হয়ে যাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরাও খুশি।
তবে ই-টিকিটিং সিস্টেমে শিক্ষার্থীদের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের কাছে এটা কম দূরত্বের জন্য একটু বেশি, তবে বেশি দূরত্বের হলে ঠিক আছে।
যেমন ই-টিকিটে মিরপুর-১ নম্বর থেকে শিক্ষার্থীদের ঘাটারচরের ভাড়া ১১ টাকা। অন্যদিকে মিরপুর-১ নম্বর থেকে শ্যামলী ১০ টাকা। সাধারণ যাত্রীদের জন্যও একই ভাড়া।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সৈকত হোসেন বলেন, ই-টিকিটিং যাত্রীদের ভোগান্তি কমিয়েছে। তবে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা বেশি হয়ে যায়, এটা একটু কমালে ভালো হতো। আমরা শিক্ষার্থী অনেক সময় কম দূরত্বে যাতায়াত করি। এছাড়া টিউশনি করি সেটাও বেশি দূর নয়। এতে ১০ টাকা বেশি হয়ে যায়।
তবে এই শিক্ষার্থী ই-টিকিটিং সিস্টেমের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আমরা ন্যায্য ভাড়া দিয়ে যেতে পারছি। এখানে শিক্ষার্থী বা বাসের স্টাফদের কথা বলার কোনো সুযোগ নেই, যা ভাড়া তাই। একজন সাধারণ যাত্রীর ভাড়া কত, একজন স্টুডেন্টের ভাড়া কত অটোমেটিক বের হয়ে আসছে।
ই-টিকিটের সুবিধা প্রসঙ্গে অনুরিমা রায় বলেন, এখন বাসের মধ্যে ঝামেলা নেই। আগে টিকিট কেটে তারপর বাসে উঠি। ঝামেলা বাসের গেটেই সমাধান হয়ে যাচ্ছে। এই সুবিধা অন্যান্য বাসেও চালু করা দরকার।
ঢাকায় বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে চলতি মাসে পরীক্ষামূলকভাবে ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু করে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। প্রথমে ট্রান্স সিলভা পরিবহনে চালু হয় এটি।
এরপর ২২ সেপ্টেম্বর থেকে মিরপুর-১২ নম্বর থেকে ঢাকেশ্বরীগামী ‘মিরপুর সুপার লিংক’, ঘাটারচর থেকে উত্তরাগামী ‘প্রজাপতি’ ও ‘পরিস্থান’, গাবতলী থেকে গাজীপুরগামী ‘বসুমতি পরিবহন’র বাসে এ পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় শুরু হয়।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) আরও তিনটি রুটে ‘অছিম পরিবহন’, ‘রাজধানী পরিবহন’ ও ‘নূর-ই-মক্কা পরিবহনে’ চালু হয়েছে এ পদ্ধতি। এক মাসের মধ্যে রাজধানীর সব বাসে ভাড়া আদায় ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে হবে বলে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
পরিস্থান পরিবহনের টিকিট মাস্টার রিপন হোসেন বলেন, এখন যাত্রী হয়রানি কমেছে। আগে যাত্রী হয়রানি হতো এখন হয় না। যাত্রীরা অনেক সুবিধা পায়, টাকাও কম রাখা হয়। যেমন মিরপুর-১ নম্বর থেকে বসিলা আগে অনেক সময় ২৫ টাকা নেওয়া হতো। এখন ২০ টাকায় যায়। ই-টিকিটে যাত্রীর লাভ হয়েছে ক্ষতি হয়েছে বাস মালিকদের।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহনে ই-টিকিটিং শুরু হয়েছে। পরিবহন খাতে একটা শৃঙ্খলা আসবে। আড়াই হাজার পরিবহন মালিককে সচেতন করতে বিভিন্ন সভা করছি। ই-টিকিটিং চালুর বিষয়টি জানিয়ে পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের কাছে চিঠি পাঠাচ্ছি সহযোগিতা চেয়ে। এটা এখন বাধ্যতামূলক না হলেও পরে সব পরিবহনে বাধ্যতামূলক করা হবে।
শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া হচ্ছে ১০ টাকা। তবে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় আছে।
ঢাকা মহানগর পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার বলেন, এখন কয়েকটি কোম্পানির বাসে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছি। যাত্রীরা বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারছেন। প্রথম চালু হওয়ায় কিছু অভিযোগ আসছে, এগুলো মনিটরিং করছি। তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করছি। এটা সুফল হলে অন্যান্য রুটে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা সম্প্রসারণ হবে।
এমওএস/জেডএইচ/জেআইএম