অ্যাপে নির্দিষ্ট জায়গা খুঁজে পাবেন চালক

রাস্তায় ‘স্মার্ট পার্কিং’ চালু করছে ডিএনসিসি

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০৭:০৪ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
এসব জায়গায় পার্কিং করা যাবে গাড়ি-ছবি জাগো নিউজ

গুলশান-বনানীসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যত্রতত্র পার্ক করা হচ্ছে হাজারো ব্যক্তিগত গাড়ি। এতে সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এসব গাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিদিনই মামলা করেছে পুলিশ। কিন্তু এই অনিয়ম বন্ধ হচ্ছে না কিছুতেই।

এ অবস্থায় গুলশানের নির্দিষ্ট সড়কে ‘স্মার্ট পদ্ধতিতে’ গাড়ি পার্কিংয়ে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ওই পার্কিং সিস্টেম চালু হলে স্মার্টফোনে অ্যাপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পার্কিং খুঁজে পাবেন চালকরা। সেসব জায়গায় গাড়ি রাখতে হলে দিতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি। আর ওই সড়কগুলোর বাইরে অন্য কোথাও গাড়ি পার্ক করলে মোটা অঙ্কের জরিমানা করবে ট্রাফিক পুলিশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিএনসিসি এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারলে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ হবে। সড়কেও যানজট কিছুটা কমবে।

আরও পড়ুন: যানজটে নাকাল ঢাকা, বাড়ছে শারীরিক-মানসিক ভোগান্তি

এ বিষয়ে স্থপতি ইকবাল হাবিব জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা শহরে অধিকাংশ ভবনে গাড়ির পার্কিং নেই। ফলে বাসা-অফিসের সামনে গাড়ি পার্ক করেন চালক বা মালিকরা। এতে সড়কের প্রস্থ কমে যায়। যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। এখন যদি নির্দিষ্ট পার্কিং থাকে, তখন কেউ আর যত্রতত্র পার্কিং করবে না বা প্রবণতা কমে আসবে।

তিনি বলেন, অনেকেই নিজ অফিস বা বাসার সামনের সড়ক নিজের মনে করেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে গাড়ি পার্ক করে রাখেন। কারও কোনো জবাবদিহিতা নেই। তবে এখন রাজউক যেসব ভবন অনুমোদন দিচ্ছে, সেখানে পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা নিশ্চিত করে যাতে দেয়। তা না হলে এই অব্যবস্থাপনা কমবে না।

ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল সংশ্লিষ্টরা জানান, গুলশানের ৪, ৬২, ৬৩, ১০৩ ও ১০৯- এই পাঁচটি রোডে এসব পার্কিং ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে ডিএনসিসি। তিন মাস মেয়াদি এই প্রকল্প পর্যালোচনা করে পরবর্তী সময়ে শহরের অন্যান্য সড়কে একই রকম উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে সড়কে গাড়ি পার্কিংয়ের এই সুযোগ যারা নেবেন, তাদের ফি দিতে হবে। ফি’র পরিমাণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আলোচনা হয়েছে, ব্যক্তিগত গাড়ি প্রথম ঘণ্টায় ৫০ টাকা, দ্বিতীয় ঘণ্টায় ৭৫ টাকা এবং তৃতীয় ঘণ্টার জন্য ১০০ টাকা করে ফি দিতে হবে। এরপরও যদি কেউ পার্কিং ব্যবহার করতে চান, তাহলে ঘণ্টায় ১০০ টাকা করে ফি দিতে হবে।

আরও পড়ুন: রাস্তায় গাড়ি পার্কিংয়ে ডিএমপির অনুমতি

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই পাঁচটি রোডে গাড়ি পার্কিংয়ের সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। সড়কে হলুদ রং দিয়ে আলাদা আলাদা মার্কিং করা আছে। এখন সেখানে অনেকেই এলোমেলোভাবে গাড়ি পার্ক করে রেখেছেন।

৪ নম্বর রোডে একটি বাড়ির মালিক শরিফ হোসেন। আলাপকালে তিনি বলেন, সড়কে গাড়ি পার্কিংয়ে ফি নির্ধারণ করা হলে অব্যবস্থাপনা কমবে। কেউ চাইলেও দীর্ঘ সময় রাস্তায় গাড়ি রাখতে পারবেন না। আর পুলিশের মামলা, ঝামেলাও কমবে।

রাস্তায় ‘স্মার্ট পার্কিং’ চালু করছে ডিএনসিসি

স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পার্কিং খুঁজে পাবেন চালকরা-ছবি জাগো নিউজ

৬২ নম্বর রোডে একটি বাড়ির সামনে গাড়ি পার্ক করে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন চালক সোহাগ। কেন সড়কে গাড়ি পার্ক করেছেন, জানতে চাইলে সোহাগ বলেন, তার গাড়ির মালিক মিরপুর থেকে এই রোডের একটি বাসায় বেড়াতে এসেছেন। কিন্তু যে বাড়িতে বেড়াতে গেছেন, সে বাড়িতে অতিথিদের গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই বাইরে রেখেছেন।

পার্কিং চালুর ওই উদ্যোগ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ডিএনসিসি বিভিন্ন এলাকায় বাস টার্মিনাল, গাড়ি পার্কিং ইজারা দিয়ে রাজস্ব আয় করে। কিন্তু গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো এলাকায় সড়কে রাখা হাজারো গাড়ি থেকে কোনো রাজস্ব পায় না করপোরেশন। রাস্তায় রাখা গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশ রাজস্ব আয় করে। কিন্তু নিজেদের এলাকায় আয় হওয়া ওই রাজস্বের ভাগ পায় না ডিএনসিসি। এখন এই এলাকায় গাড়ি পার্কিং ফি থেকে যা আদায় হবে, তা ডিএনসিসি পাবে।

আরও পড়ুন: রাজস্ব বাড়াতে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ডিএনসিসিতে চিরুনি অভিযান

ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী নাঈম রায়হান খান জাগো নিউজকে বলেন, আপাতত পাইলট প্রকল্পে ১০৮টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে এই স্মার্ট পার্কিং পরিচালনার জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিগগির এই প্রকপ্লের উদ্বোধন করা হবে।

রাস্তায় ‘স্মার্ট পার্কিং’ চালু করছে ডিএনসিসি

যানজট নিরসনে এই পদ্ধতি কাজে লাগবে বলে আশা করছে ডিএনসিসি-ছবি জাগো নিউজ

জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রথম অবস্থায় গুলশান-বনানীতে স্মার্ট কার পার্কিং চালু করবো। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এটা চালু হবে। এই প্রজেক্ট সফল হলে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্থানেও এই পার্কিং ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে।

তিনি বলেন, সবগুলো পার্কিং একটা অ্যাপের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। কোন পার্কিংয়ে কয়টি গাড়ি আছে বা ফাঁকা আছে তা দেখতে পারবেন গাড়িচালক এবং মালিকরা। ফলে পার্কিং খুঁজতে কাউকে বেশি ঘুরতে হবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন পদ্ধতিতেই গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থাপনা হয়।

এমএমএ/এমএইচআর/এসএইচএস/জেআইএম

আপাতত পাইলট প্রকল্পে ১০৮টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে এই স্মার্ট পার্কিং পরিচালনার জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিগগির এই প্রকপ্লের উদ্বোধন করা হবে।

প্রথম অবস্থায় গুলশান-বনানীতে স্মার্ট কার পার্কিং চালু করবো। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এটা চালু হবে। এই প্রজেক্ট সফল হলে, পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্থানেও এই পার্কিং ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।