নাগরিক ভোগান্তি কমাতে

জন্মনিবন্ধনের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের দিতে চায় ডিএনসিসি

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০৯:১০ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
ছবি: জাগো নিউজ

জন্মনিবন্ধনে নাগরিক ভোগান্তি কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সংস্থাটির এক প্রস্তাব অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে জন্মনিবন্ধন করা যাবে। কাউন্সিলর হবেন নিবন্ধক, আর সহকারী নিবন্ধক হবেন কাউন্সিলর দপ্তরের সচিব। এটি বাস্তবায়ন হলে কাউকে আর কষ্ট করে আঞ্চলিক কার্যালয়ে যেতে হবে না।

ডিএনসিসি সংশ্লিষ্টরা জানান, আট থেকে ১০টি ওয়ার্ড নিয়ে ডিএনসিসির একটি আঞ্চলিক কার্যালয়। কারো জন্মনিবন্ধন সনদের দরকার হলে এই আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে আবেদন করতে হয়। আর কারো জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রশাসকের (ডিসি অফিস) কার্যালয়ে যেতে হয়। এতে নাগরিকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই নাগরিক সেবা সহজ করতে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর দপ্তরে এই সেবা দিতে প্রস্তাব করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ঘরে বসে অনলাইনে যেভাবে করবেন জন্মনিবন্ধন

কাউন্সিলর দপ্তরে জন্মনিবন্ধনের কার্যক্রম চালু হলে নাগরিক ভোগান্তি কমবে বলে মনে করেন সেবাপ্রার্থীরা। তারা জানান, এই দায়িত্বটা জনপ্রতিনিধিদের কাছেই থাকা উচিত। তারা কাজে গাফলতি করলে জনগণের কাছে জবাব দেওয়ার সুযোগ আছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে জন্মনিবন্ধন করা গেলে কাউকে কষ্ট করে আর আঞ্চলিক দপ্তরে যাওয়া লাগবে না।

ডিএনসিসির জন্মনিবন্ধনের কাজটি তদারকি করে সংস্থাটির স্বাস্থ্য বিভাগ। এই বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে ডিএনসিসিতে ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাধীন ৫৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। এই ১০টি অঞ্চলেই নাগরিকদের জন্মনিবন্ধনে আবেদন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) নিবন্ধক হিসেবে স্বাক্ষর করেন। তার সঙ্গে জন্ম-মৃত্যু রেজিস্ট্রেশন সহকারীও জন্মনিবন্ধনে স্বাক্ষর করেন। তার আগে অনলাইনে নাগরিকদের জন্মনিবন্ধন ফরম পূরণ করতে হয়। তারপর নির্দেষ্ট পরিমাণ টাকা ও কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদন করতে হয়। তবে কারো জন্মনিবন্ধনে কোনো সংশোধনী থাকলে তার জন্যও ঢাকার সদরঘাটে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে (ডিসি অফিস) যেতে হয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

আরও পড়ুন: জন্মনিবন্ধন সনদ হারিয়ে গেলে কী করবেন?

শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সড়কের (মহাখালী) ৪৫ নম্বর হোল্ডিংয়ে ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর কার্যালয়। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সরেজমিনে দেখা যায়, কার্যালয়ের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন শাখায় মানুষের ভিড়। কাগজপত্র হাতে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন নাগরিকেরা। কিন্তু কার্যালয়ের ভেতর অনলাইনে আবেদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ জন্য কার্যালয় সংলগ্ন একটি গলিতে ১৫ থেকে ২০টি কম্পিউটার-ফটোকপির দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দিয়ে নাগরিকদের ফরম পূরণ করতে হচ্ছে।

জন্ম নিবন্ধনের ভুল সংশোধনে ভোগান্তি চরমে-ফাইল ছবি

রামপুরার উলন রোড থেকে অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কার্যালয়ে একবছর বয়সী ছেলের জন্মনিবন্ধন করাতে যান আমীর হোসেন। তার আগে ২০০ টাকা দিয়ে একটি দোকান থেকে অনলাইনে আবেদন করেন। পরে ৫০ টাকা ফি জমা দিয়ে আঞ্চলিক কার্যালয়ে ফরম জমা দেন।

আরও পড়ুন: জন্মনিবন্ধন ইংরেজি করতে করণীয়

আলাপকালে আমীর হোসেন বলেন, অনলাইনে জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়াটা অনেকটাই জটিল। যাদের ইন্টারনেট-কম্পিউটার সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই, তারা অনলাইনে আবেদন করতে পারেন না। এই সেবাটা কাউন্সিলর দপ্তরে দিলে নাগরিকদের ভোগান্তি কমবে।

মেয়ের জন্মনিবন্ধনে নামের বানানে ভুল হওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করছিলেন মহাখালীর আমতলীর বাসিন্দা হাবিব হাসান। তিনি বলেন, নামের বানানে ভুল হওয়ায় ফের অনলাইনে সংশোধনের আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়েছে। পরে আবার নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে আবেদন করতে হয়েছে। আর মানুষের চাপ বেশি থাকায় ঠিকমতো আবেদনও জমা দেওয়া যায় না।

যেসব কারণে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করতে হয়-সংগৃহীত ছবি

আরও পড়ুন: জন্মনিবন্ধন সনদ হারিয়ে গেলে কী করবেন?

জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কাউন্সিলররা জনগণের প্রতিনিধি। তাই জন্মনিবন্ধনের দায়িত্ব জনগণের প্রতিনিধির কাছেই যাওয়া উচিত। এতে করে নাগরিকদের আঞ্চলিক কার্যালয়ে যেতে হবে না। নিজ নিজ ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে গিয়েই আবেদন করতে পারবেন। আবেদনে ভুলের পরিমাণও কমে আসবে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি জন্মনিবন্ধনের দায়িত্ব কাউন্সিলর দপ্তরে দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন) প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাবে কারো জন্মনিবন্ধনে কোনো ভুল থাকলে তা আঞ্চলিক কার্যালয়ে সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য কাউকে ডিসি অফিসে যাওয়া লাগবে না। এতে নাগরিক ভোগান্তি কমবে।

এমএমএ/এসএইচএস/এএসএম

জন্মনিবন্ধনের দায়িত্ব জনগণের প্রতিনিধির কাছেই যাওয়া উচিত। এতে করে নাগরিকদের আঞ্চলিক কার্যালয়ে যেতে হবে না। নিজ নিজ ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে গিয়েই আবেদন করতে পারবেন। আবেদনে ভুলের পরিমাণও কমে আসবে

অনলাইনে জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়াটা অনেকটাই জটিল। যাদের ইন্টারনেট-কম্পিউটার সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই, তারা অনলাইনে আবেদন করতে পারেন না। এই সেবাটা কাউন্সিলর দপ্তরে দিলে নাগরিকদের ভোগান্তি কমবে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।