নওগাঁয় ৫ বছরে তুলা চাষ কমেছে তিনগুণ


প্রকাশিত: ০৫:৪৬ এএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দাম কম পাওয়ায় গত কয়েক বছরে নওগাঁয় তুলা চাষ কমেছে প্রায় তিনগুণ। স্বল্প শ্রম ও অল্প খরচে বেশি লাভ হলেও চলতি বছরে মাত্র ৬০ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করা হয়েছে। সরকারিভাবে তুলার দাম ভালো দিলে আবারও তুলা চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

জানা গেছে, দেশে বস্ত্রের জন্যে সুতার চাহিদা মেটাতে রাজশাহী তুলা উন্নয়ন বোর্ড মান্দার উদ্যোগে উপজেলায় ১৯৯১ সালে তুলা চাষের জন্যে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে তুলা চাষ শুরু করেন। উপজেলার শাহাপুর গ্রামে মাত্র কয়েকজন কৃষক তুলা চাষ শুরু করেন। অন্যান্য ফসল চাষের চেয়ে তুলা চাষে বেশি লাভ হওয়ায় আগ্রহী হয়ে উঠেন কৃষক।

২০১০ সালে উপজেলার শাহাপুর, বেলালদহ, দুর্গাপুর, মিরপুর, ভদ্রসেনাসহ ১৫/১৬টি গ্রামের প্রায় দেড়শ’ জন কৃষক প্রায় ১৬৫ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেন। ভালো দাম পাওয়ায় ২০১১/১২ সালে পার্শ্ববর্তী উপজেলা মহাদেবপুরে ছড়িয়ে পড়ে তুলা চাষ।

Tula

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরের তুলনায় বর্তমানে তুলার উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি তুলার দাম। গত বছর ২০১৪ সালে তুলার দাম নির্ধারণ করা হয় মাত্র ১৯২০ টাকা। ২০১৩ সালে ২২২০ টাকা, ২০১২ সালে ২৫২০ টাকা, ২০১১ সালে ২৬২০ টাকা ও  ২০১০ সালে ২৮০০/২৯০০ টাকা।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের বেধে দেয়া কম দামের কারণেই গত পাঁচ বছরে জেলায় তুলা চাষ কমেছে প্রায় তিনগুণ। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন চাষি তুলা চাষ বন্ধ করে দিয়েছেন। বছরের জুলাই মাসে তুলা লাগালে তুলা ভালো হয়। প্রতি বছর জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি মাসে তুলা ঘরে তোলা যায়। এক বিঘায় ১৫/১৬ মণ তুলা উৎপাদন হয়ে থাকে।

শাহাপুর গ্রামের তুলা চাষি আব্দুল হান্নান জাগো নিউজকে জানান, উপজেলায় তুলা চাষের শুরু থেকে তিনি প্রতি বছর তুলা চাষ করে আসছেন। তুলার গাছ লাগানোর সময় ওই জমিতে আগাম মুলা চাষ করা হয়। প্রতি বিঘায় ২০/২৫ মণ মুলা বিক্রি করা যায়। সে সময় বাজারে আগাম মুলার চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাওয়া যায়। মুলা বিক্রি করা হয় ৭শ থেকে ৮শ টাকা দরে। মুলা বিক্রি করে বাড়তি লাভ হয়। এজন্যই তিনি প্রতি বছর দেড়/দুই বিঘা তুলা চাষ করে থাকেন।

একই গ্রামের বাবলু হোসেন জাগো নিউজকে জানান, গত কয়েক বছর থেকে দুই-আড়াই বিঘা করে তুলা চাষ করেন। কিন্তু তুলা উন্নয়ন বোর্ড দাম দিন দিন কমিয়ে দেয়ায় এ বছর দেড় বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছেন। পাঁচ বছর আগে এক বিঘা জমিতে তুলা চাষ করতে মাত্র ৫/৬ হাজার টাকা খরচ হতো। সে সময় দামও ভালো দিতো সরকার। বর্তমানে এক বিঘা তুলা চাষ করতে ১০/১২ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।

Tula

সাহাপুর গ্রামের কছিম উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, মান্দা তুলা উন্নয়ন জোনের পরামর্শে ‘রূপসী বাংলা’ জাতের তুলা চাষ করেছি। এ জাতের তুলা ভালো হয়। চলতি মৌসুমে সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছেন। এছাড়াও তিনি তুলা চাষের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তুলা চাষে অন্যান্য ফসলের তুলনায় ঝুঁকি কম। বিক্রির জন্যও চিন্তা করতে হয় না। তবে চলতি বছরে তুলার দাম সরকার বৃদ্ধি না করলে অনেকেই তুলা চাষ বন্ধ করে দেবেন।

মহাদেবপুর উপজেলার ঈশ্বরলক্ষ্মীপুর গ্রামের এমদাদুল হক জানান, দুই বছর থেকে পাঁচ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করছেন। প্রথম বছর তুলনামূলক ভালো দাম পেলেও দ্বিতীয় বছর দাম কম পান। দ্বিতীয় বছর তার তুলা চাষ দেখে অন্যান্য কৃষক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পরামর্শে তুলা চাষ করতে আগ্রহী হয়। কিন্তু দীর্ঘ বর্ষার কারণে তারা তুলা চাষ করতে পারেননি। সে সব জমিতে ধান চাষ করেছেন।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের রাজশাহী জোন মান্দার কর্মকর্তা গণহরি সরকার জাগো নিউজকে জানান, দেশে বস্ত্র তৈরিতে সুতার চাহিদা প্রচুর। রাজশাহী তুলা উন্নয়ন বোর্ড মান্দায় তুলা চাষের যে উদ্যোগে নিয়েছিল তা সফল হয়। কিন্তু গত পাঁচ বছর থেকে তুলা চাষিরা তুলনামূলকভাবে দাম কম পেয়েছেন। তুলার দাম কম পাওয়ায় তুলা চাষ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা। দিন দিন দাম কম দেয়ার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে অল্প কয়েক বছরের মধ্যে তুলা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

আব্বাস আলী/এসএস/এসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।