সাগর থেকে মাছ ধরার কোটা নির্ধারণ করে দেবে সরকার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১৯ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

সাগর থেকে মাছ আহরণে একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী, নৌযানগুলোকে সাগর থেকে মাছ ধরার কোটা নির্ধারণ করে দেবে সরকার। একই সঙ্গে মাছের প্রাপ্যতা ও চাহিদা বিবেচনা করে প্রতি বছর কতটুকু মাছ ধরা যাবে তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ‘সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ নীতিমালা, ২০২২’ জারি করা হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মৎস্য অনুবিভাগ) মো. আব্দুল কাইয়ূম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে নীতিমালাটি করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় কাজ করবে। নীতিমালাটি সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে আরও শৃঙ্খলা আনবে।’

নীতিমালায় ‘দায়িত্বশীল মৎস্য আহরণ-পদ্ধতি প্রবর্তন’ এর বিষয়ে বলা হয়েছে, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে দেশের জনগণের পুষ্টি, অর্থনৈতিক, সমাজিক ও পরিবেশগত মাত্রা সন্নিবেশিত। কাজেই মৎস্য আহরণ ও এতৎসংশ্লিষ্ট বিষয়াদিসহ আহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মৎস্যজীবী ও নৌশ্রমিক কল্যাণও বিবেচনা করা প্রয়োজন। টেকসই মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্থা (এফএও) দায়িত্বশীল মৎস্য আহরণ কোড নির্ধারণ করে।

আরও বলা হয়, আহরণযোগ্য মৎস্যসম্পদের প্রাপ্যতা ও জাতীয় চাহিদা বিবেচনা করে বার্ষিক মোট আহরণযোগ্য মৎস্য আহরণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করবে। ল্যান্ডিং ফি নির্ধারণ বা প্রয়োজনে সমন্বয় করবে।

প্রত্যেক নৌযানের আহরণযোগ্য মৎস্যের পরিমাণের কোটা নির্ধারণ করা হবে। সংকটাপন্ন ও প্রজাতিভিত্তিক আহরণযোগ্য মৎস্যের সর্বোচ্চ আকার নির্ধারণ করা হবে বলেও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া লাইসেন্স ও মৎস্য আহরণের অনুমতিপত্র ইস্যু আইন/বিধি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করবে। মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকাল যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্য আন্তঃবিভাগীয়/দপ্তর ও আহরণকারীদের সহযোগিতা ও সমন্বয় জোরদার করবে।

সামুদ্রিক মৎস্যের প্রজাতিভিত্তিক প্রাপ্যতা বিষয়ে অবিরাম জরিপ ও গবেষণা অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। উপকূল এলাকায় কাঙ্ক্ষিত মৎস্য আহরণ পদ্ধতি (টোপ ও বড়শি) উৎসাহিত করা যাতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মৎস্য প্রজাতি আহরণ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা যেতে পারে। প্রতিবেশি উপকূলীয় দেশ বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় বা আঞ্চলিক মৎস্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে একই ধরনের উদ্যোগ নিতে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

দেশে মোট উৎপাদিত মাছের ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ সমুদ্র থেকে আহরণ করা হয় উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়, ‘রূপকল্প, ২০২১’ ও ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ২০৪১’, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০-এর কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণে টেকসই সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করিয়া প্রাণিজ পুষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দারিদ্র্য বিমোচন এবং প্রক্রিয়াজাত সামুদ্রিক মৎস্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করার মাধ্যমে উল্লিখিত পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সামুদ্রিক মৎস্যখাত অন্যতম অংশীদার। এই বিবেচনায় সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

নীতিমালায় সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ ও উহার বৈচিত্র্য, নীতিমালার ব্যাপ্তি, আইনগত ভিত্তি, জরিপ ও তথ্য সংরক্ষণ, সামুদ্রিক মৎস্য নৌযানের তালিকাভুক্তকরণ, আহরণের সক্ষমতা নির্ধারণ ও উহাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় দীর্ঘমেয়াদি স্থানিক পরিকল্পনা প্রস্তুত, সুনীল অর্থনীতি (সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ): উপকূলীয় ও সামুদ্রিক প্রতিবেশ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উপযোগী মৎস্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অবলম্বন, মেরিকালচার, সামুদ্রিক মৎস্যখাতে সুশাসন, আহরণোত্তর পরিচর্যা ও বিপণন, নারীর ক্ষমতায়ন, আন্তর্জাতিক চুক্তি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা, গবেষণা, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি কার্যক্রম, মেরিন রিজার্ভ ও সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলার ব্যবস্থা গ্রহণ, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় মানবসম্পদ উন্নয়ন, ভৌত-অবকাঠামো উন্নয়ন, নীতি বাস্তবায়ন কৌশল নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।

এছাড়া অবৈধ, অনুল্লিখিত ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ, আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, মৎস্যজীবীদের সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের ওপর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা, স্বার্থ সংরক্ষণ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের বিষয়েও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

কোন কাজ কোন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা করবে সেই বিষয়ে নীতিমালায় বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

আরএমএম/ইএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।