মাহফুজ আনামকে গ্রেফতারের দাবি সংসদে


প্রকাশিত: ০২:২৯ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ এনে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামকে গ্রেফতার ও তার পত্রিকা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে জাতীয় সংসদে।
 
রোববার জাতীয় সংসদে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে একাধিক এমপি এ দাবি তোলেন। আলোচনার সূত্রপাত করেন সরকারি দলের এমপি শেখ ফজলে নূর তাপস। এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম ও তাহজীব আলম সিদ্দিকী।
প্রসঙ্গত, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ডিজিএফআইয়ের সরবরাহকৃত ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর’ যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রকাশ করাকে নিজের সাংবাদিকতা জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল বলে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে বলেছেন মাহফুজ আনাম। এরই প্রেক্ষিতে সমালোচনার ঝড় ওঠে চারিদিকে।

বক্তারা বলেন, মাহফুজ আনাম বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ডিজিএফআইয়ের দেয়া মিথ্যা, বানোয়াট দুর্নীতির সাজানো গল্প যাচাই-বাছাই না করেই ছাপিয়েছেন। এটি তিনি স্বীকারও করেছেন। এ বিষয়টি সংবিধান বিরোধী।

তাপস বলেন, আমরা মনে করি সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। মাহফুজ আনাম এই পেশাকে কলঙ্কিত করেছেন। তার এই সম্পাদক থাকার আর কোনো অধিকার নেই। এই পেশাকে অমর্যাদা করার জন্য তাকে সাংবাদিকতা থেকে বহিষ্কার করতে হবে। সাংবাদিকতা যেন না করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।  

তিনি বলেন, ট্রান্সকমের মালিক লতিফুর রহমান একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি। আমরা জানি, বাংলাদেশের অনেকেই জানে সন্ত্রাসী বাহিনী উলফার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এদের বিরুদ্ধে আশু পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমি আপনার মাধ্যমে মহান সংসদে উত্থাপন করলাম।

সংবিধানের ধারা তুলে ধরে এই সংসদ সদস্য বলেন, উনার (মাহফুজ আনাম) কার্যক্রম সুনির্দিষ্টভাবে সংবিধানের আর্টিক্যাল ৭ এর উপ-২ এর আওতায় রাষ্ট্রদ্রোহের আওতায় পড়ে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা এনে তার (মাহফুজ আনাম) বিরুদ্ধে বিচারব্যবস্থা করার জন্য সংসদের মাধ্যমে দাবি উত্থাপন করছি।  

তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে আটক করার জন্য যে নীল নকশা ও ষড়যন্ত্র করা হয়েছিলো। তার (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে যে অবৈধ এবং মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিলো। সেই প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য মাহফুজ আনাম তার পত্রিকা ডেইলি স্টারে তৎকালীন ডিজিএফআইয়ের দেওয়া মিথ্যা, বানোয়াট দুর্নীতির সাজানো গল্প দিয়ে যে সংবাদ দেওয়া হয়েছিলো সেগুলো তিনি ছাপিয়েছিলো। মাহফুজ আনাম নিজেই বলেন, ‘ডিজিএফআই যে সকল সংবাদ পাঠানো হতো সেটা কোনো রকম সত্যতা যাচাই-বাছাই ছাড়াই ডেইলি স্টারের এডিটর থাকা সত্ত্বেও তিনি সেগুলো কনফার্ম করেননি। সকল মিথ্যা-বানোয়াট মামলা এবং সাজানো গল্পগুলো অকপটে সেই ডেইলি স্টারে ছাপিয়েছেন।’

মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, এটা তো থুক্কু দিয়েই মাফ করা যাবে না। তাহলে তো আল বদর, আল-শামস, রাজাকারদেরও মাফ করা যায়। তাই তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।

ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বলেন, সাংবাদিকতা রাষ্ট্রীয় চতুর্থ স্তম্ভের জায়গায় চলে যাচ্ছে। কিন্তু সেই সময়ে একজন প্রকাশক কিভাবে সাংবাদিকতার নামে কলঙ্ক এবং সাংবাদিকতাকে একটা কলঙ্কময় অধ্যায়ে নিয়ে যায়। ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এই কাজগুলো উনি করে যাচ্ছেন। সাংবাদিকতা হবে উইদাআউট ফেবার। কিন্তু মানুষ জানে উনাদের টাকা-পয়সার উৎসটা কোথায়। এই ধরণের উৎস থেকে আগত টাকা-পয়সার ব্যক্তিবর্গে একটা সংবাদপত্র কিভাবে ভালো কাজ করবে?

তিনি বলেন, এই ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের সোচ্চার হতে হবে। এরা যাতে আজকে কোনো অবস্থায় সাংবাদিকতা পেশায় না থাকতে পারেন এবং তারা যে সমস্ত অপকর্ম করে তা জাতির সামনে উন্মোচিত করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, মাহফুজ আনাম জাতির সামনে স্বীকার করলেন তিনি তার পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেছেন। সম্পাদক দায়ী হলে মালিক ও প্রকাশক দায়ী নয়, এটা ভাবার অবকাশ নেই। তারা মূলত বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণ করার জন্য, দেশের সম্ভাবনাকে নসাৎ করার জন্য, গরীব মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারকে ধ্বংস করার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করেছেন।

তিনি বলেন, তারা প্রায়শই আমাদের ছবক দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের খুব আকাঙ্ক্ষা তাদের গাড়িতে পতাকা লাগবে। কিন্তু জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। জনগণ এই সমস্ত ব্যক্তিদের পছন্দ করে না। যদি গাড়িতে পতাকা লাগাতে হয় তাহলে রাজনীতিবিদ হন, মানুষের কাছে যান, সুইপারের সঙ্গে কোলাকোলি করেন, শ্রমিকের শরীরের ঘাম নিজের শরীরে লাগান, শেখ হাসিনা দেশের প্রত্যেকটি এলাকায় ঘুরে বেড়ান। তা না করে, এসি রুমে বসে, এসি গাড়িতে চড়ে ওই মিডিয়ার সুযোগ নিয়ে বড় বড় ছবক দেবেন রাতে-দিনে সবসময়। রাজনীতিবিদদের বোকা বানাবার চেষ্টা করবেন, চরিত্র হননের চেষ্টা করবেন। তাহলে রাজনীতির মাঠে এসে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলুন। মানুষ যদি গ্রহণ করে তাহলে সফল হবেন। কিন্তু আমরা জানি মানুষের সঙ্গে আপনাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

ষড়যন্ত্র করে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করতে চান?’ প্রশ্ন তুলে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, এই পরিকল্পিত মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং কাঠগড়ায় তাদের সমুচিত বিচার করা হোক। যাতে ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের ষড়যন্ত্র করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন।

সংরক্ষিত মহিলা আসনের নূরজাহান বেগম বলেন, উনি (মাহফুজ আনাম) প্রায়ই রাজনীতিবিদদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু তিনি যে কাজটি করেছেন তা সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং এই অনৈতিক কাজ করার জন্য সাংবাদিকতায় থাকারও অধিকার তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। যেহেতু তিনি নিজ মুখে স্বীকার করেছেন। তাই এখান থেকে পিছনে ফেরার কোনো কারণ নেই। তাই তার বিচার দাবি করছি।

ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম বলেন, ভুক্তভোগী শুধু তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই না, আমিও। খাই নাই, দাই নাই গেলাস ভাঙার মামলা খাইলাম। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের কিছু মানুষ আল বদর, রাজকার, আল-সামস গঠন করে পাক সেনাদের সহযোগিতা করেছিল। তাই আমার মনে হয় এরাও ওয়ান ইলেভেন সরকারকে সহযোগিতা করেছিল। এ জন্যই তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা উচিত।

তবে তাহজিব আলম সিদ্দিকী বলেন, শুধু মাহফুজ আনামের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তখন ভয়ে অনেকে এমন কাজ করেছিল। এমন ব্যক্তি এই সংসদেও এখন বহাল তবিয়তে বসা আছেন। তাদের কথা কেউ কেন বলছেন না। বলতে গেলে থলের বেড়ালও বেরিয়ে আসবে। এ সময় স্পিকার তাকে তার পয়েন্ট অব অর্ডারের বিষয়ে বলার জন্য অনুরোধ করলে তাহজিব অন্য প্রসঙ্গে কথা বলেন।

এইচএস/একে/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।