পাকিস্তানিদের শেখানো বুলি আওড়াচ্ছেন খালেদা
সম্প্রতি শহীদের সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়া যে প্রশ্ন তুলেছেন সে বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী অা ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, উনি (খালেদা জিয়া) যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন তার বানীতে বলেছিলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং দুই লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু পাকিস্তান যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অস্বীকার করার কথা বলছে, ‘৭১ এ যুদ্ধে শহীদের সংখ্যাকেও অস্বীকার করছে ঠিক তখনই পাকিস্তানের (প্রভুদের) শেখানো বুলি আওড়ে খালেদা জিয়াও এখন মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি ৩০ লাখ শহীদ হয়েছেন তা আজ অস্বীকার করে মীমাংসিত বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। পাশাপাশি স্বাধীনতার ইতিহাসকে অস্বীকৃতিও জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
রোববার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামালের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
রাজাকারদের তালিকা করা হচ্ছে
সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, সরকার প্রথমবারের মতো রাজাকারদের নামসহ তালিকা করার উদ্যোগ নিয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সঠিক নামের পূর্ণ তালিকা সরকারিভাবে তৈরি করা হয়নি। এমনকি সংরক্ষণও করা হয়নি। তবে রাজাকারদের নামসহ তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ সরকারের রয়েছে।
অা ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, রাজাকরদের তালিকা তৈরিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। যারা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজাকাদের ভাতা দিতো সেই তালিকাও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, একসময় এসব রাজাকার-আল-বদর, আল-শামসদের মাসিক ভাতা দেয়া হত। সে কারণে তৎকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এটি সংরক্ষিত ছিল নিশ্চয়। কিন্তু ২০০১ সালের পরে দেখা গেছে সেই তালিকা উধাও। কিন্তু কোনো না কোনো জায়গায় এ তালিকা রয়েছে নিশ্চয়। সেটি খুঁজে বের করে তাদের নামের তালিকা তৈরি করার কাজ চলছে।
এছাড়া উপজেলা ভিত্তিক খোঁজ খবর নিয়ে এসব রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের তালিকাও সংগ্রহের চেষ্টা চলছে বলে জানান মন্ত্রী।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অা ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, দেশের সব মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পরেও তাদের যেন চিনতে পারা যায়, সে লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর একই ডিজাইনে করা হবে। যাতে কবর দেখলেই বোঝা যায় এটি মুক্তিযোদ্ধার কবর।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘ মুক্তিযোদ্ধা পল্লী’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, অসহায় ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডস্থ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এলাকায় জমির উপর ‘মুক্তিযোদ্ধা পল্লী’ নির্মাণ করার পরিকল্পণা সরকারের রয়েছে এবং এটি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।
রোববার জাতীয় সংসদে লক্ষীপুর-১ আসনের এমপি এম এ আউয়ালের লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য তার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ শীর্ষক’ ২২৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণার্থে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটিতে দেশের সকল উপজেলার মোট ২ হাজার ৯৭১টি ইউনিট নির্মাণের সংস্থান রয়েছে। প্রকল্পে সংস্থানকৃত ২ হাজার ৯৭১টি ইউনিটের মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৩৮৮টি ইউনিট নির্মাণের জন্য অনুমোদিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪৫টি বাসস্থান নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ১ হাজার ১৫৮টির কাজ চলছে এবং ১৮৫টি বাসস্থান নির্মাণের জন্য দরপত্র বিজ্ঞপ্তি জারির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি জেলা/উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যানুপাতে তাদের আবাসনের নিমিত্ত ১০ হাজার ফ্লাট নির্মাণ প্রকল্প প্রণয়নের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।
গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলনের এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, এ মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট/ মুক্তিবার্তা সংরক্ষিত রয়েছে। সংরক্ষিত মুক্তিবার্তা (লালবই) চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৫১ হাজার ৮৬১ জন। গেজেট অনুযায়ী প্রায় ২ লাখ। একই মুক্তিযোদ্ধার নাম উভয় তালিকাতেই রয়েছে। তবে সারা দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নিরুপণের লক্ষ্যে ইতোপূর্বে যারা নাম অন্তর্ভুক্ত করেননি তাদের নাম ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বরাবর অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। তবে বর্তমানে হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তবে ইতোমধ্যে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি নিষ্পত্তি হলে সরেজমিন যাচাই-বাছাইপূর্বক অচিরেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এইচএস/একে/এবিএস