চোখ পুড়লেও মনোবল পোড়েনি মনির


প্রকাশিত: ০১:৩৯ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বখাটের ছোড়া অ্যাসিডে দুই চোখ পুড়ে অন্ধ হলেও মনোবল পোড়েনি মাসুদা আক্তার মনির। আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে দুই চোখ হারিয়েও সে অনায়াশে পড়ালেখা চালিয়েছে। বড় ভাই মাজেদুর রহমান সোহেল মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে দিতো প্রশ্নের সে উত্তর আর তা শুনে শুনে মুখস্থ করতো।

গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সমাজকল্যাণ বিদ্যাবিথী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে অংশ নিয়ে লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে রংপুরের দক্ষিণ বাবখাঁ এলাকার অ্যাসিডদগ্ধ মেধাবী এই শিক্ষার্থী।

তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট মনি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবা মাহবুবুল হোসেন মারা যান। মা সুলেকা পারভীন হয়ে ওঠেন তার একমাত্র ভরসা।

Acid-Moni
সংসারে অভাব-অনাটন থাকলেও একমাত্র মেয়েকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে তাই মা সুলেকা পারভীনের ইচ্ছের কোনো কমতি ছিল না।

জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে সুলেকা পারভীন জানান, নিজেও পড়ালেখা শেখেননি আর দুই ছেলেকেও পড়ালেখা শেখাতে পারেননি। ভীষণ ইচ্ছে ছিল একমাত্র মেয়েকে সব দিক থেকে যোগ্য করে গড়ে তোলার। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি মেয়েকে ভর্তি করান নাচ ও আর্টের স্কুলে।

খেলাধুলাতেও বেশ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিল মনি। সবকিছুই যখন ঠিকঠাক চলছিল আর তখনি মনিকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো তারই প্রতিবেশি আরিফুল (২২) ও আলাল (২২) এবং দুলাল (২৪)। কিন্তু মনি সব সময়ই তাদের প্রেম নিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আসছিল।

সুলেকা পারভীন আরো জানান, নবম শেণিতে পড়ার সময় ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট বখাটের ছোড়া অ্যাসিডে সমস্ত মুখ ঝলসে যায় মনির। এরপর রংপুর ও ঢাকায় চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে উঠলেও দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায় তার। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারো পড়াশোনা শুরু করে অদম্য মেধাবী মনি।

জেএসসিতে অধ্যায়নরত মনির ফুফাতো ভাই পঞ্চগড়ের ভাউলাগঞ্জ বালাপাড়া এলাকার রাব্বী আলমের সহায়তায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে সে। কেমন হচ্ছে পরীক্ষা? জানতে চাইলে মনি জাগো নিউজকে জানায়, গত তিনটি পরীক্ষাই ভালো দিয়েছে। বাকি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও বেশ রয়েছে।

মনি জানায়, অ্যাসিডে চোখ পুড়লেও মনোবল পোড়েনি তার। তাই ভালো ফলাফল প্রত্যাশী মনির ইচ্ছে এসএসসির পর ঢাকায় গিয়ে পড়াশোনা করার। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতা তার স্বপ্নকে কতদূর নিয়ে যাবে-এ ভাবনাও যেন কম নয়।

Acid-Moni-Pic
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট মনি ও তার মা রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়েন। আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আরিফুল, আলাল ও দুলাল রাত ১১টার দিকে ঘরের জানালা দিয়ে ঘুমন্ত মনির মুখে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে। এতে মনির মুখ, চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। এসময় মেয়ের চিৎকারে মা সুলেকা পারভিন ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের ধাওয়া করলে গেলে তাকেও বখাটেরা অ্যাসিড নিক্ষেপ করে। এতে সুলেকার ডান বুকের ওপর অংশসহ পরনের কাপড় পুড়ে যায়।

পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মনিকে উদ্ধার করে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ঘটনার পরদিন ১৪ আগস্ট মনির বড় ভাই মাজেদুর রহমান সোহেল বাদী হয়ে আরিফুল, আলাল, দুলাল ও আরিফিনকে (২৬) আসামি করে কোতয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন।

তদন্ত শেষে ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর অ্যাসিড সরবরাহের অভিযোগে রাসেল ওরফে সাদ্দামকে (২২) অভিযুক্ত করে পাঁচজনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। প্রায় আড়াই বছর মামলাটি আদালতে বিচারাধীন থাকার পর ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল ঘটনার মূলহোতা আরিফুল ইসলামের ফাঁসি ও তার সহযোগি আলাল এবং দুলালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক। এ ঘটনায় খালাস পান মামলার অপর দুই আসামি আরিফিন ও সাদ্দাম। অভিযুক্তরা জেল হাজতে থাকলেও তাদের পক্ষে উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে।

এআরএ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।