পরীক্ষার টাকা না পেয়ে বাবাকে হত্যা


প্রকাশিত: ০১:০৮ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাবার কাছে পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা না পেয়ে ছেলে আবু হাসান বাবা হবিবর রহমান ধলুকে হত্যা করেছে। তবে এই হত্যাকাণ্ডকে এলাকায় আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়েছে। ঘটনার দীর্ঘ আট মাস পর নিহতের ছেলে হাসানকে পুলিশ গ্রেফতারের পর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হলো। রোববার বিকেলে নিহতের ছেলে কলেজছাত্র হাসান তার বাবাকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

গত বছরের ১০ জুন সন্ধ্যায় বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার আটগ্রাম শাহ পাড়ায় নিজ বাড়ির শয়ন কক্ষের দরজা ভেঙে হবিবর রহমান ধলুর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

বগুড়া জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান জানান, পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত নিহত হবিবর রহমান ধলুর ছেলে হাসান তার দেয়া জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে- যে তারা বাবা ছিলেন হাড়কিপ্টে প্রকৃতির মানুষ। তার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও সংসারে টাকা-পয়সা খরচ করতেন না। এমনকি তাকেও লেখাপড়ার কোনো খরচ দিতেন না। হাসান নিজ উদ্যোগে টাকা সংগ্রহ করে এইচএসসি পাশ করে বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজে বিএসসিতে ভর্তি হন।

গত বছরের ১০ জুন বিএসসি ১ম বর্ষ পরীক্ষার ফরম পূরণের শেষ তারিখ ছিল। ওইদিন সকাল ৭টায় আবু হাসান পরীক্ষার ফরম পুরোনের জন্য বাবার কাছে ২৫০০ টাকা চায়। বাবা হবিবর রহমান ধলু ছেলে আবু হাসানকে মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে কৃষি কাজের জন্য মাঠে চলে যায়। ছেলে আবু হাসান বাবার ড্রয়ার খুলে ২৫০০ টাকা নিয়ে কলেজে ফরম পূরণ করতে চলে যায়।

সকাল ৯টার দিকে হবিবর রহমান মাঠ থেকে বাড়িতে এসে ড্রয়ার খুলে টাকা না পেয়ে স্ত্রী ও বেড়াতে আসা বিবাহিত মেয়েকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর স্ত্রী ও তার মেয়ে পাশের গ্রামে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। দুপুর ২টার দিকে আবু হাসান  বাড়ি ফিরে কাউকে না পেয়ে এবং ঘরের দরজা বন্ধ দেখে নানার বাড়িতে গিয়ে মা-বোনের কাছে ঘটনা শোনে। এরপর সবার অগোচরে হাসান বাড়ি ফিরে এসে মই এর সাহায্য নিয়ে ফাঁকা জায়গা দিয়ে বাবার শয়ন ঘরে প্রবেশ করে। এসময় তার বাবা ঘুমাচ্ছিলেন। ঘরে প্রবেশ করার পর একটি হাসুয়া কাছে পেয়ে বাবার ঘারে কোপ দিয়ে আবারো ফাঁকা জায়গা দিয়ে বের হয়ে আসে।

এদিকে, দীর্ঘ সময় হবিবর রহমান ঘর থেকে বের না হওয়া এবং কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে প্রতিবেশিরা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ওইদিন সন্ধ্যায় ঘরের দরজা ভেঙে নিহতের মরদেহ এবং বিছানার উপর থেকে হাসুয়া উদ্ধার করে। ঘরে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় এবং উপরের ফাঁকা অংশে মাকড়াসার জাল থাকায় পুলিশ এবং নিহতের পরিবার ধারণা হবিবর রহমান ধলু স্ত্রী-সন্তানের উপর রাগ করে আত্মহত্যা করেছেন।

এ ঘটনায় থানায় ইউডি মামলা দায়ের হয় এবং ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠায়। পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে হত্যাকাণ্ড  উল্লেখ থাকায় পুলিশ রহস্য উদঘাটনে নেমে পড়ে। হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল ) গাজিউর রহমানের নেতৃত্বে বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান একটি টিম গঠন করে দেন। এরপর পুলিশ রোববার নিহতের স্ত্রী, বিবাহিত দুই মেয়ে এবং একমাত্র ছেলেকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে।

এক পর্যায় নিহতের ছেলে আবু হাসান তার বাবাকে হত্যার কারণ এবং হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। এরপর বিকেলে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বাবাকে হত্যার দায় স্বীকার করে কলেজছাত্র আবু হাসান।

এআরএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।