রেলওয়ের ভূমি রক্ষায় যেন কেউ নেই


প্রকাশিত: ০৬:২৮ এএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

চট্টগ্রামে প্রতিদিনই প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে রেলওয়ের মূল্যবান জমি। রাতারাতি এতে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে কতিপয় রেলকর্মকর্তা-কর্মচারীর। প্রশ্ন উঠছে রেলওয়ের প্রকৌশল এবং এস্টেট বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে। দখল হওয়া জায়গায় রাতারাতি গড়ে তোলা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, বিভিন্ন সংগঠনের অফিস, ক্লাব, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। আর এসবের বিপরীতে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানেও বিরাজ করছে স্থবিরতা। ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলছেন জনবল ও অর্থ সংকটের কথা।

চট্টগ্রামের মাদারবাড়ীতে এসআরভি এলাকায় ৩১ জনকে নির্দিষ্ট আয়তনের ভূমি ব্যবহারের জন্য বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে পরিমাণে জমির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বেদখল করে নেওয়া হয়েছে তার কয়েকগুণ। এই এলাকার আশপাশে রেলওয়ের জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের অবৈধ স্ট্যান্ড, মেরামতের ভ্রাম্যমাণ গ্যারেজ, জাহাজের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ব্যবসা কেন্দ্র। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে সেখানে।
 
স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি মাফিয়া চক্র রেলের মূল্যবান জায়গা গ্রাসের অপতৎপরতায় লিপ্ত।  

রেলভূমির বেআইনি দখলকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে অনেক অপরাধী চক্র। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অবৈধ অস্ত্রধারী, মাদকসেবী ও মাদকের অবৈধ ব্যবসায়ীদের নিরাপদ আস্তানাও হয়ে উঠেছে রেলভূমি। দখল-বেদখলের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঘটেছে খুনের ঘটনাও। এছাড়া চলে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ায় শক্তি প্রদর্শন।  

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকৌশল বিধি মতে, রেলপথের দু’ধারে খালি জায়গা থাকা আবশ্যক। কমপক্ষে ১৪.৩ ফুট এবং সর্বোচ্চ ৩০ ফুট জায়গা খালি রাখতে হয় পাশে নিরাপদ দূরত্ব হিসেবে। এরমধ্যে কোনো স্থাপনা তৈরি করলে বিনা নোটিসে তা গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়। অথচ চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায় চট্টগ্রাম দোহাজারী এবং চট্টগ্রাম নাজিরহাট রেলপথের দুপাশ ঘেঁষে শত শত স্থাপনা বিদ্যমান।

জবরদখলকৃত জমি উদ্ধারে রেলের রয়েছেন বিভাগীয় এস্টেট অফিসার, সহকারী এস্টেট অফিসার, সার্কেল অফিসার, কানুনগো। রেলভূমি রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত রয়েছে প্রকৌশল বিভাগ। এরপরও প্রতিনিয়ত বেদখল হচ্ছে ভূমি। এতে রেল কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়ও বহুবার নির্দেশ দিয়েছে বেআইনি দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযানের। তবে উচ্ছেদ অভিযানের নামে নাটক হয়েছে কেবল।  

রেলভূমি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের। অবৈধ দখলের বিষয়ে অবহিত করলে তখন উচ্ছেদ অভিযানের ব্যবস্থা নেয় ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। এই বিভাগটির রয়েছে জনবল সংকট, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংকট। ফলে বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় স্থবিরতা বিরাজ করছে।

রেলওয়ে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইশরাত জাহান জানান, গত অর্থবছরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য তাদের বরাদ্দ ছিল ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। চাহিদার তুলনায় তা একেবারে কম। ইতোমধ্যে তা খরচ হয়ে গেছে। এতে নতুন করে অভিযান শুরু করা যাচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, অর্থ এবং জনবল সংকটে তা সম্ভব হচ্ছে না। মাত্র ২৮ জন লোক রয়েছে এই বিভাগে। এর মধ্যে তিনজন অবসরে যাবেন কয়েক মাসের মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে নতুন নিয়োগ বন্ধ থাকায় মাঠ পর্যায়ে কোনো লোকই নেই।

মাদারবাড়ী এসআরভি স্টেশন এলাকায় বিপুল রেলভূমি অবৈধ দখলের ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক (পূর্ব) সরদার শাহাদাত আলী জানান, ভূমি কেউ বেদখল করে নিলে তা জানানোর দায়িত্ব স্টেশন মাস্টারের। এ রকম কিছু অবহিত করা হলে সেটা ভূ-সম্পত্তি বিভাগকে জানানো হতো দখলমুক্ত করার জন্য। স্টেশন মাস্টার এমন কিছু জানাননি বলেও দাবি করেন প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক।

এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।