দেশসেবাই আসল উদ্দেশ্য ওসি শামীমের


প্রকাশিত: ০৫:১৩ এএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাই প্রবল। বিভিন্ন সময়ে সেই ধারণা পরিবর্তনের চেষ্টা করেও লাভ খুব একটা হয়নি। সম্প্রতি বেশ কিছু হয়রানির ঘটনার অভিযোগ ওঠার পর এ নিয়ে আলোচনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। হয়রানির অভিযোগগুলোর মধ্যে গেল বুধবার রাতে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠে সাম্প্রতিক অভিযোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহটি। অভিযোগ অনুযায়ী, মিরপুর ১ নম্বরের চিড়িয়াখানা লেকের পাড়ে বাবুল মাতবর নামে এক চা-দোকানির কাছে চাঁদা না পেয়ে পুলিশ সদস্যরা তার চুলায় লাঠি দিয়ে বাড়ি মারে। এতে ওই চুলার আগুন থেকে বাবুলের শরীরে আগুন ধরে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন তিনি মারা যান।

এ ধরনের ঘটনাগুলোতে পুলিশ ইমেজসঙ্কটে পড়লেও একজন আদর্শ পুলিশের প্রতিচ্ছবি পাওয়া গেল কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার মো. শামীম হোসেনের কণ্ঠে। শামীম বিশ্বাস করেন, পুলিশে তার চাকরির আসল উদ্দেশ্য দেশের সেবা করা। গত বছরের ৮ আগস্ট কাফরুল থানায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ওই মাসেই শ্রেষ্ঠ ওসির স্বীকৃতিও পেয়েছিলেন তিনি। কাফরুলের আগে রূপনগরের ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শামীম।  

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের থানাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো কাফরুল থানা। এখানে পাঁচ লাখ মানুষের বাস। কিন্তু নেই পুলিশের স্থায়ী কোনো চেকপোস্ট। পুলিশ স্টাফ কলেজ, মিরপুর পুলিশ লাইন ও বিআরটিএ  কার্যালয়ের কারণে থানাটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও দিনকে দিন অপরাধ কর্মকাণ্ড ও আবাসন বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে এই  থানাটি। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা হয়েছে এই থানার ওসি শিকদার মো. শামীম হোসেনের। কাফরুল এলাকার সার্বিক বিষয় নিয়ে আলাপচারিতায় উঠে আসা তথ্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

জাগো নিউজ: কেমন আছেন? জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা।
শামীম হোসেন: জ্বি, আমি ভালো আছি। জাগো নিউজকেও শুভেচ্ছা।

জাগো নিউজ: কাফরুল থানা গুরুত্বপূর্ণ কী কারণে?
শামীম হোসেন: মিরপুরের বিস্তৃতির কারণে কাফরুল এলাকাতেও ঘন জনবসতি গড়ে উঠছে। পুলিশ স্টাফ কলেজ, মিরপুর পুলিশ লাইন ও বিআরটিএ কার্যালয়ের কারণে থানাটি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সরকারি বেসরকারি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সঙ্গত কারণে ক্রমশই থানাটির গুরুত্ব বাড়ছে।

জাগো নিউজ: এই থানা এলাকায় কী কী ধরনের অপরাধ হয়?
শামীম হোসেন: এখানে প্রধান সমস্যা মাদক ও চুরির ঘটনা বেশি। মানুষজনকে জিম্মি করে এসব করা হয়। পুলিশের লোকবল কম থাকার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে ডাকাতরা। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

জাগো নিউজ: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব থানাতেই স্থানীয় চেকপোস্ট থাকলেও আপনার থানা এলাকায় স্থায়ী কোনো চেকপোস্ট নেই, কেন?
শামীম হোসেন: না, আমাদের এখানে স্থানীয় চেকপোস্ট নেই। তবে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। যেখানে প্রয়োজন হয় সেখানেই চেকপোস্ট বসানো হয়। মোবাইল টিমের মাধ্যমে সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নজরদারি রাখা হচ্ছে। স্থানীয় চেকপোস্ট না থাকায় কোনো সমস্যা হয়নি।

জাগো নিউজ: জনগণের কাছে জবাবদিহিতা রয়েছে কি না?
শামীম হোসেন: পুলিশ বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও ফৌজদারি অপরাধ দমন ও মামলার তদন্ত করে থাকে। পুলিশের কোনো সদস্য অপরাধে জড়াতে পারে না। জনগণের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ অবশ্যই বদ্ধপরিকর। এজন্য আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। থানার সবাইকে দায়িত্বের সীমা বুঝেই দায়িত্ব পালনে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জাগো নিউজ: আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও নজরদারি বাড়াতে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি না?
শামীম হোসেন: পুলিশের কাজই নিরাপত্তা ও শান্তিতে বসবাসের জন্য পরিবেশ তৈরি করা। বিট পুলিশিংকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত এলাকাবাসীর সঙ্গে বৈঠক করছি।

SHAMIM

জাগো নিউজ: আপনার থানা এলাকার অপরাধ মানচিত্র আছে দেখলাম। মানচিত্র অনুযায়ী কোন কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ?
শামীম হোসেন: ওভাবে বিবেচনা না করে পুরো থানা এলাকাকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

জাগো নিউজ: কোনো চাপ আছে?
শামীম হোসেন: চাপ নেই, পেট্রলিং ও কমিউনিটি পুলিশিংকে গুরুত্ব বেশি দিচ্ছি। কিন্তু সব সময় সম্ভব হয় না। এমনিতে চাপবোধ করছি না।

জাগো নিউজ: আপনি শ্রেষ্ঠ ওসি হয়েছিলেন গত বছরের আগস্টে। কাফরুলে যোগদানের পরেই। এরপর আর কোনো স্বীকৃতি মেলেনি। আপনার কাজের মূল্যায়ন করুন।
শামীম হোসেন: সবসময় তো আর অর্জন থাকে না। তবে চেষ্টা থাকে। আর শ্রেষ্ঠ ওসি হওয়ার দৌড়ে তো আর কাজ করি না। পেশাদারীত্ব বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি। ভালো কাজের মূল্যায়ন সব সময়ই থাকে। তবে সব মিলে ডিএমপিতে আমার থানার অবস্থান পজিটিভ।

জাগো নিউজ: পুলিশ সদস্য হিসেবে পেশার মূল্যায়ন কী?
শামীম হোসেন: আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরে। থানা এলাকাতেই থাকি। ১ জানুয়ারি ১৯৯৬ সালে এসআই হিসেবে পুলিশে যোগদান করি। রুপনগর থানায় সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছি। আমার চাচা মোহাম্মদ আলী শিকদার আর্মির মেজর জেনারেল ছিলেন। সে সুবাদে আর্মির প্রতি দুর্বলতা কাজ করতো। ছোট বেলাতে আর্মি অফিসার হওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। আর্মি হতে না পারলেও পুলিশ তো হয়েছি। আসলে দেশের সেবা করাই আসল উদ্দেশ্য। মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ এখানেই বেশি। পরিবারকে কাজের ফাঁকে সময় দিই। সময় ও পরিবেশ এখন বদলে গেছে। অবস্থা বুঝে পরিবারও ছাড় দেয়।

জাগো নিউজ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
শামীম হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

জেইউ/জেএইচ/এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।