দুই বছরেও মেলেনি ইসমাইলের সন্ধান


প্রকাশিত: ০৮:১২ পিএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দুই বছরেও সন্ধান মেলেনি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর ইউনিয়নের অপহৃত ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেনের। ইসমাইল অপহরণের সঙ্গে আলোচিত সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে অভিযুক্ত করা হলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নূর হোসেনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার উদ্যোগ নিচ্ছে না কেন এ নিয়ে পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। নূর হোসেনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দাবি জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন।

এদিকে, দুই বছর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী এলাকায় মাইক্রোবাস আটকে ফিল্মি স্টাইলে ইসমাইলকে অপহরণ করা হলেও এখনো রহস্যের কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। অপহৃতের পরিবারের অভিযোগ সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তার শ্যালক নূরক আলম এবং র‌্যাব-১১ এর চাকুরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন ও এমএম রানা জড়িত রয়েছেন। ঘটনার দুই বছর হয়ে আসলেও মামলাটির তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মাইক্রোবাস থামিয়ে বন্ধু হিরনকে মারধর করে ফিল্মি স্টাইলে ইসমাইলকে অপহরণ করা হয়। ওই ঘটনায় ইসমাইলের ছোট ভাই মান্নান বাদী হয়ে প্রথমে কাঁচপুরের কুতুবপুর এলাকার মোশারফ, সেলিম, কাইউম, কাউছার, মামুন, নাছিরউদ্দিনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আলোচিত সাত খুনের পর ওই বছরের ১৫ মে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় মানববন্ধনে ইসমাইলের পরিবার অভিযোগ করেন।

তারেক সাঈদের দাবিকৃত দুই কোটি টাকা দিতে না পারায় আমরা ইসমাইলকে ফেরত পাইনি। সাত খুনের পর ইসমাইলকে আদমজীস্থ র‌্যাব কার্যালয় থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তারা আরও জানান, ইসমাইল কাঁচপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারী ব্যবসা ও বালু ভরাটের ব্যবসা করতেন। ওই সকল ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সন্ত্রাসীদের গডফাদার নূর হোসেনের শ্যালক ছাত্রলীগ নেতা নূর আলমের সঙ্গে ইসমাইলের বিরোধ ছিল। বর্তমানে অপহৃত ইসমাইলের ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন নূর আলম। ইসমাইল অপহরণ মামলার আসামিরা সকলেই ছিলেন নূর আলমের লোক।

অপহৃতের ছোট ভাই মামলার বাদী আবদুল মান্নান জাগো নিউজকে জানান, ঘটনার পরে ইসমাইল অপহরণের অভিযোগে মামলা করতে চাইলে পুলিশ ও ডিবি সেটা আমলে নেয়নি। পরে ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে র‌্যাব-১১ এর চাকুরিচ্যুত তিন কর্মকর্তা ও নূর হোসেনসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করি। পরে বিচারক মামলার অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে সাত খুনের ঘটনার প্রতিবেদনের সঙ্গে এ অপহরণ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশ দেন।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদকে। অপর আসামিরা হলেন, র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত আরিফ হোসেন ও এম এম রানা, সাত খুনের প্রধান আসামি কাউন্সিলর নূর হোসেন, তার শ্যালক নূর আলম, সোনারগাঁও থানা যুবদলের সহ সভাপতি আজিজুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, শরীফ হোসেন, আবদুল কাদির, আবুল হোসেন, শামীম, মনির হোসেন, নাজমুল, আজিজ চৌধুরী, ফকির ওরফে ফকিরা ও মঞ্জু। এ ১৬ জনের মধ্যে ফকির ওরফে ফকিরা ও মঞ্জু র্যা বের সোর্স হিসেবে পরিচিত।

গত বছরের ১২ নভেম্বর আলোচিত সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হলে ১৮ নভেম্বর নূর হোসেনকে ইসমাইল অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন জানান মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী। পরে আদালতের বিচারক আদেশ দেন, তদন্তকালীন সময়ে আসামির রিমান্ডের আবেদনের বিষয়টি একান্তই তদন্তকারী কর্মকর্তার স্বেচ্ছাধীন বিষয়। মামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে রিমান্ডে নেয়ার বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার স্বাধীনতা রয়েছে।

মান্নান আরও জানান, দুই বছর পেরিয়ে গেলেও অপহৃত ইসমাইলের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। সাত খুনে অভিযুক্ত নূর হোসেন র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে রহস্য উদঘাটন করা যেত। রোববার তারা ইসমাইলের বাড়িতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন।

মামলাটির তদন্তাকরী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল খায়ের জাগো নিউজকে জানান, মামলাটির তদন্ত কাজ চলছে।

মো. শাহাদাত হোসেন/এমজেড/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।