‘আই অ্যাক্সেপ্ট ইউ, আই অর্ডার ইউ অ্যান্ড আই রিসিভ ইউ’


প্রকাশিত: ০৪:১৬ পিএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পুরনো ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) কোর্ট চত্বরে মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা। ঢাকা আইনজীবী সমিতির আসন্ন নির্বাচনে একজন সভাপতি পদপ্রার্থীর ভিজিটিং কার্ডের আদলে হাতে বেশ কিছু সংখ্যক প্রচারণাপত্র বিলিতে ব্যস্ত। সবাই অবাক হয়ে একবার লোকটিকে আরেকবার তার ভিজিটিং কার্ড দেখছেন। কেউবা আড়ালে মুখ লুকিয়ে হাসছেন।

সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট ও কালো কোর্ট পরিহিত ও হাতে একটা মোটা ডায়েরি দেখে ভদ্রলোককে প্রথমে গোবেচারা টাইপের এক আইনজীবী মনে হলো। তবে কয়েক সেকেন্ড আপাদমস্তক পর্যবেক্ষনের পরই সন্দেহের সৃষ্টি হলো।

পায়ে ময়লা একজোড়া স্যান্ডেল, দুপায়ে সাদা ব্যান্ডেজ মোড়ানো, প্যান্ট গোড়ালি পর্যন্ত ভাঁজ করা, প্যান্টে বেল্ট নেই। জিপারের চেইনটাও খানিকটা বের হয়ে আছে। শার্টের ফাঁকে গলায় একটি মাফলার পেঁচানো। পান খেয়ে ঠোঁট লাল করা। সাদা কয়েকটা খোঁচা দাড়ি।

শনিবার দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টায় সিএমএম কোর্ট চত্বরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে বলেন, আই অ্যাম এ ল’ইয়ার আবুল কাশেম ভূইয়া সাগর। ইউ নো, যেকোনো কেইসে আমি মুভ করলেই, খাড়াইলেই আসামির বেল (জামিন) নিশ্চিত।

সত্যিই, বলতেই মুখের কথা এক প্রকার ছিনিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে বলে উঠলেন, অফ কোর্স, ইয়েস। হু আর ইউ? সাংবাদিক পরিচয় দিতেই বলে উঠলেন, ‘আই অ্যাক্সেপ্ট ইউ, আই অর্ডার ইউ অ্যান্ড আই রিসিভ ইউ’।

কথা আর না বাড়িয়ে সামনে উপস্থিত কয়েকজন আইনজীবী ও মুহুরির সঙ্গে আলাপকরে জানা গেল, সত্যিই তিনি একজন আইনজীবী। এক সময় নিজে মামলা লড়তেন। তবে কয়েকবছর ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। প্রায় প্রতিদিন কোর্ট চত্বরে  একটি ডায়েরি হাতে তাকে দিকবিদিক ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।

কিছুটা সামনে এগিয়ে যেতেই আবার দেখা। কৌতুহলবশত তার নাম পরিচয় সম্পর্কে বিশদ জানতে চাইলে একটু বিরক্ত হয়ে জানান, ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রিতে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে হাজারীবাগে উপায়ন নামে এক কোচিং সেন্টার চালাতেন।

পরবর্তীতে হাবিবুর রহমান নামে এক বন্ধুর অনুপ্রেরণায় আর কে মিশন রোডের ও বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি (বিআইইউ) থেকে এলএলবি অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

কবে পাস করলেন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ২০১১ থেকে ২০০৭, খানিকটা ভেবে আবার বলে উঠেন ২০০৭ থেকে ২০১১।

হাতের মোটা ডায়েরিতে কি আছে প্রশ্নের জবাবে বলেন, বেশ কিছুদিন আগে দুঘর্টনায় দুপায়ে আঘাত লাগে। পায়ে যে ফ্র্যাকচার হয়েছে তার এক্সরে রিপোর্ট আর বিভিন্ন আইনজীবী ও ক্লায়েন্টের ফোন নম্বর । হঠাৎ পকেট থেকে একগাদা ওষুধ বের করে বলে ওঠেন, বেশী কথা বলতে পারবো না, এখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

খানিক বাদে জানান, হাজারীবাগের মনেশ্বর রোডে মাসিক নয় হাজার টাকার ভাড়া বাসায় স্ত্রী নিয়ে থাকেন। তিন ছেলে তার লন্ডনে। ওরাই সেখান থেকে নিয়মিত টাকা পাঠায়।

আপনি কি নিজে মামলা লড়েন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে নিজেই করতাম এখন সিনিয়ররাও সঙ্গে থাকে। তার সিনিয়রদের নামের তালিকায় মুখলেছুর রহমান বাদল, মিজানুর রহমান মোল্লা, সানাউল্ল্যাহ ও রহিমউল্ল্যা হিরু।

এমন সময় মসজিদে জোহরের আজান শোনা যায়। নামাজ পড়তে  হবে বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন ক্ষেপাটে আইনজীবী আবুল কাশেম ভু্ইঁয়া সাগর।

এমইউ/এসএইচএস/এএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।