দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী
ভারতে চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ বিমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে ভারতের স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সরকারপ্রধানকে বহনকারী বিমান ঢাকার উদ্দেশ্যে রাজস্থানের জয়পুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান রাজস্থানের শিক্ষামন্ত্রী বিডি কাল্লা ও ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান।
সফরের শেষ তথা চতুর্থ দিন রাজস্থানের আজমিরে হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির (র.) দরগা জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে নফল নামাজ আদায় এবং দোয়া ও মোনাজাত করেন এবং দেশ, জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর উন্নতি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন তিনি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রতিবেশী দেশটি সফরে যান প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন দুপুরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইটে নয়াদিল্লি পৌঁছান তিনি। সেখানে তাকে লালগালিচা অভ্যর্থনা দেওয়া হয়। উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম, ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান ও বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
বিকেলে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। বৈঠকে মিয়ানমারের রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ভারতের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি উঠে আসে। সফরের প্রথম দিন দিল্লিতে প্রখ্যাত ওই সুফি সাধক নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী। জিয়ারত শেষে পরিদর্শনকালে দরগাহে অনুষ্ঠিত কাওয়ালি কিছুক্ষণ শোনেন প্রধানমন্ত্রী। পরে দরগাহের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে একটি ছবি উপহার দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীও দরগাহে একটি গিলাপ উপহার দেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন ৬ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির ‘হায়দরাবাদ হাউস’-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে বৈঠক হয়। ওইদিন সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এসময় তাকে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
এদিন রাজঘাটে ভারতের জাতির পিতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর (মহাত্মা গান্ধী) সমাধিতেও শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু। আমি যখনই ভারতে আসি, এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের, বিশেষ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা আমরা সবসময় স্মরণ করি। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করছি।
মোদীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, আশা করছি অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হবে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য অর্থনৈতিক উন্নতি এবং দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, যা আমরা করতে সক্ষম হবো। বন্ধুত্বের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব, যা আমরা সবসময় করে আসছি।
বৈঠকে বাংলাদেশকে ভারতের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার বলে উল্লেখ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
এসময় বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের মধ্যকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, এমন আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো, এমনকি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টিও দ্রুতই আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে।
সফরের দ্বিতীয় দিন মোদীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। স্মারক সই শেষে দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথ বিবৃতি দেন।
ওইদিনই বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে দ্রৌপদী মুর্মু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী দুই দেশ যেভাবে উদযাপন করেছে তা সত্যিই অনন্য।
সফরের তৃতীয় দিন ৭ সেপ্টেম্বর শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।
এইচএ/এমকেআর/জেআইএম