পোস্তগোলা-বছিলা বেড়িবাঁধ সড়ক

একই সড়কের একপাশে ৬, অন্যপাশে ২ লেন!

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০৭:৫৮ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রতীকী ছবি

ঢাকা শহরে জনসংখ্যার পাশাপাশি ব্যক্তিগত যানবাহন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর। বেড়েছে পরিবহনের চাপ। ক্রমেই তীব্র হচ্ছে যানজটের মাত্রা। গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীদের রাস্তায় কাটছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শহরের আউটার সড়ক নিয়েও আমাদের বিশদ কোনো পরিকল্পনা নেই। প্রবেশমুখগুলোও যানবাহনের তুলনায় উপযুক্ত নয়। ফলে সব চাপ মূল শহরে।

এমন বাস্তবতায় রাজধানীর পোস্তগোলা থেকে বছিলা পর্যন্ত বিদ্যমান বেড়িবাঁধ সড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অন্যদিকে বেড়িবাঁধ সড়কের বছিলা থেকে গাবতলী অংশ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন। তবে সড়কের এই অংশ চওড়া করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি ডিএনসিসি। তাই ডিএসসিসির ওই প্রকল্পের সুফল পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, একই সড়কের একাংশ ছয় লেন, আরেক অংশ দুই লেন হলে এই প্রকল্পের সুফল মিলবে না। তখন দুই লেনের সড়কে তীব্র যানজট হবে। পুরো প্রকল্পের টাকা জলে যাবে। তাই বেড়িবাঁধ সড়ক নিয়ে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসিকে সমন্বয় করে প্রকল্প নিতে হবে।

ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টরা জানান, এই সড়কটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা শহরের ভেতর প্রয়োজন ছাড়া যানবাহন ঢুকবে না। খুব সহজেই বেড়িবাঁধ সড়ক ব্যবহার করে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত যেতে পারবেন যাত্রীরা। ফলে শহরের ওপর গাড়ির চাপ ও যানজট সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।

ডিএসসিসির প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, বেড়িবাঁধ সড়কের পোস্তগোলা থেকে বছিলার দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। এর মধ্যে কামরাঙ্গীরচরের কালুনগর থেকে লোহারপুল পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অংশে প্রায় ২৫০ ফুট চওড়া জায়গা অধিগ্রহণ করা আছে। বাকি অংশে সড়ক ছয় লেনের করতে হলে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ। তাই এই ১২ কিলোমিটার অংশকে দুটি ফেজে ভাগ করা হয়েছে।

এর মধ্যে কালুনগর থেকে লোহারপুল ফেজ-১ এবং বাকি অংশ ফেজ-২ এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন সম্ভাব্যতা যাচাই করতে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছে ডিএসসিসি। আগামী তিন মাসের মধ্যে কালুনগর-লোহারপুল অংশের নকশা দিতে বলা হয়েছে। আর ফেজ-২ এর অংশটুকু সার্ভে করতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. বোরহান উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, বেড়িবাঁধ সড়কের কালুনগর থেকে লোহারপুল পর্যন্ত ছয় লেনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা অধিগ্রহণ করা আছে। কিন্তু বাকি অংশে ছয় লেন করতে গেলে অনেক জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। এই কাজটি করতে কিছুটা সময় লাগবে।

তিনি বলেন, যে প্রতিষ্ঠানকে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। তারা সম্পূর্ণ কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবে। তখন প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কোন বিষয়টি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বোরহান উদ্দিন বলেন, আমাদের ধারণা এই প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় হবে। এর বাইরে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। প্রকল্প অনুমোদন হলেই কাজ শুরু করতে পারবে ডিএসসিসি।

সরেজমিনে দেখা যায়, এখন বেড়িবাঁধ সড়কের গাবতলী থেকে পুরান ঢাকার বাবুবাজার পর্যন্ত দুটি কোম্পানির যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। এর বাইরে অসংখ্য লেগুনা, রিকশা, ট্রাক, পিকআপ এই সড়কে চলে। কিন্তু বাবুবাজার থেকে সূত্রাপুরের ফরাশগঞ্জ পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলে না। এখানে সড়কের দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে রেখেছে মালবাহী ট্রাক, পিকআপ, ভ্যান ও হকাররা। ফলে একটা রিকশাও ঠিকমতো চলতে পারে না। এর মধ্যে শ্যামবাজার, বাদামতলী, ওয়াইজঘাট এলাকায় সড়কটির দখল বেশি হয়েছে। আবার ফরাশগঞ্জ থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সড়কে তেমন কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। বছিলা থেকে গাবতলী পর্যন্ত সড়কে বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনের চাপ দেখা গেছে।

সূত্রাপুরের পাতলাখান লেনের বাসিন্দা ইকরাম হোসেন। আলাপকালে তিনি বলেন, পোস্তগোলায় পদ্মা এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে এই বেড়িবাঁধ সড়কের সংযোগ রয়েছে। বিদ্যমান সড়কটি যদি দখলমুক্ত থাকতো, তাহলে লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, গাবতলীগামী কোনো যানবাহন ঢাকার ভেতর ঢুকতো না। সবাই বেড়িবাঁধ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে পারত। এখন ডিএসসিসি যদি এই সড়কটি ছয় লেন করে, তা হলে পুরান ঢাকাসহ রাজধানীতে যানবাহনের চাপ কমবে।

সাভারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মুন্সিগঞ্জের আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, প্রতি সপ্তাহে তিনি সাভার থেকে মুন্সিগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে যান। এর মধ্যে বাসে ঢাকার গাবতলী থেকে পোস্তগোলা যেতেই গড়ে চার ঘণ্টা সময় লাগে। এখন বেড়িবাঁধ সড়ক যদি ছয় লেন করা হয়, তাহলে এই পথে যাত্রা ২০-২৫ মিনিটেই সম্ভব হবে। তাই একই প্রকল্পের আওতায় গাবতলী থেকে পোস্তগোলা সড়ক ছয় লেন করার দাবি তার।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জাগো নিউজকে বলেন, বেড়িবাঁধ সড়কের ডিএসসিসি আওতাধীন অংশ ছয় লেন করতে আমরা প্রকল্প নিচ্ছি। বাকি অংশের প্রকল্প নেবে উত্তর সিটি করপোরেশন।

একই সড়ক ছয় লেনের জন্য দুটি প্রকল্প না নিয়ে সমন্বয় করা যায় কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে যান মেয়র তাপস।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, বছিলা থেকে গাবতলী পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সড়ক চওড়া করতে তারাও উদ্যোগ নেবেন। তবে কবে, কীভাবে উদ্যোগ নেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।

নগরের যে কোনো অবকাঠামো উন্নয়নে সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় জরুরি বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বেড়িবাঁধ সড়কটি ছয় লেন করা জরুরি। কিন্তু এখন যদি এই সড়কের একাংশ ছয় লেন হয়, আবার আরেক অংশ দুই লেন হয় তা হলে এই উন্নয়ন সুফল আনবে না। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে সমন্বয় করে কাজটা করতে হবে।

এমএমএ/আরএডি/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।