নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর উদ্বোধন
দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর পর নরসিংদীর বেলাব উপজেলার উয়ারী-বটেশ্বরের ধুপিরটেকে আবিষ্কৃত বৌদ্ধ পদ্মমন্দির সংরক্ষণে জাদুঘর নির্মাণ কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উচ্চ শিক্ষা ও মান উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. গৌরাঙ্গ চন্দ্র মহন্ত প্রধান অতিথি হিসেবে এই জাদুঘরের উদ্বোধন করেছেন।
এ উপলক্ষে উয়ারী-বটেশ্বর সংলগ্ন শিবপুর উপজেলার ধুপিরটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নূহ উল আলম লেনিন।
অনুষ্ঠানে স্বাগতিক বক্তব্য পেশ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের উপ-পরিচালক আফরোজা খান মিতা, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোকাম্মেল হোসেন ভূঁইয়া, নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জসিম উদ্দিন হায়দার, শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধা ও স্থানীয় প্রত্নতাত্ত্বিক হাবিবুল্লাহ পাঠান।
এর আগে উয়ারী-বটেশ্বরে আবিষ্কৃত বহু মূল্যবান প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণে সরকারিভাবে এখনও কোনো জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। ধুপিরটেকে আবিষ্কৃত বৌদ্ধ পদ্মমন্দির সংরক্ষণে বেসরকারি উদ্যোগে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এটাই প্রথম। এর আগে বেসরকারিভাবেও প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণে কোনো জাদুঘর নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।
২০০০ সাল থেকে খননের মাধ্যমে এখানে আবিষ্কৃত আড়াইহাজার বছরের প্রাচীন দুর্গনগর, বন্দর, রাস্তা, পাশ্বরাস্তা। ৩২ ফুট দ্ধ ১৮ ফুট আয়তনের ইস্টকনির্মিত অনুপম এক স্থাপত্য, ধুপিরটেকে ইস্টকনির্মিত ৩৫ ফুট দ্ধ ৩৫ ফুট আয়তনে বৌদ্ধ পদ্মমন্দির। জানখারটেক প্রত্নস্থানে আবিষ্কৃত ৮০ ফুট দ্ধ ৮০ ফুট আয়তনের বৌদ্ধ বিহারিকা। টঙ্গীরটেকে বৌদ্ধ মন্দির। ৪ হাজার বছরের পুরনো মানুষের গর্ত নিবাস ইত্যাদি সংরক্ষণে কোনো ব্যবস্থা বা জাদুঘর নির্মাণ করা যায়নি। লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আবিষ্কৃত এসব মহামূল্যবান প্রত্নসম্পদ মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ এসব প্রত্নসম্পদ জাদুঘরের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হলে নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বর হতো উপ-মহাদেশের একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। ভারতবর্ষ তথা বিশ্বের বিভিন্ন এলাক থেকে এসব প্রত্নসম্পদ দেখার জন্য হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসার সম্ভাবনা ছিল। এছাড়াও জাদুঘরের অভাবে এখানে আবিষ্কৃত পুরামাটির ফলক, স্বপ্ল মূল্যবান পাথর, কাঁচের পুথি, মুদ্রা ভাণ্ডার, উপ-মহাদেশের প্রাচীনতম ছাপাঙ্কিত রূপ্য মুদ্রাসহ বহুসংখ্যক মুল্যবান প্রত্নসম্পদ ব্যক্তিগত পর্যায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অথচ প্রত্নসম্পদের মালিক শুধুমাত্র রাষ্ট্র। এসব প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণে সরকার দীর্ঘ ১৬ বছরেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
সঞ্জিত সাহা/এমএএস/আরআইপি