নতুন বিচারপতি পাচ্ছেন আপিল বিভাগ


প্রকাশিত: ১০:৫১ এএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ফলে আপিল বিভাগে বাড়ছে বিচারপতি। বাড়তে পারে বেঞ্চের সংখ্যাও। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতি বরাবরে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে বিচারপতির সংখ্যা কতজন বাড়ানো হবে সারসংক্ষেপে তা বলা হয়নি। সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এলে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।     

আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা বাড়ানো এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত। এ বিভাগে কতজন বিচারপতি থাকবেন, তা সংবিধানে উল্লেখ নেই। তবে রেওয়াজ হলো প্রধান বিচারপতি মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যখনই আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করবেন, তখনই তিনি প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠিয়ে থাকেন। প্রধান বিচারপতির প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরই আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়।’

এক সময় আপিল বিভাগে সর্বোচ্চ ১১ জন বিচারপতি থাকলেও বর্তমানে প্রধান বিচারপতিসহ ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি আরো জানান, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মামলার বিবরণ তুলে ধরে তা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতির সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজনের কথা বলা হয়েছে।  

রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো সারসংক্ষেপে আপিল বিভাগে নিয়োগের জন্য হাইকোর্টে কর্মরত ছয় বিচারপতির নাম প্রস্তাব করা হলেও কতজন নিয়োগ পাচ্ছেন তা স্পষ্ট করেননি মন্ত্রী। তবে যে ছয়জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে একজন নারী বিচারপতি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।   

আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, ‘আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা কতজন হবে এবং কখন নিয়োগ দেওয়া হবে, এটা শুধু প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। এখানে আইন মন্ত্রণালয় শুধু সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে।’

বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন। অপর পাঁচ বিচারপতি হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মো. ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

আপিল বিভাগে মামলাজট কমানোসহ বিশেষ বিশেষ মামলা শুনানির কথা বিবেচনায় নিয়ে এরআগে বিচারপতির সংখ্যা ১১ জনে উন্নীত করা হয়েছিল। তখন তারা তিনটি বেঞ্চে (কোর্টে) বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। কিন্তু ওই ১১ বিচারপতির মধ্যে পাঁচজন অবসরে চলে গেলে প্রধান বিচারপতিসহ ছয়জন থেকে যান আপিল বিভাগে। তারা দুটি বেঞ্চে বিচারকার্য পরিচালনা করছেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, হাইকোর্ট বিভাগের সিনিয়র বিচারপতিদের মধ্যে থেকে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। অতীতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের ঘটনা ঘটে। যার ফলে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিসহ নানা মহল থেকে সরকারের কঠোর সমালোচনা করা হয়।

নতুন বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আবার আগের মতো তিনটি বেঞ্চ গঠন করা হতে পারে। এরপর পুরোনো মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে।  

গতবছর অক্টোবরের শুরুতে বিচারপতি এইএইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর অবসরের মধ্য দিয়ে আপিল বিভাগে শূন্য পদের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচে।

বর্তমানে আপিল বিভাগে মামলা রয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। সুপ্রিম কোর্টের ২০১১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৯ সালে আপিল বিভাগে বিচারপতি ছিলেন ১১ জন এবং বিচারাধীন মামলা ছিল পাঁচ হাজার ৬০টি। ওই বছর নতুন করে মামলা করা হয় চার হাজার ৪০৩টি এবং মীমাংসা করা হয় ছয় হাজার ৩৫টি মামলা। ২০১০ সালে আপিল বিভাগে বিচারপতি ছিলেন আটজন, মামলা ছিল ৯ হাজার ১৪১টি। ওই বছর নতুন করে মামলা দায়ের হয় পাঁচ হাজার ৪৬৪টি, নিষ্পত্তি হয় এক হাজার ৫৮৩টি। ২০১১ সালে বিচারপতি ছিলেন ১০ জন এবং মামলা ছিল ১২ হাজার ৪৪১টি। ওই বছর মামলা করা হয় চার হাজার ৭৪৯টি, মীমাংসা হয় এক হাজার ৪৪৯টি।

প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মামলা জট নিরসনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। অফিসের সময় পরিবর্তন, বেঞ্চ পুনর্গঠন, ডিজিটাল কার্যতালিকা প্রণয়নসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

আপিল বিভাগের বর্তমান বিচারপতিদের মধ্যে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ২০১৭ সালের ৭ জুলাই, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন।

এফএইচ/এনএফ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।