চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েতে ব্যয় বাড়ছে ১০৪৮ কোটি টাকা
চট্টগ্রামে উড়ালসড়ক বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজে আরও এক দফায় ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। যানজট ও জনভোগান্তি নিরসনে নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত ব্যস্ততম সড়কের ওপর দিয়ে যে উড়ালসড়কটি হচ্ছে তাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ ১১ হাজার টাকা।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ প্রকল্প অনুমোদন পায়। ২০২০ সালের জুনে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি নির্মাণকাজ শুরু হলেও ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। পরবর্তীকালে এ উড়ালসেতু প্রকল্পের নির্মাণকাজের মেয়াদ ২০২০ সালের জুন থেকে বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন করা হয়।
এ প্রকল্পটির শুরুতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল সোয়া ৩ হাজার কোটি টাকা। পরে আরও কয়েক দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে বাড়ে ব্যয় বরাদ্দও। চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তি, জমি অধিগ্রহণে অপেক্ষা, ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি না পাওয়া, লালখান বাজার অংশের নকশা সংক্রান্ত আপত্তি ও বিকল্প সড়ক চালুতে সময়ক্ষেপণসহ নানা কারণে প্রকল্পটি দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে।
কয়েক মাস আগে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছিল সম্প্রতি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকল্প বাস্তবায়নে এবার সময় ও ব্যয় দুটোই বাড়লো।
প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র্যাংকিন জেভি এর নির্মাণকাজ করছে।
উড়ালসড়ক প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছিল পরিকল্পনা কমিশনে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা শেষে নতুন করে ব্যয় ও সময় নির্ধারণ হয়। এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। এটির মূল ব্যয় ছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৪৮ কোটি ১১ লাখ ১৭ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ ১১ হাজার টাকা।
বর্তমানে প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি মোট ২ হাজার ৩১২ কোটি ২২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা (৭১ দশমিক ১৩ শতাংশ) এবং বাস্তব অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ।
বর্তমানে অনুমোদিত প্রকল্পের ফ্লাইওভারের অ্যালাইনমেন্টে সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। ভূমি সমতলে রাস্তার প্রশস্ততা বজায় রাখতে পিয়ারের পরিসর কমিয়ে ফ্লাইওভারের নকশা সংশোধন করা হয়েছে। কংক্রিটের গ্রেড উন্নয়ন ও অতিরিক্ত নির্মাণকাজের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি, কিছু অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস-বৃদ্ধি এবং বাস্তবায়ন মেয়াদ ২ বছর বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটি প্রথম সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী চার লেন (১৬ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থ) বিশিষ্ট মূল ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ১৫ দশমিক ১১ কিলোমিটার এবং ৬ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট র্যাম্প ৫ কিলোমিটার।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কনসালটেন্সি (সুপারভিশন ও ডিজাইন) অঙ্গের ব্যয় বৃদ্ধি প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে কনসালটেন্সি অঙ্গে ৩ হাজার ৮৬৭ জনমাস ধরা হয়েছিল। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রস্তাব করায় এবং কাজের পরিধি বাড়ায় ব্যয়ও বেড়েছে। এক্ষেত্রে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড টেস্টিং সার্ভিস-মিলিটারি ইনিসটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ৬৮৪ ম্যান মানথ বা জনমান বৃদ্ধি করে ১২ কোটি ৬৩ লাখ ১৭ হাজার টাকার ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের পরিচালক মাহফুজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেছেন, প্রকল্পের ৩২ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা প্রায় ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশনে কয়েক ধাপে সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সময়ও এক বছর বাড়ছে।
ব্যয় বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, কারণ একটাই- প্রকল্পের কাজের পরিধি ও কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজের পরিমাণ বাড়ায় ব্যয়ও বাড়ছে।
এদিকে নির্মাণকাজের দীর্ঘসূত্রতার কারণে নগরবাসীর ভোগান্তি বাড়ছে। বিশেষত বর্ষাকালে নির্মাণাধীন এলাকায় খানাখন্দ আর ভাঙাচোরার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ সড়কে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীদের। নগর পরিকল্পনাবিদেরা মনে করেন, উড়ালসড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম নগরীর যানজট অনেকাংশেই কমবে আসবে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে লাগামহীন ব্যয়বৃদ্ধি নিয়েও রয়েছে অসন্তোষ। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের দায় দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমওএস/এমকেআর/এমএইচআর