ডিবিপ্রধান হারুনের প্রচেষ্টায় নিখোঁজের ১৯ বছর পর মেয়েকে পেলেন মা
অন্য দিনের মতো রাজধানীর মিন্টো রোডের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে চলছিল গোয়েন্দা কার্যক্রম। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে দিনটি অন্যান্য সাধারণ দিনের মতো হলেও ১৯ বছর ধরে একজন সন্তান হারা মায়ের কাছে ও মা হারা সন্তানের দিনটি ছিল বিশেষ দিন।
সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে ঘটনাটি। গল্পকেই যেন বাস্তবে রূপ দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯ বছর পর এক মা ফিরে পেয়েছেন তার মেয়েকে। দীর্ঘদিন পর মাকে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন মেয়ে লাকী। আর হারানো মেয়েকে ফিরে পেয়ে ডিবির প্রতি কৃতজ্ঞ মা মোছা. হামিদা খাতুন।
লাকীর মা হারানো মেয়েকে খুঁজে পেতে ডিবিতে আবেদন করেন। আবেদনের সঙ্গে ২০০৩ সালে হারিয়ে যাওয়ার পর অষ্টগ্রাম থানায় করা জিডি ও চেয়ারম্যান কাছে করা নিখোঁজ আবেদন সংযুক্ত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিবি-প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নির্দেশনা ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ডিভিশন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলায় তার অবস্থান নিশ্চিত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ডিবি কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
লাকী হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, লাকীর খালা ফিরোজা ঢাকার একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করতেন। দিনে খালা তার কর্মস্থলে থাকতেন। বাসায় খালার অনুপস্থিতে আট বছর বয়সী লাকী খেলাধুলা করার জন্য বাইরে যেতেন। কৌতুহলবশত সদরঘাট এলাকায় লঞ্চে উঠে সে। একপর্যায়ে লঞ্চটি তার গন্তব্যস্থল খুলনার উদ্দেশে রওনা দেয়। তাই লঞ্চ থেকে নামার সুযোগ হয় না লাকীর। এভাবেই হারিয়ে যায় সে।
ঢাকা থেকে লঞ্চটি খুলনার বড় বাজার ঘাটে ভিড়লে লাকী কী করবে বুঝতে পারছিল না। একপর্যায়ে লঞ্চের সিকিউরিটি গার্ডকে জানায়, সে হারিয়ে গিয়েছে। পরে লঞ্চ ঘাটের সিকিউরিটি গার্ড তাকে তার বাসায় নিয়ে যায়। লাকীকে ইউনিসেফ স্কুলে ভর্তি করান। স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি সিকিউরিটি গার্ড তাকে দিয়ে বিভিন্ন বাসায় কাজ করাতেন। এভাবে ২ বছর অতিক্রম হয়। ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় গৃহকত্রীর নির্যাতন সইতে হয় ছোট্ট লাকীকে। পরে কাউকে না জানিয়ে লাকী নিজেই শিহাব নামে এক লোকের বাসায় কাজ নেয়। লাকীকে না পেয়ে সিকিউরিটি গার্ড খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে লাকীর সন্ধান পান ওই সিকিউরিটি গার্ড।
শিহাবের বাসায় হাজির হয়ে সিকিউরিটি গার্ড লাকীকে নিজের মেয়ে বলে দাবি করেন। পাশাপাশি তার বাসায় নেওয়ার চেষ্টা করেন। এদিকে শিহাব লাকীর কাছে জানতে পারেন যে, সিকিউরিটি গার্ড লাকীর আসল বাবা না। তাই শিহাব পুলিশি সহায়তায় লাকীকে নিজ জিম্মায় নিয়ে তার বাসায় পাঁচ বছর রাখেন। সেখান থেকে লাকী তার হারানো বাবা-মাকে ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, লাকীর মায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে খুঁজে বের করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায় ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ডিভিশন। সবশেষে চেষ্টা সফল হয়। মহালছড়ি থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে সব ধরনের আইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এরই মধ্যে মায়ের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
লাকীর মা হামিদা বেগম বলেন, মেয়েকে যে ফিরে পাব তা কল্পনাও করতে পারিনি। আজ আমি ভীষণ খুশি। ডিবির প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আর যেন কোনো মা এভাবে তার সন্তানকে না হারায়।
টিটি/আরএডি/এএসএম