মিরাজ-জাকিরের ব্যাটেই স্বপ্ন পূরণ
নেপাল অধিনায়ক রাজু রিজালই যা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে বাংলাদেশের সামনে। এটা ছিল অনুমিত বিষয়ই। শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্যি হলো। রাজু রিজালের ৮০ বলে ৭২ রানের দুর্দান্ত ইনিংসই ২১১ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশের সামনে। একই সঙ্গে নেপাল আরও একবার প্রমাণ করলো, যোগ্য দল হিসেবেই তারা উঠে আসলো যুব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। ২১১ রান স্কোরবোর্ডে তোলার পর এটাকে কিভাবে রক্ষা করা যায়, সেটাও যেন রপ্ত করে ফেলেছে হিমালয় পাদদেশের দেশটি। রীতিমত পেশাদার ক্রিকেটার। বাংলাদেশকে চেপে ধরেছিল শুরু থেকেই।
২১২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই সাইফ হাসানকে তুলে নিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিল নেপাল। সুনিল দামালার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান বাংলাদেশ দলের ওপেনার। শঙ্কাটা ঘিরে ধরেছিল তখনই। ২০০২ যুব বিশ্বকাপের প্লেট পর্বের সেমিফাইনালে এই নেপালের কাছে তো এভাবেই উইকেট খুইয়ে পরাজয়ের লজ্জা বরণ করেছিলেন আশরাফুল-আফতাবরা।
শঙ্কাটা প্রলম্বিত হতেই থাকল, ২০তম ওভারে যখন পিনাক ঘোষ রান আউটের দুর্ভাগ্যে কাটা পড়লেন। দলীয় রান তখন ৬৩। এরপর ৭৫ রানে আউট হয়ে গেলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং স্তম্ভ নাজমুল হোসেন শান্ত। যার ব্যাটে স্বপ্নের রং ছড়াচ্ছিল প্রথম থেকেই। ৬ বলে মাত্র ৮ রান করে যখন সন্দিপ লামিচ্চানেকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি, তখন শঙ্কার কালো মেঘ তখন মিরপুরের পুরো আকাশজুড়ে।
বিপদ আরও ঘণিভূত হলো ২৯তম ওভারে গিয়ে। বাংলাদেশের রান তখনও ১০০ পার হয়নি। অথচ, তখনই আউট হয়ে গেলেন উইকেটে সেট হয়ে বসতে থাকা জয়রাজ শেখ। ৬৭ বলে ৩৮ রান করে সেই দামালার বলেই যখন এলবিডব্লিউ হয়ে গেলেন তিনি। বাংলাদেশের রান তখন ৯৮। জয় থেকে তখনও অনেক দুরে বাংলাদেশ।
৯৮ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের ডুবন্ত তরীর হাল ধরলেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ এবং উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জাকির হাসান। অনেক ম্যাচেই এভাবে তরীর হাল ধরতে হয়েছিল; কিন্তু ওসব ম্যাচ থেকে তো এই ম্যাচটি একটু ভিন্ন ধরনেরই। মাহাত্ম্যও অনেক বেশি ভিন্ন। সুতরাং, চাপকে জয় করার কঠিন চ্যালেঞ্জই গ্রহণ করলেন মিরাজ-জাকির।
দু’জনের ব্যাট চড়ে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের তরী জয়ের তীরে ভিড়তে শুরু করে। শঙ্কা বাকি ছিলই। ৪০ ওভারে যখন রান ১৪৪, তখন শঙ্কা না করে উপায়ও ছিল না। যে কোন সময় ভেঙে যেতে পারে এই জুটি; কিন্তু বৈঠা শক্ত করেই ধরেছিলেন মিরাজ-জাকির। দু’জনের কেউই শেষ পর্যন্ত হার মানলেন না নেপালি আক্রমণের সামনে। লড়াই করে গেছেন বুক চিতিয়ে। প্রথমে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিলেন জাকির হাসান। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ।
তাদের দু’জনের ব্যাটে চড়েই ১০ বল হাতে রেখে বাংলাদেশ পৌঁছে গেলো যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনলে। দু’জন মিলে গড়লেন ১১৭ রানের অসাধারণ এক জুটি। এই জুটিই শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। অধিনায়ক মিরাজ অপরাজিত ছিলেন ৬৫ বলে ৫৫ রানে। আর ৭৭ বলে ৭৫ রানে অপরাজিত ছিলেন জাহির হাসান। যদিও ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠলো মেহেদী হাসান মিরাজের হাতেই।
আইএইচএস/এমএস