বিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা চান না অধিকাংশ কমিশনার


প্রকাশিত: ০৩:৩৬ এএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের বিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের হাতে সর্বোচ্চ যে ক্ষমতাটি রয়েছে সেই ক্ষমতাটিই নিজেদের হাতে আর রাখতে চান না বেশিরভাগ নির্বাচন কমিশনার। এমন চাওয়ার পেছনে কারণ হিসাবে তারা বলছেন, ক্ষমতাটি পাওয়ার পর গত সাত বছরে কখনোই এর ব্যবহার হয়নি। তবে কমিশনারদের এমন মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিধানটি ইসির জন্য একটি অস্ত্র। এটি না থাকলে ইসিকে কেউ ভয় পাবে না।

ক্ষমতাটি ‘প্রয়োগযোগ্য নয়’বলে এর আগেও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) থেকে তা বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসি। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধিতে এই বিধান রাখার বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের প্রস্তাবে ‘নাখোশ’ তিন কমিশনার।

এই বিধির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ ও জাবেদ আলী জানান, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা থাকলেও তা কখনোই প্রয়োগ করা হয়নি। অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডের বাইরে এমন বিধান রাখা ঠিক নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত উপেক্ষা করে এরই মধ্যে এই বিধানটি যুক্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। তাই ইসিতে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

আচরণবিধির ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, যেকোন উৎস থেকে প্রাপ্ত রেকর্ড বা লিখিত প্রতিবেদনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে বলে ইসির কাছে প্রতীয়মান হলে তা তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দেবে ইসি। তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে ওই প্রার্থী অযোগ্য হতে পারেন বলে কমিশন সন্তুষ্ট হলে তাৎক্ষণিক আদেশে তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে ইসি।

গত সপ্তাহে অনু্ষ্ঠিত ইসির ১২৩তম কমিশন সভার কার্যপত্রে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, ‘৩২ ধারা না থাকাই ভালো। এটি থাকলে সবাই মনে করে, ইসির অগাধ ক্ষমতা; তাই অনেক সমালোচনাও হয়।’

অনেকেই বিনা কারণে জনসম্মুখে ইসির সমালোচনা করছে বলে উল্লেখ করেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, ‘এক্ষেত্রে ইসির উচিৎ জনসম্মুখে এর জবাব দেওয়া। এতে জনগণ সঠিক তথ্য জানতে পারবে।’

নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী জানান, ৩২ ধারা অনুযায়ী প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা থাকলেও এখনো পর্যন্ত কারো প্রার্থিতা বাতিল করেনি ইসি।

প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা বাতিলের পক্ষে মত দিলেও আবু হাফিজ এ-ও মনে করেন যে, স্থানীয় সরকারের অন্যান্য আচরণবিধিতে যেহেতু প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে, ইউপিতে তা না রাখলে কমিশনকে আবার সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে।

সভায় ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য নির্বাচনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে ইউপি নির্বাচনের প্রণীত আচরণবিধিতে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রাখা দরকার।’

২০০৮ সালে নবম সংসদের আগে এটিএম শামসুল হুদার কমিশন সংসদের নির্বাচনী আইন আরপিওতে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতার বিধান যুক্ত করে।

৯১ (ই) ধারা অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী বা এজেন্ট বা তার পক্ষে অন্য কেউ এমন কোনো অন্যায় করলে (যার ফলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য হতে পারেন) কমিশন তদন্তসাপেক্ষে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাকে ‘অর্থহীন ও অপ্রয়োগযোগ্য’ উল্লেখ করে ৯১ (ই) ধারাটি না রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানান। এক মাসের মাথায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে তা থেকে সরে আসে ইসি।

এইচএস/এনএফ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।