চট্টগ্রাম সিটি: পৌর করের ২৩৪ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৩৩ মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৯:২৯ এএম, ২৯ আগস্ট ২০২২

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অধীন অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করছে না পৌর কর। সাধারণ ভবন মালিকের চেয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পৌর কর (গৃহকর ও রেইট) পরিশোধ না করার প্রবণতা বেশি। বকেয়া পরিশোধে বারবার তাগাদা দিলেও সাড়া মিলছে না বলে জানিয়েছেন চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ৩৩ মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চসিকের বকেয়া পৌর করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩৪ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি বকেয়া পড়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

তারা আরও বলছেন, গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১৯৩ কোটি ৮ লাখ ৬১ হাজার ৯০৭ টাকা পৌর কর আদায় করে চসিক। এর মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মালিকানাধীন হোল্ডিং থেকে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫৪ শতাংশ। সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় হয়েছে ৪৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন: ১৬ বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স বাকি বাফুফের, গণস্বাস্থ্যের বকেয়া ২৩ বছর

বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২ লাখ ৪ হাজার ৯৫১টি হোল্ডিং আছে। এর মধ্যে সরকারি ১ হাজার ৫১৬টি এবং বেসরকারি হোল্ডিং আছে ২ লাখ ৩ হাজার ৪৩৫টি।

সরকারি এই ১ হাজার ৫১৬টি ভবনের ২৩৩ কোটি ৮৪ লাখ ৪২ হাজার ১৯০ টাকা পৌর কর বকেয়া পড়েছে।

এর মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বেশি, ১১০ কোটি ৯৫ লাখ ৪০ হাজার ৩১৮ টাকা বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ২৯ কোটি ৫৯ লাখ ৬২ হাজার ৫৪৩ টাকা। ২০২১-২০২২ অর্থবছর পর্যন্ত বকেয়া দাবি রয়েছে ৮১ কোটি ৩৫ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৫ টাকা।

আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধীর নড়বড়ে ঘর থেকেও অতিরিক্ত হোল্ডিং ট্যাক্স নেয়ার অভিযোগ

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত চসিকের পাওনা ২৯ কোটি ৮৫ লাখ ৩৬ হাজার ৬১২ টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের কাছে ১০ কোটি ৯৫ লাখ ২৩ হাজার ৩০৯ টাকা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের কাছে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ৭৫ টাকা। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭ কোটি ৫৭ লাখ ৯৫ হাজার ৬৩২ টাকা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন জননিরাপাত্তা বিভাগের কাছে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৬ হাজার ৩১৮ টাকা এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ১৯২ টাকা বকেয়া রয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কাছে বকেয়া রয়েছে ৭ কোটি ২২ লাখ ২৯৫ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬ কোটি ২৮ লাখ ২ হাজার ৪৫২ টাকা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৮ হাজার ২৯ টাকা এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কাছে ৩ কোটি ২৬ লাখ ৪৭ হাজার ৩৮৬ টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বাবদ চসিক পাবে ৫ কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার ৮৩৭ টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫ কোটি ১৪ লাখ ৫৪ হাজার ৪২০ টাকা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩৫ টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩৯ হাজার ৩১১ টাকা, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৮৫ হাজার ১৭ টাকা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার ২০২ টাকা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৬৫ হজার ২২২ টাকা, ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭৩০ টাকা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৩১৮ টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৫১ হাজার ৫৯৭ টাকা, আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাওনা ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৭ হাজার ৩২৩ টাকা। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৪১ হাজার ৯২০ টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৯২ লাখ ৩৫ হাজার ৬০ টাকা।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ৪৯৫ টাকা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭৩ লাখ ৮০ হাজার ১১০ টাকা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪২ লাখ ২৫ হাজার ৪৭২ টাকা, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৮৭৯ টাকা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ টাকা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩১ লাখ ৫০ হাজার ২৩ টাকা।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে ২৬ লাখ ৯২ হাজার ২২৪ টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৯২০ টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৩০ টাকা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ১২০ টাকা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে পৌর কর বাবদ চসিক পাবে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরবাসীকে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এখানে সাধারণ জনগণ বাদেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা নিয়ে থাকে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি সঠিকভাবে নির্ধারিত সময়ে পৌরকর পরিশোধ করে তাহলে সাধারণ মানুষকে রাজস্বের জন্য চাপ দিতে হয় না। একটি সরকারি সংস্থা অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাজস্বের টাকা পরিশোধ করবে, কিন্তু রাজস্ব পরিশোধে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনীহা লক্ষ্যনীয়।

তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বকেয়া পরিশোধের জন্য রাজস্ব বিভাগ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমিও ব্যক্তিগতভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, যেন বাজেটে পৌরকরের জন্য বরাদ্দ রাখে। যোগাযোগ করার কারণে অনেক সংস্থা পরিশোধও করছে। রেলওয়ে আগে দিতো না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৭ কোটি টাকা পৌরকর আদায় করেছি।

মেয়র আরও বলেন, অনেক সরকারি সংস্থা চসিকের পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করছে। আমাদের মন্ত্রীর (স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়) সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি প্রথমে সংস্থাগুলোকে চিঠি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এরপর পরিশোধ না করলে প্রয়োজনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করবেন বলেও জানিয়েছেন।

ইকবাল হোসেন/এমএইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।