উচ্চ শিক্ষার মান নিশ্চিতে ‘অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল’র খসড়া চূড়ান্ত


প্রকাশিত: ০১:১০ পিএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দেশের উচ্চ শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে ‘অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল অব বাংলাদেশ অ্যাক্ট-২০১৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ আইনে মেডিকেল, প্রকৌশলী, কৃষি ও আইটিসহ সব ধরনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। চলতি মাসেই খসড়া আইন ভোটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। স্বল্প সময়ের মধ্যে তা আইনে রূপ দেয়া হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানা গেছে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশে ৮৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

এসব উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান, পাঠ্যক্রম, গবেষণা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন তদারকির জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করার উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতেই কেটে গেছে পাঁচ বছর।

সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদানের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল করার ঘোষণা দেন। এরপরই টনক নড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। ফলে দ্রুত খসড়া আইন চূড়ান্ত করেছে তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় এর আত্ততায় আসবে। কেউই এর বাইরে থাকবে না।

আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠিত হবে। এটি ইউজিসির আদলে এটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হবে। পরিচালনায় একজন চেয়ারম্যান, দুইজন পূর্ণকালীন সদস্য ও দুইজন অবৈতনিক সদস্য থাকবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ২০ বছর অধ্যাপনা করছেন তাদের মধ্যে থেকে চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ দেয়া হবে। চেয়ারম্যান ও পূর্ণকালীন সদস্যদের মেয়াদকাল হবে চার বছর।

এছাড়া পরপর দুই বারের বেশি কাউকে এ পদে নিয়োগ দেয়া যাবে না। প্রতিষ্ঠানটি উচ্চশিক্ষার মান, পাঠক্রম ও গবেষণা পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের বিষয় যাচাই বাছাই করে নতুন প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচি যাচাই বাছাই করে র্যাংকিং নির্ধারণ করবে।

আইনে প্রস্তাব করা হয়েছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফিসহ ‘কনফিডেন্স’ সনদের জন্য নির্ধারিত ফরমে কাউন্সিলে আবেদন করবে। কাউন্সিল প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন যাচাই-বাছাই করে এক বছরের জন্য কনফিডেন্স সনদ দেবে। এ সময়ের মধ্যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অ্যাক্রিডিটেশন সনদের জন্য কাউন্সিলে আবেদন করতে হবে। কাউন্সিল সরেজমিন পরিদর্শন করে ‘কনফিডেন্স’ সদনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঁচ বছরের জন্য অ্যাক্রিডিটেশন সনদ দেবে। শর্ত লঙ্ঘণ করলে সনদ বাতিল করতে পারবে কাউন্সিল।

কনফিডেন্স বা অ্যাক্রিডিটেশন সনদ ছাড়া কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি বা প্রসপ্রেক্টাসে প্রতিষ্ঠানটি ‘অ্যাক্রিডিটেশন প্রাপ্ত’ লিখতে পারবে না। অ্যাক্রিডিটেশন সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে সনদ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দিতে হবে। কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভুল তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপনে দোষী প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে।তবে কাউন্সিলের কোনো সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হলে যে কোনো প্রতিষ্ঠান আবেদন করতে পারবে।

খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত, একাডেমিক প্রোগ্রাম ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিস্বীকৃতি এ আইনের আলোকে প্রয়োজনীয় বিধি ও প্রবিধিমালা প্রস্তুত করবে। মেডিকেল, প্রকৌশলী, কৃষি, ব্যবসায়, আইটি, আইনসহ প্রত্যেক ডিসিপ্লিনের জন্য আলাদা অ্যাক্রিডিটেশন কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটির গঠন ও কার্যাবলি বিধি দ্বারা পরিচালিত হবে।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জাগো নিউজকে বলেন, উচ্চ শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ইউজিসি আইন পরিবর্তন করেছি। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মান এবং মনিটরিং জোরদার করার জন্য ইতোমধ্যেই অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করার জন্য আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছি। শিগগিরই আমরা জাতীয় সংসদে পাস করার জন্য পেশ করবো।

এনএম/আরএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।