জাপায় নতুন আলো দেখছেন এরশাদ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দেরিতে হলেও তিনি জাতীয় পার্টির জীবনে নতুন আশার আলো দেখছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে একটি সেমিনার হলে জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন এরশাদ। দলটির নব নিযুক্ত কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে সংবর্ধনা দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এরশাদ বলেন, একটি ঘোষণা মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছে। দেরিতে হলেও জাতীয় পার্টির জীবনে নতুন আশার আলো দেখতে পারছি। আমার ভাইয়ের বক্তব্য আমি শুনলাম। তার কথার মধ্যে আমি আশার আলো দেখতি পাচ্ছি। আমার মনে হচ্ছে জাতীয় পার্টির আগামী দিনে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম হচ্ছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা এ সময় এরশাদকে বলেন, আপনারা জি এম কাদের ও রহুল আমিন হাওলাদার পাশে থাকবেন। এ দুজন মিলে পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করছি।
জিএম কাদেরকে জাতীয় পাটির কো-চেয়ারম্যান এবং রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সঠিক ছিল উল্লেখ করে এইচএম এরশাদ বলেন, ‘আমার গোটা রাজনীতির জীবনে আমি যদি কোনো ভালো কাজ করে থাকি, তাহলে তা হচ্ছে এ ঘোষণা। এতদিন আমি একটা চাপা কষ্ট নিয়ে ঘুরতাম। মনে শান্তি ছিল না, হাসি ছিল না। প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তা হত, আমি না থাকলে জাতীয় পার্টির কি থাকবে? আমার সন্তানের কী হবে? কিন্তু এখন আমি নিশ্চিন্ত, আমার সন্তান বেঁচে থাকবে। এ একটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে আমি বেঁচে থাকলাম। আমরা সন্তান জাতীয় পার্টি এবং তোমরা বেঁচে থাকলে।
জাতীয় পার্টির পুনর্বহাল মহাসচিব এবিএম রহুল আমিন হাওলাদারের প্রশংসা করে এরশাদ বলেন, ‘রুহুল আমিন ১৪ বছর দলের মহাসচিব ছিল। কিন্তু আমি তাকে সরিয়ে দেয়ার পর কোনো দিন আমার বিরুদ্ধে একটি কথা বলেনি। এই হচ্ছে আনুগত্য, এই হচ্ছে ভালোবাসা, এই হচ্ছে প্রেম। আর একজনকে মহাসচিব করেছিলাম। আমার ভাইকে পদ দেয়ার কারণে তিনি আমাকে আমার পার্টি থেকে বহিষ্কার করে দিলেন। এটা কোনো কথা হতে পারে?
ভাই জিএম কাদের সম্পর্কে এরশাদ বলেন, ‘এতদিন তোমরা আমার কথা শুনেছ, এখন থেকে আমার ভাইয়ের কথা শুনবে। তার কথা মেনে চলবে। আমার ভাই স্পষ্ট কথা বলে। সবার মধ্যে দেখি, তোষামোদের প্রবণতা। এটা আমি পছন্দ করি না।
এরশাদ বলেন, আমি সব সময় মানুষের পাশে ছিলাম। মুখে খাবার তুলে দিয়েছি, বিপদে আপদে সহায় হয়ে দাঁড়িয়েছি, কোনোদিন কারো ক্ষতি করি নি।
তিনি আবারো বলেন, আমার হাতে কারো রক্তের দাগ নেই। মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এত বছর আমার শুধু একটাই চিন্তা ছিল– আবার কি এই শোষিত-বঞ্চিত-অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পাব? আবার কি তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারব?
তিনি বলেন, কিন্তু এখন আর চিন্তা নেই। আমি আশার আলো দেখছি। জাতীয় পার্টিতে নবজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই এইচএম এরশাদ উল্লেখ করেন, ‘তোমাদের একটা কথা বলি, একটু আগে রওশন ফোন করেছিলেন। আমাকে বললেন– তুমি কোথায়? আমি বললাম- আমার ভাইয়ের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে আছি। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- আমাকে নিলে না কেন? আমি বললাম- এখানে তো আমারো আসার কথা ছিল না, অনেকটা হঠাৎ করেই এসে পড়েছি।’
মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম ফয়সাল চিশতির সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জি এম কাদের, দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা।
এএম/এনএফ/পিআর