৪৩ বছরের স্মৃতি ভুলি কী করে!
৪৩ বছরের স্মৃতি ভুলি কী করে! বাবা-ছেলের সম্পর্ক। চোখের দূরত্ব থাকলেও সেই সম্পর্কে কি মনের দূরত্ব থাকতে পারে? মেলায় দীপনকে পেতেই এসেছি। নতুন বইয়ের গন্ধ পেলে দীপনের স্পর্শ পাই। কোনো প্রকাশকের দেখা মিললে, তার মুখে দীপনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। ও চলে গেছে ওপারে, তবুও যেন পাঠক, লেখক, দর্শকের মাঝে দিব্যি ঘুরে ফিরছে। মেলায় এসে ওর উপস্থিতি যেন বেশ টের পাই। আবার ক্ষণে ক্ষণে তীব্র শূন্যতাও অনুভব করি।
বুধবার সন্ধ্যায় অমর একুশে বইমেলায় জাগৃতি প্রকাশনীর সামনে দাঁড়িয়ে জাগো নিউজের কাছে এমনই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন নিহত দীপনের বাবা রাষ্ট্রচিন্তক প্রফেসর আবুল কাসেম ফজলুল হক।
ছেলের চলে যাওয়ার শূন্যতা কখনও পূরণ হবার নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, অমর একুশে বইমেলার সঙ্গে দীপনের ছিল আত্মার সম্পর্ক। আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি, বইমেলা নিয়ে ওর উচ্ছ্বাস প্রকাশের কি আকুলতা! ছয় মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি চলত। মেলা ঘনিয়ে এলে খাওয়া-ঘুম বন্ধ করে দিয়ে টানা কাজ করত। বই প্রকাশের কাজকে ও রীতিমত পবিত্র জানত।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এক আবেগঘন মুহুর্তের জন্ম দিয়ে প্রফেসর আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, কত মানুষের ভালোবাসা নিয়েই না ওর পথ চলা ছিল। আজ সবই স্মৃতি হয়ে গেল। ওর প্রকাশিত বই পাচ্ছি, ওর বন্ধুদের পাচ্ছি। সবই আছে, শুধু আমার দীপন নেই।
এমন শোক যেন অন্য কোনো বাবাকে সইতে না হয় মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এই শিক্ষক আরও বলেন, যে রাজনীতির কারণে আমার দীপনের মতো মানুষকে খুনের শিকার হতে হয়, সেই রাজনীতি সবার জন্যই অভিশাপ। এমন রাজনীতি সমাজের কোনো সভ্য মানুষ সমর্থন করতে পারে না। সবার মাঝেই শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
উল্লেখ, গত বছরের ৩১ অক্টোবর আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় নিজের কার্যালয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় জাগৃতির প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে। নিহত দীপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও লেখক আবুল কাসেম ফজলুল হকের একমাত্র ছেলে।
এএসএস/এমএম/এমএইচ/একে/আরআইপি